জানেন কি, রাজ্যের নয়া শিক্ষাবিধিতে কী আছে, যাতে ক্ষমতা খর্ব হতে পারে রাজ্যপাল-আচার্য ও উপাচার্যদের

মঙ্গলবার বিধানসভায় শিক্ষাবিধি (New Education Rules) পেশ করলেন শিক্ষামন্ত্রী। অনেকে মনে করছেন, এই বিধির ফলে রাজ্যপাল-আচার্য ও উপাচার্যদের ক্ষমতা খর্ব হবে। সরকারের দাবি, এতদিন উচ্চশিক্ষায় কোনও বিধি ছিল না। তাই লিখিত বিধি আনা হল। কারও ক্ষমতা খর্ব করার জন্য এই বিল আনা হয়নি।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কী আছে এই নয়া বিধিতে (New Education Rules)?
ওই বিধি অনুযায়ী প্রথমত, রাজ্যপাল সরাসরি কোনও উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না। তাঁকে যোগাযোগ করতে হবে উচ্চশিক্ষা দফতরের মাধ্যমে। একইভাবে উপাচার্যরাও আচার্যের সঙ্গে সরাসরি যোগাজোগ করতে পারবেন না। তাঁদেরও আচার্যের সঙ্গে কথা বলতে হবে দফতরের মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন-সহ বিভিন্ন বিষয়ে উপাচার্যদের কথা বলতে হবে উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে, আচার্যের সঙ্গে নয়। তৃতীয়ত, উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য সার্চ কমিটির পছন্দক্রমই মানতে হবে আচার্য তথা রাজ্যপালকে। চতুর্থত, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কমিটিতে রাজ্যপালের মনোনীত প্রার্থী-পদে শিক্ষামন্ত্রী অন্তত তিনটি নাম পাঠাবেন। রাজ্যপাল সেই তালিকা থেকেই নাম বাছতে বাধ্য থাকবেন। পঞ্চমত, রাজভবনে আচার্যের কোনও সচিবালয় থাকবে না। ষষ্ঠত, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট, সিন্ডিকেট, কোর্ট, কর্মসমিতির বৈঠক ডাকতে হলে উপাচার্যদের শিক্ষা দফতরকে জানাতে হবে। দফতর প্রয়োজন মনে করলে রাজ্যপালকে জানাবে। সপ্তমত, উপাচার্য, সহ উপাচার্যদের বিদেশ সফরের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে।
শিক্ষা মহল বলছে, রাজ্যপালকে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ছড়ি ঘোরাতে না দেওয়ার লক্ষ্যেই এই বিধি আনা হয়েছে। এর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় পড়ুয়াদের হাতে ঘেরাও হওয়ার পর তাঁকে মুক্ত করতে সটান সেখানে চলে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে। বাবুলকে ঘেরাওমুক্ত করার জন্য রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে পুলিশ ডাকার পরামর্শ দেন। সুরঞ্জন তা মানতে চাননি। রাজ্যপাল তখন তাঁকে মনে করিয়ে দেন, তিনি কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। সুরঞ্জনের বক্তব্য ছিল, তিনি পদত্যাগ করবেন, তবু পুলিশ ডাকবেন না। এর পর রাজ্যপাল যাদবপুরের কোর্ট বৈঠকে যোগ দেন। একইভাবে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট বৈঠকেও যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। কিন্তু সেনেট বৈঠকের সমস্ত প্রস্তুতি নিয়েও আচমকা কর্তৃপক্ষ তা বাতিল ঘোষণা করে। তবু রাজ্যপাল হাজির হয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ে। তা নিয়ে বিস্তর নাটক হয়। সরকারি সূত্রের খবর, নবান্ন এগুলিকে ভালো চোখে দেখেনি।

Comments are closed.