কোপ মিডল র‍্যাঙ্কে: অথচ ১৮ শতাংশ নিয়োগ বৃদ্ধি দেশের প্রথম ৫ আইটি সংস্থায়, কম বয়সীতে জোর

যে কোনও সেক্টরে চাকরি প্রার্থীর অভিজ্ঞতাকে বরাবরই অগ্রাধিকার দিয়ে আসা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা যত ধারালো হবে প্রার্থীর বেতন থেকে প্রোমোশন তত সহজ হবে, এমনটাই সবাই ধারণা করেন। কিন্তু বর্তমান তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রার্থী নিয়োগের দিকে চোখ রাখলে ঠিক উল্টো ছবি উঠে আসছে। এ দেশের শীর্ষস্থানীয় আইটি সংস্থাগুলিতে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাড়ছে কম বয়সী কর্মী নিয়োগ। পক্ষান্তরে, ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মধ্যবয়স্ক ও মিডল র‍্যাঙ্কের কর্মীদের ছাঁটাই করে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, অভিজ্ঞতার বিচারে কোনও চাকরি প্রার্থীর এগিয়ে থাকার গতানুগতিক ধারণা ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস), ইনফোসিস, এইচসিএল, উইপ্রো এবং টেক মাহিন্দ্রা চলতি আর্থিক বছরের প্রথমার্ধে কর্মী নিয়োগ ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এবছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর, প্রথম ছ’মাসে এই পাঁচ আইটি সংস্থা মোট ৬৪ হাজার ৩৩২ জন কর্মী নিয়োগ করেছে। গত আর্থিক বছরের প্রথম ছ’মাসে এই সংখ্যাটা ছিল ৫৪,৬৪২ জন। এঁদের বেশির ভাগই অল্পবয়স্ক।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইটি সংস্থাগুলি কলেজ ক্যাম্পাসিংয়ের মাধ্যমে ‘ফ্রেশ ট্যালেন্ট’ নিয়োগে আগ্রহী। তথ্য বলছে, এই বছর কলেজ ক্যাম্পাসিংয়ের মাধ্যমে ৩০ হাজার কর্মী নিয়োগ করেছে টিসিএস এবং ইনফোসিস করেছে ১৮ হাজার। সদ্য স্নাতক হওয়া ২০ হাজার ছেলেমেয়েকে চাকরি দিয়েছে উইপ্রো। যা কর্মসংস্থানের নিরিখে দেখলে নিঃসন্দেহে ভালো খবর। কিন্তু আর্থিক মন্দা ও সংস্থার কাঠামোগত পরিবর্তন করতে আইটি সংস্থাগুলি যে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে আনছে তাতে সবচেয়ে বেশি কোপ পড়ছে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ‘মিডল র‍্যাঙ্ক’ কর্মীদের উপর। বিভিন্ন তথ্যে দেখা যাচ্ছে, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চল্লিশোর্ধ্ব কর্মীরাই পড়ছেন সবচেয়ে অসুবিধায়।
কেন এই বৈপরীত্য? ন্যাসকমের এক রিপোর্ট বলছে, তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে আইটি ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে ৬০-৬৫ শতাংশ কর্মীর চাকরি প্রভাবিত হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আইটি সংস্থাগুলি ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৪০ লক্ষ কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হয়েছে। তাই একদিকে যেমন নতুন কর্মী নিয়োগ করে তাঁদের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ করা হচ্ছে, তেমনি গতানুগতিক অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাঁটাই হচ্ছে ‘স্কিল মিসম্যাচ’-এর কারণে। পাশাপাশি, নতুন কর্মী নিয়োগের আরও একটি বিশেষ কারণ হল, এঁদের তুলনামূলক কম বেতন দিতে হচ্ছে।
ন্যাসকমের আরও একটি রিপোর্ট বলছে, ভারতের ১৮ শতাংশ স্টার্ট-আপ বিজনেসে আধুনিক প্রযুক্তিতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এক কথায়, প্রায় ১,৬০০ সংস্থা এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিগ ডেটা এবং অ্যানালিটিক্সের উপর অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলত, একদিকে যেমন পুরনো কর্মীরা চাকরি খোয়াচ্ছেন, তেমনি বাড়ছে নতুনদের গুরুত্ব।

 

Comments are closed.