২০১৯ জুড়ে বারবার শিরোনামে এসেছে সুপ্রিম কোর্ট: দেখে নেওয়া যাক বছরের ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়

১. অযোধ্যা জমি মামলা
৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭  একর জমি রাম মন্দির তৈরির জন্য দেয়। মুসলিম পক্ষকে মসজিদ তৈরির জন্য অযোধ্যাতেই ৫ একর জমি দেওয়ারও নির্দেশ দেয়। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে গুরুতর আইন লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করে দেশের শীর্ষ আদালত।

২. রাফাল মামলা
রাফাল মামলায় ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেওয়া রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই রায়ে রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনায় দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের দাবি খারিজ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বিচারপতি এস কে কল এবং কে এম জোসেফের বেঞ্চ  আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশোবন্ত সিনহা ও অরুণ শৌরির দায়ের করা রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দেয়।
একই বেঞ্চ চৌকিদার চোর হ্যায় স্লোগান তোলার অভিযোগে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ করে তাঁকে এই মামলার থেকে মুক্তি দেয়।

৩. সাবরীমালা রায়
সাবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তারপর তা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কেরলের রাজনীতি। তার আঁচ গিয়ে পড়ে দিল্লির রাজনীতিতেও। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালনে অনড় কেরলের বাম সরকারের তীব্র বিরোধিতা করে পথে নামে বিজেপি-আরএসএস। প্রথমে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পাশে দাঁড়ালেও শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসও মন্দিরে মহিলা প্রবেশে আপত্তি তোলে। সুপ্রিম কোর্টের এ বিষয়ে একাধিক পিটিশন দাখিল হয়। ১৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আইন পালন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলে কেরল সরকারকে।
৫ বিচারপতির বেঞ্চে বাকি বিচারপতিদের সঙ্গে সহমত পোষন করেননি বিচারপতি চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি নরিমান।

৪. বন অধিকার আইন: ১০ লক্ষ আদিবাসী উচ্ছেদের রায়, পরে স্থগিত
ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট বা বন অধিকার আইনে যে সমস্ত বাসিন্দার দাবি খারিজ হয়ে গিয়েছে, বনভূমি থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করার রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্র, বিচারপতি নবীন সিংহ এবং বিচারপতি ইন্দিরা ব্যানার্জির বেঞ্চ। এর ফলে দেশজুড়ে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের উচ্ছেদের আশঙ্কা তৈরি হয়। এনিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। পরে কেন্দ্রের আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের একই বেঞ্চ রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়।

৫. ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া বনাম অ্যাসোসিয়েশন অফ ইউনিফায়েড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার্স অফ ইন্ডিয়া
ভারতের টেলিকম অপারেটর্স বা সার্ভিস প্রোভাইডারদের কাছে বিরাট ধাক্কা হিসেবে অভিহিত সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়। ভারত সরকারের আবেদন মেনে নিয়ে ২৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট টেলিকম জিও, ভারতি এয়ারটেল, ভোডাফোন-আইডিয়ার মতো সংস্থার কাছ থেকে অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভেনিউ বাবদ ৯২ হাজার কোটি টাকা আদায়ে সবুজ সঙ্কেত দেয়।

৬. সীতারাম ইয়েচুরি বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া
সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জম্মু-কাশ্মীরে দলীয় নেতা তথা প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক ইউসুফ তারিগামিকে আটক করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানান। ২৮ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্ট শর্তসাপেক্ষে ইয়েচুরিকে শ্রীনগর গিয়ে আটক হয়ে থাকা তারিগামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি প্রদান করে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধানী বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি আব্দুল নাজির এবং বিচারপতি এস এ বোবদে। তবে কোন পরিস্থিতিতে তারিগামির মতো নেতাকে গৃহবন্দি বা আটক রাখার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা কেন্দ্রের কাছে জানতে চায়নি সুপ্রিম কোর্ট।

৭. তথ্যের অধিকারের আওতায় প্রধান বিচারপতিও
ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, প্রধান বিচারপতি অফিসও তথ্য জানার অধিকার আইনের অন্তর্ভুক্ত। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ দিল্লি হাইকোর্টের ২০১০ সালের রায়কে তুলে ধরে আরও জানায়, আইন-আদালতের ক্ষেত্রে কখনও কখনও গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়, তা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে।

৮. প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ, তাঁরই অফিসের কাজ করা এক মহিলার। যৌন হেনস্থার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তৈরি করা হয় ৩ বিচারপতির বেঞ্চ। তদন্ত করে সেই বেঞ্চ যৌন হেনস্থার কোনও প্রমাণ পায়নি বলে জানা যায়। ফলে যৌন হেনস্থার অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। এই রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আনা হয়নি। যদিও এই রায়ের তীব্র সমালোচনা হয় বিভিন্ন মহলে। জাস্টিস পট্টনায়ককে তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছিল। বিচারপতি সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তবে সেই রিপোর্টে কী আছে তা অজানা।

৯. অলোক ভার্মা বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া মামলা
রাতারাতি সিবিআইয়ের ডিরেক্টরের পদ থেকে কেন্দ্রের নির্দেশে অলোক ভার্মাকে সরিয়ে দেওয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে যান সিবিআইয়ের অপসারিত ডিরেক্টর অলোক ভার্মা। অলোক ভার্মা দাবি করেন, এই সিদ্ধান্ত বেআইনি। তৎকালীন প্রধানবিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি এস কে কল এবং বিচারপতি কে এম জোসেফ। এই বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে পাল্টে দেন। সিবিআই ডিরেক্টর পদ ফেরত পান অলোক ভার্মা।

১০. আদালত অবমাননায় দোষী সিবিআইয়ের অতিরিক্ত ডিরেক্টর নাগেশ্বর রাও
আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে মুজফফরপুর শেল্টার হোম মামলার তদন্তকারী অফিসারকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়ায় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ সিবিআইয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত ডিরেক্টর নাগেশ্বর রাওকে আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করে। ১ লক্ষ টাকা জরিমানার পাশাপাশি সিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর নাগেশ্বর রাওকে সারাদিন এজলাসে দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি দেয় শীর্ষ আদালত।

Comments are closed.