যে জনগণ আপনাদের ভোট দিয়েছেন, একের পর এক জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। সোমবার লোকসভায় রাষ্ট্রপতি ভাষণের উপর আলোচনা করতে গিয়ে মোদী সরকারকে এভাবেই তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
তাঁর প্রায় ১০ মিনিটের ভাষণে ঘুরেফিরে এলো মোদী সরকারের সিএএ, এনপিআর, এনআরসি, নোটবন্দি, বেকারত্ব, অর্থনীতি। কৃষ্ণনগরের সাংসদ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মোদী সরকারকে নিশানা করে বলেন, ভুলে যাবেন না, শুধু হিন্দুরাই আপনাদের ভোট দেননি। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’- এ ভরসা রেখে পুরনো রেকর্ড ভুলে ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ভোট দিয়েছে। আজ তাঁদের সঙ্গেই সরকার প্রতারণা করছে। মহুয়ার অভিযোগ, অর্থনীতি ও গণতন্ত্র নিয়ে প্রথমে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি, ক্ষমতা দখলের পর তা ভুলে গিয়েছে। যে ছোট ব্যবসায়ীরা ভাল বাজারের কথা ভেবে ভোট দিয়েছিলেন, নোটবন্দি সহ একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। যাঁরা প্রথমবার চাকরি খুঁজছেন, তাঁদের ঠকাচ্ছেন। গুজরাতে যে সব আদিবাসী মূর্তি তৈরি করতে জমি দিয়েছিলেন, শৌচাগার কর্মীর চাকরি দিয়ে তাঁদের প্রতারিত করা হয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা যে নাগরিকের ভোটে সরকার তৈরি হল, নাগরিকত্বের প্রমাণ চেয়ে তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন আপনারা, মন্তব্য মহুয়ার। বিজেপি সরকারের উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, আপনারা রাম, যুধিষ্ঠিরের কথা বলেন, ধর্মের কথা বলেন। ধর্ম, কী তা মনে আছে তো? তৃণমূল সাংসদ স্মরণ করিয়ে দেন, ক্ষমতার দম্ভে সরকার যেন নিজেকে সর্বেসর্বা না ভাবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে মোদী সরকারের সমালোচনা করলেই আজ দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। মহুয়া বলেন, আমরা গদ্দার নই, পাহারাদার। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থা তুলে ধরতে জিডিপি বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরে মহুয়া বলেন, দেশের অর্থমন্ত্রী আসল জিডিপি তথ্য দিতে ভয় পান।
সোমবার লোকসভায় বিজেপি শিবির থেকে প্রথম বক্তা পরবেশ ভার্মা জানান, সিএএ নিয়ে পিছু হটছে না কেন্দ্র। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ বলেন, একজন বিরোধী হিসেবে আমার বলার অধিকার আছে যে, এই সরকার নমনীয়তা হারিয়েছে। নয়া নাগরিক আইনের সঙ্গে নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের তুলনা টেনে মহুয়ার ব্যাখ্যা, এনআরসি, সিএএ-র মাধ্যমে প্রথমে চিহ্নিতকরণ করা হবে। তারপর কিছু মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আমার বন্ধুরা যাঁরা ২০১৪ সালে আপনাকে ভোট দিয়েছিল, তাঁরাই এখন আতঙ্কিত সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে।
Comments are closed.