Health Insurance Tips: সঙ্কটের এই সময়ে স্বাস্থ্য বিমা কেনার জন্য কী কী জানা দরকার?

করোনা আবহে ভারতের প্রতিটি শিল্প ক্ষেত্রেই পরিকাঠামোগত এক বিশাল বদল এসেছে। স্বাস্থ্য বিমাও তার ব্যতিক্রম নয়। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার আকাশছোঁয়া খরচ আর মানুষের লাইফ স্টাইলের পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে গত কয়েক বছরে হেলথ ইন্সিওরেন্স বা স্বাস্থ্য বিমার চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনও দুর্ঘটনা হোক কিংবা বড় কোনও অসুখ, ভালো চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে health insurance -এর উপর নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে। তবে স্বাস্থ্য বিমা কেনার ক্ষেত্রে শর্তাবলী ও কোন বিমার কী বৈশিষ্ট তা জানা আবশ্যক।

 

Health Insurance কী? সাধারণ বিমার সঙ্গে এর পার্থক্য কী?

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক health insurance বা স্বাস্থ্য বিমা কী? জীবনে দুর্ঘটনা বলে কয়ে আসে না। কিন্তু আচমকা নিজের কিংবা পরিবারের সদস্য গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বিপুল অর্থ খরচ করে চিকিৎসা করানোটা যে কোনও মধ্যবিত্তের পক্ষে অসম্ভব চাপের। এখানেই সাহায্য করে স্বাস্থ্য বিমা। অর্থাৎ, মেডিক্যাল ইন্সিওরেন্স হল বিমার একটি পলিসি যা বিমাকারীকে ও তাঁর পরিবারকে চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচে সুরক্ষা প্রদান করে। আজ আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ট ব্যয়সাধ্য। কিন্তু আপনাকে খরচের ভাবনা সরিয়ে রেখে আরোগ্যের কথা চিন্তা করতে হবে। সেখানেই health insurance -এর উপযোগিতা।

 

স্বাস্থ্য বিমা কেনার সময় যে যে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে (Things to Look when Buying Health Insurance)

আপনার স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয়ে আর্থিক সহায়তা পেতে একটি স্বাস্থ্য বীমা কিনতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য বিমা পাওয়া যায় যার এক একটি এক একরকম বৈশিষ্ট সম্পন্ন। সুতরাং চিকিৎসা বিমা পলিসি কেনার আগে আপনাকে অবশ্যই কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে।

স্বাস্থ্য বিমা পলিসি কেনার আগে এর মেয়াদ এবং পরিভাষা বোঝা জরুরি। কো-পে এমন একটি শব্দ যা আগে জানা উচিত। কো-পে হল মোট বিমা বিলের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ যা কোনও ব্যক্তি স্বাস্থ্য বিমা যখন দাবি করেন তখন তার বাকি অর্থ প্রদান করে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানী।

 

বিমা কিনতে যা যা খেয়াল রাখবেন

health insurance coverage

 

অল্প বয়সে হেলথ ইন্সিওরেন্স করাই বুদ্ধিমানের কাজ। চাকরির শুরুতে, কম বয়সে স্বাস্থ্য বিমা করে নিলে প্রথম যে উপকার পাবেন তা হল, কম মূল্যের প্রিমিয়াম দিয়ে বিমা কেনার সুযোগ। দ্বিতীয়ত, যে বয়সে আপনি ওয়েটিং পিরিয়ডে থাকবেন তা ইতিবাচক। তৃতীয়ত, বিমা প্রত্যাখ্যানের চান্স অনেক কম।

তাছাড়া প্রচুর কভারেজ অপশন, ভালো ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কারণে কম বয়সে স্বাস্থ্য বিমা কিনে রাখাই শ্রেয়।

 

কর্পোরেট বিমা থাকলেও স্বাস্থ্য বিমায় বিনিয়োগ করুন

অনেক সময়, মানুষ স্বাস্থ্য বিমা কেনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। যেহেতু তাঁদের কাছে কর্পোরেট স্বাস্থ্য বীমা থাকে। কিন্তু আপনি এই ভুল করবেন না। আপনার কোম্পানির পক্ষ থেকেও যদি আপনার স্বাস্থ্য বিমা করা থাকে তবুও অতিরিক্ত স্বাস্থ্য বীমা নীতি বেছে রাখুন এবং বিনিয়োগ করুন যা, আপনার পরিবারকে সুরক্ষা দেবে। কখনও চাকরি ছেড়ে দিলেও নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে চিন্তা থাকবে না।

 

সঠিক কভারেজের দিকে নজর দিন

সঠিক স্বাস্থ্য বীমা নীতি কভারেজের জন্য আপনার আগে থেকে ভাবনা চিন্তা করে রাখা উচিত, কোন চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজন আপনার কাছে বেশি জরুরি। তা বিশ্লেষণ করে তবেই health insurance কিনুন। এগুলি বিশ্লেষণ করার সময় নজর রাখুন আপনার বিমা পরিকল্পনা কত বিস্তৃত এবং কী কী সুবিধা দেবে, তার উপর।

