মোদীর আমলে শিল্প-কর্মসংস্থান-বিনিয়োগে বেহাল দশা, প্রশ্নের মুখে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পই! খবর ‘লাইভ মিন্ট’ সূত্রে
৫ বছর পূর্ণ করতে চলল মোদী সরকার। ফের একটি ভোটের মুখে দেশ। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরই দেশের উৎপাদন শিল্পে জোয়ার আনতে যে প্রকল্পগুলির ঘোষণা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’। মেয়াদ পূর্তির আগে আসুন দেখে নিই কী অবস্থা নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র। লাইভ মিন্ট সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের উৎপাদন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং রফতানির হাল বেহাল। ক্ষমতায় আসার পর বহু ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সূচনা হয়েছিল ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের। উদ্দেশ্য ছিল, উৎপাদন শিল্পে ভারতকে শ্রেষ্ঠ স্থানে নিয়ে যাওয়ার। এর জেরে বিপুল বৈদেশিক বিনিয়োগের পাশাপাশি ঢালাও কর্মসংস্থানের দাবিও করা হয়েছিল। কিন্তু ৫ বছর কাটতে চললেও সেই উদ্দেশ্য পূরণ তো দূর অস্ত, লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি নরেন্দ্র মোদীর ফ্ল্যাগশিপ প্রজেক্ট ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’।
সরকারের লক্ষ্য ছিল, উৎপাদনক্ষেত্রে বৃদ্ধির হারকে বাড়িয়ে ১২ থেকে ১৪ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার, ২০২২ সালের মধ্যে জিডিপিতে উৎপাদনক্ষেত্রের ভাগকে ১৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা এবং উৎপাদন শিল্পে ১০ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। কিন্তু ৫ বছর পর তার কী অবস্থা?
লাইভ মিন্টের প্রতিবেদনে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (CMIE)-র রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ ক্রমেই কমেছে। এমনকী পরিস্থিতি এমনই যে বিনিয়োগের পরিমাণের হিসেবে মোদী সরকার পিছিয়ে পড়েছে পূর্ববর্তী ইউপিএ-এক ও ইউপিএ-দুই-এর থেকেও।
লাইভ মিন্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শিল্পবৃদ্ধির মাপকাঠিতে অ্যানুয়াল সার্ভে অফ ইন্ডাস্ট্রিজ (ASI)-এর রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, মোদী সরকারের প্রথমার্ধে (২০১৪-১৫ থেকে ২০১৬-১৭ পর্যন্ত) শিল্পে কর্মসংস্থানের হার নিম্নমুখী।
তবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-য় অপেক্ষাকৃত ভালো ফল ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট বা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের মাপকাঠিতে। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (CMIE)-র রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭-য় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের মাত্রা ছুঁয়েছে ২.৮ ট্রিলিয়ন। যদিও সামগ্রিকভাবে এফডিআই বৃদ্ধি পেলেও মোদী সরকারের আমলে উৎপাদনক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের হার যথেষ্টই শ্লথ বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে উৎপাদনক্ষেত্রের অবদান ২৮ শতাংশ। ইউপিএ-দুই আমলে যা ছিল সর্বোচ্চ ৪৪ শতাংশ।
২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে পৃথিবীর মোট রফতানির মাত্র ১.৭ শতাংশ গিয়েছে ভারত থেকে। যা ২০১৪-য় ছিল ১.৬ শতাংশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তালিকায় ভারত রয়েছে ১৫ তম স্থানে, যেখানে বিশ্বের মোট রফতানির ১৭.৪৮ শতাংশই এসেছে চিন থেকে। চিনের পরেই তালিকায় রয়েছে জার্মানি (১০.৪ শতাংশ), আমেরিকা (৯.৩ শতাংশ) ও জাপান (৫ শতাংশ)।
শিল্পবৃদ্ধির সূচকের প্রায় ৭৮ শতাংশ জুড়ে থাকে উৎপাদন শিল্প। অনেকের প্রশ্ন, কারখানার উৎপাদনে গতি না ফিরলে কাজের সুযোগ বাড়বে কীভাবে? কীভাবেই বা সাফল্যের মুখ দেখবে ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’? ভোটের মুখে এই প্রশ্ন মোদী সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন শিল্প মহলের একাংশ।
Comments are closed.