নতুন পেশার যুব-শ্রমিকদের আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়াই আজ সবচেয়ে জরুরি কাজ

আমাদের দেশে অনেক সমস্যার মধ্যে অন্যতম বেকারি। প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে বেকারি বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ২০১২ সালে দেশে জনসংখ্যা ছিল ১২৩ কোটি। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১২৮ কোটি, আর এই মুহূর্তে ২০১৮ সালে তা ১৩৩ কোটি।
২০০৭ সালে দেশে বেকারির হার ছিল ৩.৭ শতাংশ। ধীরে ধীরে বেড়ে ২০১৮ সালের জুন মাসে তা হয়েছে ৫.৩ শতাংশ। কিন্তু এই বেকারির মধ্যেও এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে যুব বেকারির হার। যুব সমাজের মধ্যে বেকারির হার অনেকটাই বেশি।

দেশের যুব বেকারির হার

২০০৭ সালে ৮.৮ শতাংশ
২০১০ সালে ১০.১ শতাংশ
২০১২ সালে ১১ শতাংশ
২০১৪ সালে ১০.৭ শতাংশ
২০১৬ সালে ১০.২ শতাংশ

এই মোট বেকারির মধ্যে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী মহিলাদের অবস্থা আবার আরও খারাপ। শহরে এবং গ্রামে বেকারির হারে ফারাক থাকলেও, মহিলারাই কাজ না পাওয়ার তালিকায় বেশি।
সরকারি সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে প্রতি হাজারে গড়ে ৫০ জন বেকার। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি হাজারে শহরে বেকার ৫৬ জন, গ্রামে ৪৭ জন।
সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আমাদের দেশে পূর্ণ বেকারের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এর সঙ্গে রয়েছেন অর্ধ বেকার, যাঁরা সারা বছর কাজ পান না, কিংবা খুবই কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হন। শহর ও গ্রামে এই সংখ্যাটা প্রায় ১৩ কোটি।
বেকারির যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অবশেষে একটা কাজ হয়তো যাঁরা জোগাড় করতে পেরেছেন, তাঁরাও আজ শান্তিতে নেই। দুনিয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন-নতুন ধরনের নানা কাজ। এই সব জায়গায় নানা অসুবিধে, মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিটি শিল্পে, পরিষেবায় এই নানাবিধ নতুন কাজে যুক্ত হওয়া যুব কর্মীদের প্রতিদিন বহু সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে। তাঁদের দৈনিক কাজের সময়ের কোনও ঠিক নেই। পিএফ, ইএসআই, বোনাস, গ্রাচুইটির মতো সামাজিক কোনও সুরক্ষা নেই। অধিকাংশেরই কোনও নিয়োগ পত্র নেই। ইউনিয়ন করার অধিকার নেই। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করার কিংবা ছাঁটাই হলে সরকারি দফতরে অভিযোগ পর্যন্ত জানানোর অধিকার পান না তাঁরা।
অসংগঠিত ক্ষেত্রের লক্ষ-লক্ষ যুব কর্মী আজ নানাবিধ নতুন পেশায় যুক্ত। এর মধ্যে একদিকে যেমন রয়েছেন হকার, দোকানের কর্মী, অটো, ট্যাক্সি, বাস চালক, ঠিকা শ্রমিক, নিরাপত্তা রক্ষী, দর্জি, সাইবার ক্যাফে, বিউটি পার্লারের কর্মী, তেমনই আছেন খাবারসহ বিভিন্ন সংস্থার ডেলিভারি বয় কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত ক্যাসেট ডেলিভারি বয়। নিজেদের মোটর সাইকেলে তাঁরা সারাদিন ধরে রাজপথে চষে বেড়ান। মাইনে খুবই কম। সামান্য কমিশন। সময় মতো ডেলিভারি করতে না পারলে তাও কাটা যায়। এই অসংগঠিত শ্রমিকদের ৮০ শতাংশের বেশি সমস্তরকম সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের বাইরে। এঁদের কারও কোনও পরিচয় পত্র নেই। পুলিশি হয়রানি সহ্য করে কাজ করতে হয়। অথচ দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী সমস্ত সুবিধেই তাঁদের পাওয়া উচিত।
এই অবস্থায় আমরা কি চুপ করে বসে থাকব? আমরা কি প্রতিবাদ করব না? চেষ্টা করব না তাঁদের সংগঠিত করার?
কোনও শ্রমিক আইনের সুবিধে না পাওয়া এই লক্ষ-লক্ষ শ্রমিকের স্বার্থেই, তাঁদের আমাদের সংগঠিত করতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই তরুণ শ্রমজীবীদের নিয়ে আমাদের সংগঠন। তাঁদের প্রতিদিনের সমস্যা, যন্ত্রণা, শোষন, বঞ্চনার কাহিনী শুনব আমরা। উদার অর্থনীতির চাপে নিজের এবং পরিবারের দায় ও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক অন্যায়, অপমান সহ্য করেও কাজ করতে হচ্ছে এই যুব-শ্রমিকদের। কিন্তু এই প্রতিবাদহীন পথ চলা আর কত দিন? আসুন আমাদের কনভেনশনে। আপনার কথা আপনি বলুন। অন্যরা শুনুক। অন্যরা বলুক, আপনি শুনুন। আমাদের বলুন আমরা কীভাবে আপনাদের সাহায্য করতে পারি। সবাই সংগঠিত হলে, একত্রিত হলে তবেই এই শোষন, বঞ্চনা থেকে বেরোতে পারব সবাই। আমরা বলব, কী কী সুবিধে শ্রমিক আইন অনুযায়ী আপনারা পেতে পারেন। তা জেনে রাখা দরকার আছে সবার।
সিটু কলকাতা জেলা কমিটির তরুণ শ্রমজীবীদের নিয়ে এই কনভেনশন সংগঠিত করার উদ্দেশ্য-ট্রেড ইউনিয়নে জেনারেশন গ্যাপ দূর করা, নতুন ভাবনার সঞ্চার করা এবং সামগ্রিক ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে আরও বেশি শক্তিশালী করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

Leave A Reply

Your email address will not be published.