ফের সমাজতন্ত্রের পথে চিলি! নতুন সংবিধান তৈরির ভোটে বিপুল সমর্থন, লাল পতাকার উচ্ছ্বাস লাতিন আমেরিকার আরও এক দেশ

মানুষের দাবির কাছে শেষমেশ রণে ভঙ্গ দিলেন চিলির দক্ষিণপন্থী প্রেসিডেন্ট পিনেরো। চিলিতে নতুন সংবিধান লেখা হবে। সেখানে নাগরিকদের সমানাধিকার, শিক্ষা, বাসস্থান এবং কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করা হবে। রবিবারের গণভোটে বিপুল জয়ের পর লাল পতাকা হাতে সান্তিয়াগো, ভালপারাইসোর রাজপথে নেমে আসেন আট থেকে আশি।

এক বছর আগে রাজধানী সান্তিয়াগোর মেট্রো ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে যে বিক্ষোভের জন্ম তা ক্রমেই গণ বিদ্রোহের রূপ নেয়। দেশে লাফিয়ে বেড়ে চলা অসাম্যের অবসান চেয়ে পথে নেমেছিলেন আট থেকে আশি। তাঁরা চেয়েছিলেন বামপন্থী মূল্যবোধের উপর দাঁড়িয়ে তৈরি হোক মানুষের সংবিধান। যেখানে প্রাথমিকতার ভিত্তিতে সমতার নিশ্চয়তা দেবে রাষ্ট্র। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পিনেরো বেসরকারিকরণের যে ঘোড়ায় সওয়ার হয়েছেন, তাতে তাঁর পক্ষে গণদাবি মানা ছিল কার্যত অসম্ভব। শেষ পর্যন্ত গণভোটের মধ্যে দিয়ে রবিবার সোশ্যালিজমের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হল চিলিতে, এমনই বলছেন উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা জনতা।

চিলির দক্ষিণপন্থী প্রেসিডেন্ট পিনেরা গণভোটের দাবি মেনে নেন। প্রথমে ঠিক হয় এপ্রিলে হবে গণভোট। করোনা অতিমারির জেরে তা পিছিয়ে অক্টোবরে করা হয়।

 

কেন গণভোট? 

গণভোটে দুটো প্রশ্ন ছিল। প্রথমত, তাঁরা কি নতুন সংবিধান চান? দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, কী ধরণের কমিটির তত্ত্বাবধানে সংবিধান রচিত হবে? রবিবারের গণভোটে ৭৮ শতাংশ চিলিয়ান জানিয়েছেন তাঁরা নয়া সংবিধান চান। এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে ৭৯ শতাংশ মানুষ রায় দিয়েছেন, সংবিধান কমিটির প্রত্যেক সদস্যকে জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে  অপর বিকল্প ছিল, কমিটিতে কংগ্রেসের ৫০ শতাংশ সদস্য থাকবেন।

 

এরপর কী? 

আগামী বছর ১১ এপ্রিল চিলির নাগরিকরা আবার ভোট দেবেন। সেই ভোট ১৫৫ জন কমিটি সদস্যকে বেছে নেওয়ার জন্য। নির্বাচিত সদস্যরা সংবিধান রচনার জন্য ৯ মাস সময় পাবেন। অতিরিক্ত হিসেবে আরও ৬ মাস সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। তারপর ২০২২ সালে আবার গণভোটের মাধ্যমে সেই সংবিধান গৃহীত বা বর্জিত হবে।

মাথা পিছু আয়ের ক্ষেত্রে লাতিন আমেরিকায় সবার আগে চিলি। কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বাসস্থানের পুরোটাই বেসরকারি নিয়ন্ত্রিত। ফলে বেশিরভাগের কাছে তা যথেষ্ট ব্যয়সাধ্য। এই অসাম্য ভাঙতে প্রয়োজন নতুন সংবিধান। রবিবার গণভোটে বিপুল সাফল্য পেল নতুন সংবিধানের দাবি। একইসঙ্গে লাতিন আমেরিকায় নতুন করে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেল বামপন্থা, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Comments are closed.