বিমা কোম্পানি যে সুবিধাগুলি দেয় তার মধ্যে সাধারণত থাকে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, হাসপাতালে ভর্তির আগে ও পরের ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিষয়, ডে কেয়ার প্রসিডিওর কভারেজ, আবাসিক হাসপাতালে ভর্তির খরচ, অঙ্গদাতার ব্যয়, অ্যাম্বুলেন্সের কভারেজ, প্রসূতি প্রো কভারেজ, নবজাতক শিশুর ডাক্তারি খরচসমূহ এবং আরও বেশ কিছু জিনিস। তাই আপনার এবং পরিবারের পক্ষে কোনটা উপযোগী, প্রয়োজনে কোন বিমা আপনার কাজে লাগবে তা জেনেই স্বাস্থ্য বিমা কিনুন।

 

কোন স্বাস্থ্য বিমা আপনার পক্ষে অধিক সাশ্রয়ী তা বিচার করে দেখুন

Health Insurance কেনার সময় আপনার চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি বাজেটের সীমা বুঝে বিনিয়োগ করুন। তবে, সবসময় দামের চেয়ে প্ল্যান বেনিফিটে অগ্রাধিকার দেবেন। আপনার পক্ষে সাশ্রয়ীও হবে এবং সর্বাধিক বেনিফিট পাবেন, পরিকল্পনা করে এমন স্বাস্থ্য বিমা কিনে রাখুন।

 

আজীবন পুনর্নবীকরণ বা লাইফ-লং রিন্যুয়েবল বৈশিষ্ট্যের বিমা পছন্দ করুন

আজীবন পুনর্নবীকরণের সুযোগ থাকা স্বাস্থ্য বিমা আপনাকে এবং আপনার প্রিয়জনকে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা দেবে। মনে রাখা দরকার, বছর বছর চিকিৎসা পরিষেবায় খরচ বৃদ্ধি পাবেই। সেক্ষেত্রে পুনর্নবীকরণ করা যায় এমন স্বাস্থ্য বিমা বেছে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। যা একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত উদ্বেগ থেকে আপনাকে মুক্ত রাখবে।

 

বিমা কোম্পানির হাসপাতাল যোগের কথা খেয়াল রাখুন

স্বাস্থ্য বিমা কেনার সময় দেখুন কোন কোন হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রয়েছে ওই বিমা সংস্থা। আপনার পছন্দ ও আস্থা যে হাসপাতালের উপর, সেখানে চিকিৎসার সুযোগ দেয় কিনা তা দেখে নিন বিমা কেনার সময়।

 

ক্লেম সেটেলমেন্ট রেশিও বা CSR দেখে নেবেন

health insurance claims

 

চিকিত্সার অধিকাংশ খরচ নিষ্পত্তি করতে পারে এমন বিমা সংস্থার চাহিদাই স্বাভাবিকভাবে বেশি। তাই এমন কোম্পানির উচ্চ CSR বিমা প্রকল্প বেছে নিন যাতে পরে ওই সংস্থা বিমার দাবি প্রত্যাখ্যান করতে না পারে। তাছাড়া আরও একটি বিষয় দেখে নিতে ভুলবেন না, তা হল, সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানি ক্যাশলেস হিসেবে নাকি পুনরায় জমা দেওয়ার মাধ্যমে বিমার দাবি নিষ্পত্তি করে। এমার্জেন্সির সময় চিকিৎসার বিপুল খরচ বহন করতে গেলে ক্যাশলেস ক্লেম বেছে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

 

বিমার সীমাবদ্ধতা

যে কোনও health insurance পলিসি হোল্ডারকে একাধিক সুবিধা দেয়। তবে সব বিমা সংস্থারই সীমাবদ্ধতা থাকে। তাই সংশ্লিষ্ট বিমার লিমিট, ওয়েটিং পিরিয়ড, কো-পেমেন্ট ক্লজ, কী কী সুবিধা থাকছে না, বিমার নিশ্চিত অঙ্কের পরিমাণ, ছাড়ের শর্ত বা কো পে এন্ড ডিডাক্টেবল, নগদহীন দাবির অপশন, অতিরিক্ত সুবিধা, পরিকল্পনা এবং সর্বোপরি বিমা সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ভালো করে খতিয়ে দেখে স্বাস্থ্য বিমা কিনুন।

কথায় আছে, Prevention is better than cure, তাই চিকিৎসা সংক্রান্ত অপ্রত্যাশিত জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার আগে উপযুক্ত স্বাস্থ্য বিমা পরিকল্পনার মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

Comments are closed.