৪৫ হাজার কোটির সাবমেরিন প্রোজেক্টে শেষ মুহূর্তে আদানি গোষ্ঠীর নাটকীয় প্রবেশ

নৌ বাহিনীর ৪৫ হাজার কোটি টাকার সাবমেরিন প্রোজেক্টের জন্য বরাতের দৌড়ে শেষ মুহূর্তে ঢুকে পড়ল আদানি গোষ্ঠী। ফাইনাল বেল পড়ার ঠিক আগে নাটকীয়ভাবে আদানিদের প্রবেশ দেখে হতবাক অন্যান্য অংশগ্রহণকারী সংস্থা। নরেন্দ্র মোদীর মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের অন্তর্গত এই সাবমেরিন প্রোজেক্টকে সামরিক ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় চুক্তি হিসেবে ধরা হচ্ছে।

বরাত পাওয়ার দৌড়ে প্রথম থেকেই রয়েছে লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো (এল অ্যান্ড টি), মাঝগাঁও ডক লিমিটেড, রিলায়েন্স নেভলের মতো সংস্থাও। আদানি গোষ্ঠীর নিজস্ব শিপইয়ার্ড নেই। আর ঠিক এই কারণেই সাবমেরিন প্রোজেক্টে গৌতম আদানির শেষ মুহূর্তে ঢুকে পড়ায় হতবাক প্রতিযোগী সংস্থাগুলো।

সূত্রের খবর, আদানি গোষ্ঠী এই প্রকল্পের জন্য হিন্দুস্থান শিপইয়ার্ড লিমিটেডের (এইচএসএল) সঙ্গে যৌথভাবে স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি) তৈরি করতে পারে। সাবমেরিন মেরামতির অভিজ্ঞতা রয়েছে সরকারি সংস্থা এইচএসএলের। তবে মজার ব্যাপার হল, সাবমেরিনের বরাত পাওয়ার দৌড়ে রয়েছে এইচএসএলও।

এর আগে আদানি গোষ্ঠী দেশের ৬ টি বিমানবন্দর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের বরাত পেয়েছে। বিমানবন্দর পরিচালনার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও আদানি গোষ্ঠীর বরাত পাওয়ার তীব্র বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি অবধি লিখেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। কিন্তু আদানিদের বরাত পাওয়া আটকায়নি।

অবশ্য ডুবোজাহাজের বরাতে অংশ নেওয়া নিয়ে আদানি গোষ্ঠীর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যদিও এই বরাতে অংশ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদানি গোষ্ঠী ভারতীয় সামরিক বাহিনীর জন্য ভবিষ্যতে যুদ্ধ বিমান, নৌ সেনার হেলিকপ্টার এবং ডুবোজাহাজ, এই তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র চুক্তির দাবিদার হয়ে উঠল।

সূত্রের খবর, এই সাবমেরিন প্রোজেক্ট এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এই প্রোজেক্টে নৌ বাহিনীর জন্য ৬ টি সাবমেরিন তৈরি করা হবে। এজন্য একটি ভারতীয় সংস্থাকে বেছে নেওয়া হবে। যারা বিদেশি পার্টনারদের সঙ্গে মিলে ভারতেই ডুবোজাহাজগুলো তৈরি করবে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আগামী দু’মাসের মধ্যে বরাত প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলবে। তবে বরাত ঘোষণা হতে দু’বছর পেরিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, শেষ মুহূর্তে এই বরাতে অংশ নেওয়ার মধ্যে দিয়ে আদানি ডিফেন্স অ্যান্ড এরোস্পেস দেশের গুটিকয় সংস্থার বিগ লিগে ঢুকে পড়ল, যারা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত।

শুধু প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রই নয়, দেশের খনি শিল্পেও আদানি গোষ্ঠীর অংশীদারি ক্রমবর্ধমান। অভিযোগ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিসগঢ়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় বনভূমি সাফ করে খনি প্রকল্পের নির্মাণ চালাচ্ছেন গৌতম আদানি। এমনকী আদিবাসী অধ্যুষিত বনভূমিতে খনির কাজ চালাতে আদানি গোষ্ঠী প্রশাসনকেও নিয়ন্ত্রণ করছে বলেও অভিযোগ উঠছে। আদানিদের খনি প্রকল্পের বিরোধিতা করে দান্তেওয়াড়ায় আদিবাসী বিক্ষোভের মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে ছত্তিসগঢ় সরকার। খনির কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছে আদানি গোষ্ঠীকে। এবার সেই আদানি গোষ্ঠীর নাটকীয় এন্ট্রি সামরিক ক্ষেত্রে।

Comments are closed.