চিদম্বরম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন গ্রেফতার হন অমিত শাহ, ১০ বছরের মাথায় ইতিহাসের উলটপূরাণ!

যে পি চিদম্বরম দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন জেলে যেতে হয়েছিল অমিত শাহকে, সেই অমিত শাহের হাতে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব। আর জেল যাত্রার খাঁড়া ঝুলছে চিদম্বরমের মাথায়।
আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় দিল্লি হাইকোর্ট থেকে পি চিদম্বরমের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ইউপিএ জমানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিকে ইডি, সিবিআই পি চিদম্বরমের নামে লুক আউট নোটিস জারি করেছে। চিদম্বরমের সন্ধানে চলছে তল্লাশি। আজ থেকে প্রায় এক দশক আগে পরিস্থিতি ঠিক এমনই হয়েছিল। তবে সেই সময় চিদম্বরমের জায়গায় ছিলেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেবারও ঠিক এরকমই কেন্দ্রীয় এজেন্সিরা মরিয়া হয়ে ছুটছিল অমিত শাহের পিছনে। মাঝে মাত্র ১০ বছর সময়। এর মধ্যেই উল্টে গিয়েছে পাশা। ঘুরে গিয়েছে খেলা।
কেন্দ্রের প্রতিহিংসামূলক ব্যবহারের অভিযোগ তুলে কংগ্রেস ইতিমধ্যেই বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করতে শুরু করেছে। ট্যুইট করেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী। মোদী সরকারকে বিঁধে জোরালো মন্তব্য করেছেন রাহুল গান্ধী। শুধু কংগ্রেসই নয়, বিভিন্ন বিরোধী দলও কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে অপব্যবহারের অভিযোগ তুলছে। ঠিক এক দশক আগে, কংগ্রেস তখন দিল্লির মসনদে, একই অভিযোগ তুলত বিরোধী বিজেপিও। সেই সময় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ছিল পি চিদম্বরম।
ইউপিএ সরকার তখন দেশের ক্ষমতায়। চিদম্বরম কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সময় তুঙ্গে সোহরাবুদ্দিন শেখ এনকাউন্টার মামলা। সেই মামলাতেই অমিত শাহের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ২০১০ সালের ২৫ শে জুলাই সিবিআই অমিত শাহকে গ্রেফতার করে জেলে ঢোকায়। ২০০৮ সালের ২৯ শে নভেম্বর থেকে ২০১২ সালের ৩১ শে জুলাই পর্যন্ত দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন চিদম্বরম। এই ঘটনার পর নর্মদা-সাবরমতী দিয়ে বহু জল বয়ে গিয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের। এখন দিল্লিতে ক্ষমতায় বিজেপি। আর ইডি, সিবিআই চিদম্বরমকে গ্রেফতার করতে হন্যে হয়ে ঘুরছে।
২০১০ সালের ২৫ শে জুলাই একটি সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন বিজেপি নেতা তথা গুজরাতের মন্ত্রী অমিত শাহ। সিবিআই সেই সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্যে থেকেই অমিত শাহকে গ্রেফতার করে। মাঝ পথেই শেষ হয়ে যায় সাংবাদিক বৈঠক। সেদিন থেকে টানা তিন মাস জেলের চার দেওয়ালের মধ্যেই কাটে অমিত শাহের। পাশাপাশি, আদালতের নির্দেশে ২ বছর গুজরাতে ঢোকাই নিষিদ্ধ হয়ে যায় বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। যদিও সেই বছরেরই ২৯ শে অক্টোবর গুজরাত হাইকোর্ট থেকে জামিন পান অমিত শাহ। অমিত শাহের গ্রেফতারির পর বিজেপির তরফে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর অপব্যবহার করে বিরোধীদের চুপ করানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেমেছে কংগ্রেস।
২০১২ পর্যন্ত অমিত শাহ গুজরাতের বাইরে থাকতে বাধ্য হন। সে বছর বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তাঁকে গুজরাতে ঢোকার ছাড়পত্র দেয় সুপ্রিম কোর্ট। যদিও সিবিআইয়ের আবেদন মেনে এই মামলা গুজরাত থেকে সরিয়ে মুম্বইয়ে পাঠিয়ে দেয় শীর্ষ আদালত। তারপর থেকে মুম্বইতেই এই মামলার শুনানি চলেছে। ২০১৫ সালে বিশেষ সিবিআই আদালত অমিত শাহকে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়।
পি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্ট তাঁর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। তারপর থেকেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরমের উপর ঝুলছে গ্রেফতারির খাঁড়া। কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েই চিদম্বরমকে গ্রেফতার করতে উঠেপড়ে লেগেছেন অমিত শাহ। আর বিজেপির উত্তর, আইন চলছে আইনের পথে। ঠিক যে জবাব এক সময় দিতেন কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা।

Comments are closed.