রেজাল্টের মরসুম চলছে। বেরিয়ে গিয়েছে সিবিএসই দ্বাদশের ফল। সেই পরীক্ষায় একশো শতাংশ নম্বর পেয়েছেন লখনউয়ের দিব্যাংশী জৈন। কিন্তু করোনা পর্ব চলাকালীন প্রকাশিত পরীক্ষার ফলে প্রথম হওয়া দিব্যাংশীর সঙ্গে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া আর পাঁচজন মেধাবীর একটা বিশেষ পার্থক্য আছে। কী সেই পার্থক্য?
সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রথম দিব্যাংশীর স্বপ্ন ইতিহাস নিয়ে পড়ার। দেশের অতীতকে আরও ভালো করে জানার আকাঙ্খা তাঁর ছোট্টবেলার।
রেজাল্ট বেরোনোর পর আর পাঁচজন মেধাবী পড়ুয়ার মুখে যখন আইআইটি-আইআইএমের মন্ত্র, তখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র বা এমবিএয়ের মত পোক্ত কেরিয়ারের বদলে গবেষণা ক্ষেত্রে যেতে চাইছেন একশো শতাংশ নম্বর পাওয়া লখনউয়ের পড়ুয়া! আর এখানেই বাকিদের চেয়ে নিজেকে আলাদা চিহ্নিত করাতে পেরেছেন দোকানদার বাবার মেয়ে দিব্যাংশী।
সাম্প্রতিক ভারতে কেরিয়ার ওরিয়েন্টেড কোর্স বা চাকরিমুখী কোর্সের চাহিদা তুঙ্গে। পরীক্ষায় প্রথম-দ্বিতীয়দের কার্যত অটোম্যাটিক চয়েস ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং বা এমবিএয়ের মতো কোর্স। যেখানে পাশ করলেই রোজগারের নিশ্চয়তা। উল্টোদিকে গবেষণায় যেতে চাওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা যথেষ্টই কম। গবেষক পড়ুয়াদের অভিযোগ, উচ্চশিক্ষায় সরকারি অনুদানের পরিমাণ ক্রমশ কমছে। গবেষকরা ভাতা পাচ্ছেন না। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে জেএনইউ, হায়দরাবাদ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি, আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি কিংবা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই পরিস্থিতিতে ইংরেজি, সংস্কৃত, ইতিহাস, অর্থনীতি, ভূগোল এবং বিমা পরীক্ষায় ১০০ য় ১০০ পাওয়া লখনউয়ের দিব্যাংশী জানাচ্ছে, তাঁর ইচ্ছে ইতিহাস নিয়ে গবেষণার! যা শুনে খানিক অবাক শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা। পাশাপাশি দিব্যাংশীর সিদ্ধান্ত আরও অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে গবেষণার অঙ্গনে নিয়ে আসবে, বলেও আশাবাদী তাঁরা।
তাহলে ইদানীং মেধাবী পড়ুয়ারা কি গবেষণা কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে কেরিয়ার তৈরি করার বিষয়ে ইতিবাচক ভাবছেন? লখনউয়ের দিব্যাংশী জৈনের সিদ্ধান্ত কি সেই মনোভাবেরই প্রতিফলন? তা এখনও জানা যায়নি। তবে এ বিষয়ে উল্লেখ করা যায়, সম্প্রতি বাংলায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম হয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের কলা শাখার ছাত্র গ্রন্থন সেনগুপ্ত। সেই প্রথম রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাসে কলা শাখার কেউ প্রথম হলেন। গ্রন্থন জানিয়েছিলেন, তিনি ইতিহাস পড়তে চান, গবেষণা করতে চান। সেই মতোই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
এবার সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় একশো শতাংশ নম্বর পাওয়া লখনউয়ের মেয়ে দিব্যাংশী জৈন জানালেন, তাঁর ইচ্ছে দেশের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করার।
Comments