২০০৬ সালে আইন এনে বনবাসীদের অরণ্যের অধিকার সুনিশ্চিত করে মনমোহন সরকার। এই আইন অনুযায়ী, বনবাসীদের যে যেখানে বাস করছেন, তাঁকে সেই জমির মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কিন্তু অরণ্যের অধিকার আইন প্রণয়নের পরেই একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, বিভিন্ন সময় আদালতের দ্বারস্থ হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারি এই প্রেক্ষিতে বিচারপতি অরুণ মিশ্র, বিচারপতি নবীন সিনহা ও বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৬টি রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে পাট্টার আবেদন খারিজ হওয়া পরিবারগুলিকে উৎখাত করতে হবে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশের ফলে ১০ লক্ষের বেশি আদিবাসী ও অন্যান্য বনবাসী পরিবারের উচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে কেবল পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে প্রায় ৮৬ হাজার পরিবার।
এ রাজ্য ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম, বিহার, ছত্তিশগঢ়, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, কেরল, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরা, উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশের মুখ্য সচিবকে আদালতকে জানাতে হবে, কেন পাট্টার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়া বনবাসীদের এখনও উচ্ছেদ করা হয়নি, বলে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের।
এই মামলার আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল, অরণ্যের অধিকার আইনের বলে গাছ কাটা ও দেদারে বনভূমি ধ্বংস করে বাসযোগ্য করে তোলার কাজ চলছে। যে সমস্ত বনভূমির গাছ কেটে ইতিমধ্যেই তা বাসযোগ্য করে ফেলা হয়েছে তা থেকে ফের বাস উঠিয়ে গাছ লাগিয়ে অরণ্যের মধ্যেই ফিরিয়ে নেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেন তাঁরা। তাদের মতে, দেশজুড়ে ৪৪ লক্ষ আবেদনের মধ্যে প্রায় ২০.৫ লক্ষ আবেদনই খারিজ হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে আবেদনকারীদের দাবি ছিল, জঙ্গলের জমিতে চাষবাস করার জন্য যাদের পাট্টার আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে, তাদের উৎখাত করা হোক। কিন্তু আবেদনকারীদের এই সওয়ালের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও আপত্তি করেনি বলে সূত্রের খবর। ফলে সুপ্রিম কোর্ট আবেদনকারীদের দাবি মেনে নেয়।
খারিজ হওয়া আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রথম স্থানে রয়েছে মধ্য প্রদেশ। কমলনাথের রাজ্যে অন্তত সাড়ে ৩ লাখ আবেদন খারিজ হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওড়িশা, তাদের অন্তত দেড় লক্ষ আবেদন খারিজ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৮৫,৮৭৪। অরণ্যের অধিকার আইনে মূলত দু’ধরনের মানুষকে অরণ্যের অধিকার প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, তপসিলি উপজাতিভুক্ত মানুষ, যারা অরণ্যেই বসবাস করে আসছেন। দ্বিতীয় ক্যাটেগরিতে আছেন তারা, যারা অন্তত ৭৫ বছর ধরে অরণ্যে বাস করেন অথবা অরণ্যের উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল।
সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের চুপ থাকা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই সুপ্রিম কোর্টে চুপ থাকার নীতি গ্রহণ করেছে।
Comments are closed.