সাবরিমালা ইস্যুতে স্যানিটারি প্যাডের প্রসঙ্গ তুলে বিতর্কিত মন্তব্য স্মৃতি ইরানির, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড়

কেরলের সাবরিমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশের অধিকার নিয়ে চলতি বিতর্কের মাঝেই, মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলে বিতর্ক আরও বাড়ালেন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। এদিন তিনি মুম্বইয়ে দ্য ইয়ং থিঙ্কার্স কনফারেন্স শীর্ষক এক আলোচনাসভায় যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে সাবরিমালা ইস্যুতে তাঁর মত জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রথমে বলেন, বিষয়টি নিয়ে যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, তাই একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে তিনি এমন কিছু বলতে চান না যাতে শীর্ষ আদালতের অবমাননা করা হয়। স্মৃতি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তাঁর মনে হয়, ভগবানের কাছে প্রার্থনা করার অধিকার সবার থাকলেও, ধর্মীয় স্থান অপবিত্র করা বা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা উচিত নয়।
এরপরই একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন স্মৃতি। তিনি বলেন, ‘আমার একটি সাধারণ প্রশ্ন আছে, আমরা যখন বন্ধু, পরিচিতদের বাড়ি যাই, তখন কি মহিলারা রক্তমাখা স্যানিটারি প্যাড নিয়ে যাই? যাই না তো? তাহলে ভগবানের বাড়িতে (মন্দিরে) যাওয়ার সময় আমরা তা কি করে করতে পারি?’
স্মৃতির এই মন্তব্য প্রচার হতেই, শুরু হয়েছে বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে তাঁর সমালোচনা। প্রশ্ন উঠছে, নিজে একজন মহিলা হয়ে এরকম কুরুচিকর মন্তব্য কী করে করলেন স্মৃতি? অনেকের প্রশ্ন, মহিলাদের ঋতুস্রাব তো সম্পূর্ণ একটি প্রাকৃতিক বিষয়, এখানে পাপ-পূণ্য আসছে কী করে? কেউ কেউ বলছেন, ঋতুমতী মহিলারা তো তাঁদের ঋতুচক্র চলাকালীন সময়ে আত্মীয়,বন্ধু-বন্ধবদের বাড়ি ঘুরতে যান, ঘরে বসে থাকেন না। তাহলে মন্দিরে কেন প্রবেশ করতে পারবেন না? বন্ধুদের বাড়ি যাওয়া আর তাঁদের বাড়িতে রক্তমাখা প্যাড নিয়ে যাওয়া এই দুটি কি একই বিষয়? নিজে একজন মহিলা হয়ে মহিলাদের অপমান করলেন স্মৃতি, অনেকেরই তাই মত।
বিতর্কের পর এদিন সন্ধ্যায় একটি ট্যুইট করেন স্মৃতি ইরানি। সেখানে তিনি লেখেন, তাঁর মন্তব্য নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, কিন্তু তিনি নিজে একজন হিন্দু মহিলা হলেও, এক পার্সিকে বিয়ে করেছেন। পার্সিদের ধর্মস্থানে মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, তাই তিনিও সেটি মেনে চলেন।
উল্লেখ্য, গত মাসের শেষে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, এবার থেকে সব বয়সের মহিলারা সাবরিমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। এতদিন এই মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের (১০ থেকে ৫০) প্রবেশের অধিকার ছিল না। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর গত ১৮ অক্টোবর মন্দির খুললেও, সেখানে মহিলাদের প্রবেশ করতে দেয়নি মন্দির কর্তৃপক্ষ। বেশ কয়েকজন মহিলাকে নিগ্রহ করার অভিযোগও ওঠে মন্দির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সোমবার রাত ১০ টায় পর পূজার্চনার পর আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সাবরিমালা মন্দির। মন্দির  কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রচলিত প্রথা ছেড়ে এই মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। জোর করে তা করার চেষ্টা হলে মন্দিরে জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হবে।

Comments are closed.