দার্জিলিং লোকসভায় নিজেদের প্রার্থী নয়, বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাহাড়ের নির্দল প্রার্থীকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত সিপিএম-কংগ্রেসের

রাজ্যে চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে সিপিএম-কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা বা জোটের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত। শেষ মুহূর্তে দুই দলের নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে, ৪-৫ টি আসন নিয়ে। এই আসনগুলিতে কোন দল প্রার্থী দেবে তা নিয়ে ঐক্যমত্য হলেই আসন সমঝোতার বিষয়টি সামনে আনতে চাইছে দু’দল। কিন্তু এরই মধ্যে দার্জিলিং লোকসভা আসন নিয়ে প্রায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। সূত্রের খবর, বিজেপির হাতে থাকা দার্জিলিং লোকসভা আসনে সিপিএম এবং কংগ্রেস কোনও দলই প্রার্থী দেবে না। তারা সেখানে সমর্থন জানাবে পাহাড়ের কোনও এক নির্দল প্রার্থীকে, যিনি তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা নেবেন।
নিজেদের প্রতীকে প্রার্থী না দিয়ে নির্দল কাউকে সমর্থন করার মডেল সিপিএম-কংগ্রেস ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও পরীক্ষা করে দেখেছিল। এই দুই দল সেবার বেহালার একটি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে। কিন্তু তা সেভাবে ভোটারের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেনি। এবার লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং কেন্দ্রেও সেই মডেলেই লড়ার পরিকল্পনা করেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র-সোমেন মিত্ররা।
গত কয়েক বছরে দার্জিলিংয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। প্রথমত, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সেই একচ্ছত্র আধিপত্য আর নেই। দ্বিতীয়ত, বিমল গুরুঙ পাহাড়ছাড়া হওয়ার পর বিনয় তামাং সহ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বহু নেতাই এখন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এই দুই কারণে দার্জিলিং কেন্দ্রে পর পর দুটি লোকসভা ভোটে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে জেতা বিজেপির শক্তি অনেকটাই ক্ষয় হয়েছে বলে তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য। তৃণমূলও এখন দার্জিলিং লোকসভা আসন পাখির চোখ করেছে। এই পরিস্থিতিতে এই দুই দলের বিরুদ্ধেই কীভাবে লড়াই করা যায় তার নতুন রোডম্যাপ বের করেছেন এই জেলার সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, জিএনএলএফ নেতা সুবাস ঘিসিংয়ের ছেলে মন ঘিসিং, সিপিআরএম নেতা আর বি রাই এবং প্রাক্তন মোর্চা নেতা ও বর্তমানে জাপ প্রধান হরকা বাহাদুর ছেত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি একাধিকবার মিটিং করেছেন দার্জিলিং জেলার সিপিএম-কংগ্রেসের নেতারা। কয়েক মাস আগে প্রাক্তন সিপিএম নেতা আনন্দ পাঠকের মৃত্যু দিনে তাঁর স্মরণে দার্জিলিংয়ে একটি শোকসভা আয়োজন করে সিপিএম। সেখানে জিএনএলএফ, সিপিআরএম এবং জাপ সহ পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী প্রায় ১০ টি দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর মাসখানেক আগে দার্জিলিংয়ে সিপিআরএম নেতা আর বি রাইয়ের ডাকে ফের একবার মিটিং হয়। সেখানে দার্জিলিং জেলা সিপিএম সম্পাদক জীবেশ সরকার এবং কংগ্রেস নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি হরকা বাহাদুর ছেত্রী কালিম্পংয়ে একটি মিটিং করেন, সেখানেও এই দলগুলি উপস্থিত ছিল।
আলোচনায় ঠিক হয়েছে, জিএনএলএফ, সিপিআরএম বা জাপ, কোনও দলের একজন আসন্ন লোকসভায় দার্জিলিং কেন্দ্রের প্রার্থী হবেন এবং সিপিএম-কংগ্রেস নিজেরা প্রার্থী না দিয়ে তাঁকে সমর্থন করবে। সূত্রের খবর, সাংগঠনিক শক্তির নিরিখে জিএনএলএফ নেতা মন ঘিসিংয়ের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তা চূড়ান্ত হবে।
সিপিএম এবং কংগ্রেসের বক্তব্য, দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল পাহাড়ের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের (দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং) ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে। সমতলের চারটির মধ্যে শিলিগুড়ি, ফাঁসিদেওয়া এবং মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি কেন্দ্রে সিপিএম এবং কংগ্রেস বিধায়ক আছেন। পাশাপাশি উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া বিধানসভা কেন্দ্রেও তাদের শক্তি কম নয়। সব মিলে পাহাড়ের কোনও প্রার্থী বিমল গুরুঙ এবং তৃণমূলের লড়াইয়ে মধ্যে দাঁড়িয়ে বিকল্প হিসেবে পাহাড়ের মানুষের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে পারলে এই লোকসভা কেন্দ্রে চমকে দেওয়ার মতো রেজাল্ট হতে পারে বলে মনে করছেন সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতারা। সেই কারণেই বিজেপি এবং তৃণমূলকে হারাতে নিজেরা প্রার্থী না দিয়ে পাহাড়ে নির্দল কাউকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Comments are closed.