নাগরিকত্ব আইন অভিশাপ, তা নিয়ে আরও ভাবনা চিন্তা প্রয়োজন, বললেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি ও এস্থার ডুফলো

নাগরিকপঞ্জি ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আরও ভাবনা চিন্তা প্রয়োজন বলে জানালেন নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি ও এস্থার ডুফলো।
১ জানুয়ারি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন লিখেছেন অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্থার ডুফলো। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ দম্পতির দাবি, এনআরসি ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন মোদী সরকারের প্রতিশ্রুতি মতো ন্যূনতম সরকার ও সর্বোচ্চ শাসন প্রক্রিয়ার নমুনা নয়। বরং এটি ভারতীয় নাগরিকত্বের মূলেই কুঠারাঘাত করেছে। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, তুমি যদি নাগরিকই না হও, তা হলে তুমি সারা জীবন কোথায় বাস করলে? আর তোমায় কেউ যদি না-ই চায়, তা হলে তুমি কে? কী তোমার পরিচয়? নোবেলজয়ী দম্পতি লিখেছেন, এই জায়গা থেকেই দেশের যুব সমাজ কেন্দ্রের নীতি ও আইন নিয়ে আজ এত হতাশ। এই প্রেক্ষিতে একটি উদাহরণ দিয়ে অভিজিৎ লিখেছেন, এক সময় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জনা কুড়ি মহিলাকে তাঁদের জন্মস্থান নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। তাঁরা সুস্পষ্ট ভাবে বলতে পারেননি উত্তর নাকি দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তাঁদের জন্মস্থান। কেউ বলেছেন, ‘আমার মা পাশের গ্রামের মেয়ে, বিয়ের পর এই গ্রামে আসেন, এখানেই আমার জন্ম। কিন্তু বাবা আবার বিয়ে করে আমাদের ঘরছাড়া করে দেন। এখন আবার প্রতিবেশীদের সাহায্যে এই গ্রামেই থাকতে পেরেছি।’ অভিজিতের প্রশ্ন, যে প্রান্তিক ও নিরক্ষর মানুষরা তাঁদের জন্মস্থানের নামটুকুও জানেন না, তাঁরা কীভাবে কাগজে-কলমে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করবেন? এই অবস্থায় তাঁরা বিদেশি হিসেবে প্রতিপন্ন হবেন।
প্রতিবেদনে ওই দম্পতি লিখেছেন, অসমে এনআরসি করার একটি আলাদা প্রেক্ষিত আছে। সারা দেশের সঙ্গে তাকে গুলিয়ে ফেললে হবে না।
কেন্দ্রের নাগরিকত্ব আইনকে ‘অভিশাপ’ বলে বর্ণনা করে নোবেলজয়ী দম্পতি প্রতিবেদনে লিখেছেন, এনআরসি-র মাধ্যমে যে সব অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করা যায়নি তা প্রমাণিত। তাঁদের মতে, অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যে অনুপ্রবেশকারীরা আসেন, তাঁরা এ দেশে থাকা আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া আর এক গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করে শুধু নিজেদের খাওয়া-পরার অভাব মেটাতে চান। কিন্তু আসল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। যাঁরা আশঙ্কায় থাকেন, নতুন গোষ্ঠী এসে তাঁদের রুজি-রোজগারে ভাগ বসাতে পারে, বিশেষ করে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে। নোবেলজয়ী  দম্পতির মতে, এটাই খারাপ শাসনের নমুনা, যেখানে ২০১৯ সালেও ১ কোটি ৯০ লক্ষ ভারতীয়কে রেলওয়ের মাত্র ৬৩ হাজার নিম্নপদে চাকরির জন্য আবেদন করতে হয়।
তাঁদের প্রশ্ন, কোনও বাঙালি হিন্দু শরণার্থীর তামিল বলা ছেলেমেয়ে কি চেন্নাইতে গিয়ে সরকারি কাজ করার সুযোগ পাবে? যে মারাঠী বলা শিশুটি বিহারে জন্মেছে এবং মহারাষ্ট্রে বড় হয়েছে তার কী হবে? তাই ভারতের মতো গণতান্ত্রিক ও সহিষ্ণু দেশে জাতি-ধর্ম-দেশ বিচার না করে শরণার্থীদের জায়গা করে দেওয়া উচিত বলে মত অভিজিতদের। কেন প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার হিন্দু তামিল বা আহমেদিয়া যারা পাকিস্তানে নিগৃহীত হচ্ছে তাদের এ ভারতে জায়গা হবে না, প্রশ্ন তোলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ দম্পতি অভিজিৎ ও এস্থার ডুফলো।

এই প্রতিবেদনটি ইংরেজিতে পড়তে ক্লিক করুন

Comments are closed.