শেষ ৩ বছরে ১০ টি ট্যুইট, আর গত দেড় মাসে ২৩ টি! অপর্ণা সেন কেন হঠাৎই অতিসক্রিয় রাজনৈতিক ইস্যুতে? প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে

তিনি ট্যুইটারে যোগ দিয়েছেন প্রায় এক দশক আগে। কিন্তু তিনি যে সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব অ্যাকটিভ, তেমন কোনও ইঙ্গিত আগে পাওয়া যায়নি। নিজের ছবির প্রচার কিংবা সামাজিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মাঝেমাঝে ট্যুইট করেছেন বটে, তবে গত দেড় মাসে যেন তেড়েফুঁড়ে উঠেছেন অপর্ণা সেন। যে অপর্ণা সেন গত ৩ বছরে ট্যুইট করেছেন সাকুল্যে ১০ টি, সেই তিনিই শেষ দেড় মাসে করে ফেলেছেন ২৩ টি ট্যুইট। তার সিংহভাগই সক্রিয় রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিষয় নিয়ে। যা ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছে। কেউ সমালোচনা করছেন প্রখ্যাত অভিনেতা এবং চিত্র পরিচালক অপর্ণা সেনের, কেউ আবার এর পিছনে খুঁজছেন অন্য ‘মানে’।
কখনও কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঘরে ফেরা নিয়ে অভিনন্দন জানিয়েও কেন্দ্রের ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক বিভাজন বলে তীক্ষ্ণ কটাক্ষ, কখনও আবার রাজ্যে অনশনরত শিক্ষকদের উপর পুলিশি অত্যাচারের বিবরণ দিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন। জুলাই ও অগাস্ট মাস জুড়ে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাবলী নিয়ে অপর্ণা সেনের একের পর এক ট্যুইটে সাড়া পড়েছে দেশজুড়ে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, তাঁর আচমকা এমন বদলের কারণ কী?
অপর্ণা সেনের ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮, এই ৩ বছরে সাকুল্যে ১০ টি ট্যুইট করেছেন তিনি। তার মধ্যে ২০১৮ সালে একটিও ট্যুইট নেই। ২০১৬ এবং ২০১৭, দু’বছরে ১০ টি ট্যুইট। তার মধ্যে ৯ টিই অরাজনৈতিক এবং সিনে দুনিয়া সম্পর্কিত। শুধুমাত্র একটিই ট্যুইট আছে রাজনৈতিক বিষয়ে। তা হল, ২০১৭ সালের ৫ ই সেপ্টেম্বর সাংবাদিক গৌরি লঙ্কেশের মৃ্ত্যু নিয়ে ট্যুইট। ২০১৮ সালে একটিও ট্যুইট করেননি অপর্ণা সেন।
সরাসরি কখনও রাজনীতি না করলেও, রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় আন্দোলনে, পথে দেখা গিয়েছে অপর্ণা সেনকে। নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর বা লালগড় আন্দোলনের সময় বিদ্বজ্জনেদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এই অভিনেতা এবং পরিচালক। গৌরি লঙ্কেশের মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশের পাশাপাশি দোষীদের শাস্তির দাবিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে সমস্তরকম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি।
কিন্তু সম্প্রতি ফের রাজনৈতিক বিষয়ে সক্রিয় হয়েছেন অপর্ণা সেন। কলকাতায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। গিয়েছিলেন সন্ত্রস্ত ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়ায়। তারপরই গণপিটুনি, অসহিষ্ণুতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখে গোটা দেশে শিরোনামে উঠে আসেন অপর্ণা সেন। প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন বিজেপির। তারপর ফের ৩৭০ ধারা এবং এই ইস্যুতে ম্যাগসায়সাই পুরস্কারপ্রাপ্ত সন্দীপ পাণ্ডের ‘গৃহবন্দি’ হওয়ার ঘটনা নিয়েও কেন্দ্রের সমালোচনা করেন তিনি। যে অপর্ণা সেন গত কয়েক বছরে কোনও রাজনৈতিক বিষয়েই প্রকাশ্যে কোনও অবস্থান নেননি, তিনি হঠাৎই লোকসভা ভোটের পর কেন বিভিন্ন বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন এবং ট্যুইট করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। কেউ কেউ অপর্ণা সেনের এই ভূমিকাকে ব্যাখ্যা করছেন ‘অতিসক্রিয়তা’ বলে। রাজ্যে ২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে এই পরিচালক, অভিনেতা কি নয়া কোনও রাজনৈতিক ভূমিকায় ফের সক্রিয় হবেন, এই প্রশ্ন এবং জল্পনা চলছে বিভিন্ন মহলে।

Comments are closed.