সংসদে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরব তৃণমূল, রাজ্যে যেখানে যখন দরকার পড়বে, তখনই সেখানে যাব, ফের বিস্ফোরক ধনকড়
রবিবারই তৃণমূলের দুই সাংসদ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকেছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যপাল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নষ্ট করছেন। তাঁকে ডেকে সরকারের কৈফিয়ৎ চাওয়া উচিত বলে তৃণমূল নেতারা মনে করেন। এত সবের পরেও কিন্তু রাজ্যপালের থামার লক্ষণ নেই। সোমবার শিলিগুড়িতে গিয়ে তিনি ফের মুখ খুললেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। শাসক তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, সরকারকে না জানিয়ে রাজ্যপাল জেলা সফর করছেন। শিলিগুড়িতে বসে ধনকড় জানিয়ে দিলেন, রাজ্যের সর্বত্র তাঁর যাওয়ার অধিকার আছে। যখন যেখানে যাওয়ার দরকার পড়বে, তখনই তিনি সেখানে চলে যাবেন। এর জন্য তাঁর কারও কাছে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাঁর দাবি, সংবিধান মেনেই তিনি জেলায় জেলায় যাচ্ছেন, বৈঠক করছেন।
রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সংঘাতকে রবিবার তৃণমূল নেতারা দিল্লিতে নিয়ে গিয়েছেন। দলের দুই নেতা ওইদিন জানিয়েছিলেন, বিষয়টি তাঁরা সংসদেও তুলবেন। সোমবার রাজ্যপালের প্রসঙ্গ উঠে এল রাজ্যসভার অন্দরেও। দলের সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় রাজ্যসভায় অভিযোগ করলেন, রাজ্যপালের আচরণ সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিপন্থী। তিনি রাজনীতি করছেন। রাজনীতি করতে হলে রাজভবন থেকে বেড়িয়ে আসুন। কেন্দ্রের প্রতি তাঁর অনুযোগ, রাজ্যপালকে দিয়ে রাজিনীতি করাচ্ছেন কেন?
শিলিগুড়িতে অবশ্য রাজ্যপাল সুখেন্দু শেখরের অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, সংসদে সদস্যদের বলার অধিকার আছে। পাশাপাশি তাঁর দাবি, তিনি সংসদীয় রীতিনীতি মেনেই চলছেন। শিলিগুড়িতে বসে তিনি যখন এসব কথা বলছেন, তখন শিলিগুড়ি থেকে সামান্য দূরে কোচবিহারে মুখ্যমন্ত্রী দলীয় সভায় ভাষণ দিচ্ছেন।
ধনকড়ের বিরুদ্ধে রাজ্যের নেতাদের অভিযোগ, তিনি জেলায় জেলায় বৈঠক করে সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছেন। ওই অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে রাজ্যপাল বলেন, আমার ডাকা বৈঠকে জেলাশাসক, এসপি-রা হাজির হচ্ছেন না। জেলাশাসকরা না আসার কারণ জানিয়ে আমাকে চিঠি দিচ্ছেন। তা হলে আর আমি কী করে সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছি? তাঁর কথায়, জেলাশাসকদের চিঠি আমাকে ব্যথিত করেছে। আমার জেলা সফর নিয়ে মন্ত্রীরা নানা কটাক্ষ করছেন। তা নিয়ে আমি কিছু বলছি না। তবে এসব নিশ্চয়ই মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আছে। আমি আশা করি, মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়গুলি দেখবেন।
রাজ্যপালের আরও দাবি, তিনি প্রশাসনিক রীতিনীতি ভাঙার লোক নন। কারণ হিসেবে তাঁর ব্যাখ্যা, আমি নানা বিষয়ে এই ক’মাসে মুখ্যমন্ত্রীকে একাধিক চিঠি দিয়েছি। কিন্তু সে সবের মধ্যে কী আছে, তা কখনও প্রকাশ্যে আনিনি। আমার জেলা সফর নিয়ে অনেক
কথা বলা হচ্ছে। হেলিকপ্টার চেয়েও দু’ দুবার আমি তা পাইনি। তা বলে কি আমি জেলায় যাব না? শান্তিপুরে আর ফরাক্কায় হেলিকপ্টার না পাওয়া সত্ত্বেও তো গিয়েছি। এই যে আজ আমি শিলিগুড়িতে এলাম, বিমানবন্দর থেকে রাস্তার দু’পাশে কেবল মুখ্যমন্ত্রীর কাটআউট। আমার তো কোনও কাটআউট ছিল না! সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, রাজ্য সরকারকে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আরও অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমি অনেক শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছি। আন্দোলন করলে শিক্ষকদের পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এর থেকে ছাত্ররা কী শিখবে?
রাজ্যপাল এত কিছু বললেও মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু কোচবিহারের কর্মিসভা থেকে তাঁর বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। যদিও কয়েকদিন আগেই তিনি রাজ্যপালকে ‘বিজেপির মুখপত্রের মতো আচরণ করছেন’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন।