পাক গুপ্তচর সংস্থাকে তথ্য পাচারের অভিযোগে গেফতার ‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপনাস্ত্র প্রকল্পে যুক্ত প্রতিরক্ষা ইঞ্জিনিয়ার

পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই সহ অন্যান্য দেশের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করা হল ভারতের ব্রহ্মোস মিসাইল প্রজেক্টের সাথে যুক্ত এক ইঞ্জিনিয়ারকে। জানা গেছে, নিশান্ত আগরওয়াল নামে ওই ইঞ্জিনিয়ার মহারাষ্ট্রের নাগপুরের ব্রহ্মোস এরোস্পেস প্রাইভেট লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন। সোমবার সেনা, মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশ পুলিশের যৌথ অভিযানে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে।
গত চার বছর ধরে নিশান্ত ব্রহ্মোস এরোস্পেস মিসাইল সেন্টারে টেকনিক্যাল রিসার্চ সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। কুরুক্ষেত্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে গোল্ড মেডেলসহ উত্তীর্ণ হন নিশান্ত। কৃতী, উজ্জ্বল এই যুবক গত সপ্তাহেই বিয়ে করেন বলে জানা গেছে। এটি কোনও ‘হানি ট্র্যাপ’ এর ঘটনা কিনা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মহিলাদের দিয়ে এরকম ফাঁদ পাতা হয়ে থাকে বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। নিশান্ত তারই শিকার কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উত্তর প্রদেশের ‘অ্যান্টি টেরর স্কোয়াড’এর প্রধান অসীম অরুণ জানিয়েছেন, নিশান্তের ব্যক্তিগত কম্পিউটার পরীক্ষা করে অনেক গোপন, সংবেদনশীল তথ্য পাওয়া গেছে। ফেসবুকে পাকিস্তানের কম্পিউটার আইডি সম্বলিত অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের সাথে নিশান্ত কথাবার্তা বলতেন বলেও জানা গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি তথ্যের গোপনীয়তা ভাঙার সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ আনা হচ্ছে, বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। বাড়ির পাশাপাশি তাঁর কর্মস্থলের কম্পিউটারটিও বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারীরা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ইয়ং সায়েন্টিস্ট পুরস্কার’ এ সম্মানিত হয়েছিলেন নিশান্ত।
নিশান্তের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তিনি দেশের সুরক্ষা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ, সংবেদনশীল গোপন তথ্য পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এবং মার্কিন গুপ্তচর সংস্থাসহ অন্যান্য কয়েকটি দেশের কাছে পাচার করেছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্য কুড়ির নিশান্ত যে বিভাগে কর্মরত ছিলেন সেখান থেকে ‘ক্ল্যাসিফায়েড’ তথ্য সেভাবে পাওয়া সম্ভব না। মনে করা হচ্ছে বিভিন্ন গোপন কোডের মাধ্যমে গোপন তথ্য পাচার করে থাকতে পারেন নিশান্ত। কোডগুলি খোলার চেষ্টা চলছে। কানপুরস্থিত ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত দুই বিজ্ঞানীর উপরও তদন্তকারীরা নজর রাখছেন বলে খবর।
ব্রহ্মোস ক্ষেপনাস্ত্রের ক্ষেত্রে এই প্রথম এরকম গোপনীয়তার প্রশ্ন উঠল। বিশ্বের দ্রুততম ক্রুজ মিসাইল বলে খ্যাত ব্রহ্মোসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ নির্মাণের কাজ হয় নাগপুরের এই কেন্দ্রটিতে। ভারত-রুশ যৌথ প্রযুক্তিতে নির্মিত ব্রহ্মোসের পাল্লা ৩০০ কিলোমিটার। যেটি স্থল, যুদ্ধ জাহাজ ও যুদ্ধ বিমান থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

Comments are closed.