করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করয়েছে পতঞ্জলি, এই অভিযোগে রামদেবের সংস্থাকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা মাদ্রাজ হাইকোর্টের

করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের মনে আতঙ্ককে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করছে পতঞ্জলি। এই অভিযোগে রামদেবের সংস্থাকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে পতঞ্জলির তৈরি ‘করোনিল’ নাম ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

চেন্নাইয়ের আরুদ্রা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিডেট নামে একটি সংস্থা মাদ্রাজ হাইকোর্টে অভিযোগ করে, ‘CORONIL-92 B’ নামে তাঁদের একটি অ্যাসিড ইনহিভিটর রয়েছে, যা শিল্প উৎপাদনের নানা কাজে লাগে। সেই নামের অ্যাসিড ইনহিভিটরটির ট্রেডমার্ক তাঁদের নেওয়া রয়েছে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ট্রেডমার্ক আইনের তোয়াক্কা না করে ওই নামেই করোনার ওষুধ দাবি করে বাজারে ‘করোনিল’ নিয়ে আসে পতঞ্জলি। মামলায় এও দাবি করা হয় মানুষের আতঙ্কের সুযোগ নিয়ে করোনাভাইরাস সারিয়ে দেওয়ার ভুয়ো দাবি করেছে পতঞ্জলি। এই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার মাদ্রাজ হাইকোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়ে পতঞ্জলি সংস্থা।এরপরেই ট্রেডমার্ক আইনে পতঞ্জলিকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি সিভি কার্তিকেয়ন।

আদালত জানিয়েছে জরিমানার টাকা আগামী ২১ অগাস্টের মধ্যে আদিয়ার ক্যানসার রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং অরুম্বক্কমের গভর্নমেন্ট যোগা অ্যান্ড নেচারোপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দিতে হবে।

গত ১৭ জুলাই মাদ্রাজ হাইকোর্ট পতঞ্জলি আয়ুর্বেদকে এই ট্রেডমার্ক ব্যবহার করতে নিষেধ করে অন্তর্বর্তী রায় দিয়েছিল এই পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতেই। আদালত লক্ষ্য করে বিবাদীপক্ষ যে নামটি ব্যবহার করছে তার বানান পর্যন্ত অভিযোগকারী সংস্থার অনুরূপ।বৃহস্পতিবার মাদ্রাজ হাইকোর্ট এও জানায়, বাজারে আনার সময় করোনিল কে করোনাভাইরাসের ওষুধ হিসাবে প্রচার করেছিল পতঞ্জলি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত করোনার কোনও প্রতিকারের কথা জানা যায়নি।

প্রসঙ্গত, সারা পৃথিবীর তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা করোনার প্রতিষেধক খুঁজছেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে আশাজনক ফল মিললেও এখনও ১০০ শতাংশ নিশ্চয়তা নিয়ে কোনও ওষুধ বা প্রতিষেধক বাজারে আসেনি। আর সেই সুযোগেই যোগগুরু রামদেবের সংস্থা ‘পতঞ্জলি’ ঘোষণা করেছিল, তারা এনেছে করোনার আয়ুর্বেদিক ওষুধ ‘করোনিল’। যা খেলে করোনা যেমন এক সপ্তাহের মধ্যে করোনা রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু এর কোনও তথ্যপ্রমাণ দেওয়া তো দূর, এই ওষুধের জন্যে কোনও অনুমতিও নেয়নি পতঞ্জলি। পরে আয়ুষ মন্ত্রক পতঞ্জলির করোনিলের বিজ্ঞাপন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। এফআইআর’ও দায়ের হয় পতঞ্জলির প্রতিষ্ঠাতা রামদেবের বিরুদ্ধে। এরপর বাধ্য হয়ে পতঞ্জলি জানায়, করোনা রুখতে কোনও ওষুধ তাঁরা আবিষ্কার করেনি। বৃহস্পতিবার মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়ে আরও চাপে পড়ল পতঞ্জলি।

এবারই অবশ্য প্রথম নয়, গত মার্চ মাসেই রামদেবের সংস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছিল ন্যাশনাল অ্যান্টি প্রফিটিং অথরিটি (এনএএ)। পতঞ্জলি আয়ুর্বেদকে ৭৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয় সেই সময়। নিয়ম লঙ্ঘন করে ক্রেতাদের পণ্য পরিষেবা করের (জিএসটি) সুবিধা দেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে রামদেবের সংস্থার বিরুদ্ধে।

 

Comments are closed.