বিধানসভার ঢাকে কাঠি: অমিত শাহকে একযোগে জবাব তৃণমূল-রাজ্য সরকারের

সামগ্রিক কোভিড ও আমপান পর্বে চুপ থাকার পর মঙ্গলবারই বাংলায় আসন্ন বিধানসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সদ্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। এবার অমিত শাহের ভার্চুয়াল জন সংবাদ সভা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নথি তথ্য তুলে ধরে সেই মন্তব্যকে খণ্ডন করল তৃণমূল এবং রাজ্য সরকার।

মঙ্গলবার বিকেল ৪ টেয় ওয়েবিনারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন, রাজ্যসভা সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী এবং রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। উদ্দেশ্য ছিল কিছুক্ষণ আগেই ভার্চুয়াল সভায় বাংলার প্রতি যে সমস্ত অভিযোগ অমিত শাহ করেছেন, তার জবাব দেওয়া।

ভার্চুয়াল সভা থেকে অমিত শাহ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে কিসান সম্মান নিধি, শৌচাগার নির্মাণ থেকে বিদ্যুৎ পরিষেবা কিংবা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, রাজনৈতিক হিংসা, প্রায় সব ক্ষেত্রেই মমতা সরকারকে বিঁধেছিলেন। এবার তারই জবাব দিল তৃণমূল এবং রাজ্য সরকার।

রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের অভিযোগ অমিত শাহ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে গেলেন। কী মিথ্যা তা বোঝাতে গিয়ে অমিত মিত্র বলেন, ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর মমতা ব্যানার্জি রাজ্যবাসীর জন্য স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছিলেন। ২০১৮ সালে এই প্রকল্প থেকেই টুকে নামানো হয় আয়ুষ্মান ভারত। কিন্তু তারপরই ধরা পড়ে গেল, মন্তব্য রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর।

অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, দেশে ১০ কোটি শৌচাগার তৈরি হয়ে গিয়েছে। অমিত মিত্রের পাল্টা দাবি তৈরি হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৪৩ লক্ষ। এখানেও মিথ্যা বলা হয়েছে বলে দাবি তাঁর।

অমিত শাহ অভিযোগ করেছিলেন, বাংলায় বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। তারও জবাব দিয়েছেন অমিত মিত্র। তিনি বলেন, ২০১১ সালে রাজ্যে ৭৫ লক্ষ উপভোক্তা ছিল। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২ কোটি। বাংলায় লোডশেডিং হয় না এবং বাংলাই একমাত্র রাজ্য যেখানে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মমতা সরকার প্রতিনিয়ত গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুতের কাজ করেছে তাই আজ বাংলায় বিদ্যুতের কোনও সমস্যা নেই, দাবি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর।

অমিত শাহ মঙ্গলবারই দাবি করেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে প্রচুর আর্থিক সাহায্য করেছে। অমিত মিত্র বলেন, কেন্দ্রের কাছে এই মুহূর্তে রাজ্যের বকেয়া ৫৩ হাজার কোটি টাকা। সেই টাকা মিলবে কবে?

পাশাপাশি অমিত মিত্রের অভিযোগ, আর্থিক প্যাকেজের নামে ভারতবাসীর সঙ্গে নিষ্ঠুর রসিকতা করেছে মোদী সরকার। তাঁর দাবি, মোদী নিজে প্যাকেজকে জিডিপির ১০ শতাংশ বললেও এখন অর্থনীতিবিদদের মধ্যে জোর তর্ক চলছে, এই প্যাকেজকে জিডিপির ১ শতাংশও বলা যায় কিনা, তা নিয়ে।

রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ, পরিযায়ী শ্রমিকদের যেমন এক টাকাও দেয়নি কেন্দ্র, তেমনই ওই প্যাকেজে বড় মুখ করে বলা এমএসএমইকেও এক টাকা দেওয়া হয়নি।

ডেরেক ওব্রায়েন এদিন ফের একবার কেন্দ্রীয় অব্যবস্থার অভিযোগ করেন। বলেন, মোদী সরকারের অপরিকল্পনার মাসুল গুনছেন দেশের কোটি কোটি গরিব মানুষ। লকডাউন শুরুর ৫০ দিন পর কেন শ্রমিকদের পৌঁছে দেওয়ার কথা মনে পড়ল মোদী সরকারের, প্রশ্ন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতার। পাশাপাশি রাজ্যে বেকারত্বের হার জাতীয় গড়ের চেয়ে কম কিংবা বিজেপি শাসিত প্রদেশগুলোর চেয়ে কম, তাও এদিন জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা।

অমিত শাহ সিএএ এর বিরোধিতার ফল মমতাকে পেতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মাত্র কয়েকঘণ্টা আগে। তৃণমূলের তরফে তারও জবাব দেওয়া হয়েছে। ডেরেক ওব্রায়েনের দাবি, আইন পাস হওয়ার পর বিধি প্রণয়নের জন্য ৬ মাস সময় থাকে। সিএএ এর ক্ষেত্রে সেই ৬ মাসের সময়সীমা এই সপ্তাহেই শেষ হচ্ছে কিন্তু বিধি প্রণয়ন হয়নি। এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আরও ৬ মাস সময় চাইবে। ফলে তা পৌঁছবে ডিসেম্বরে। সিএএ নিয়ে বিজেপি নোংরা রাজনীতির খেলা খেলছে। ডেরেকের কথায়, বিজেপির কেবল ভোটের খিদে।

এদিন আরেক তৃণমূল সাংসদ দিনেশ ত্রিবেদী অমিত শাহের কাছে প্রস্তাব দেন, একটি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অমিত মিত্রের সঙ্গে অর্থনীতি নিয়ে বিতর্কে নামতে। তাহলেই সবার কাছে সাফ হয়ে যাবে, কে সত্যি।

Comments are closed.