চিফ ভিজিল্যান্স কমিশনার নিয়োগে কি নিয়মভঙ্গ? প্রশ্ন, জল্পনা মোদী সরকারের ভূমিকায়

সিভিসি নিয়োগ নিয়ে অভূতপূর্ব ঘটনা প্রবাহের সাক্ষী হল দেশ। সার্চ কমিটির অন্যতম সদস্য তথা বর্তমান অর্থসচিব রাজীব কুমারকে পরবর্তী সিভিসি নিয়োগের প্রয়াসে বিতর্কের শুরুবাদ। কিন্তু তখন কে জানত বিতর্কের দ্বিতীয় অঙ্কে অপেক্ষা করছে আরও বড় নাটক। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বৈঠকে উচ্চ বাদানুবাদের পর রাজীব কুমারের নাম বাদ যায় বটে কিন্তু কার্যত আকাশ থেকে পড়ে আরও একটি নাম, তিনি সঞ্জয় কোঠারি।

 

ভিজিল্যান্স কমিশনারের কাজ কী?

সরকারের অন্দরের দুর্নীতি ধরাই প্রধান কাজ। সরকারি কাজে কোনও দুর্নীতি বা অনৈতিকতার অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত করবে ভিজিল্যান্স বিভাগ। সেই বিভাগের প্রধান চিফ ভিজিল্যান্স কমিশনার বা সিভিসি।

 

কোন কোন পদে নিয়োগ?

১. চিফ ভিজিল্যান্স কমিশনার বা সিভিসি

২. ভিজিল্যান্স কমিশনার বা ভিসি

৩. মুখ্য তথ্য কমিশনার বা সিআইসি

৪. তথ্য কমিশনার বা আইসি

 

সমস্যা কোন পদে নিয়োগ নিয়ে?

মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার বা সিভিসি নিয়োগ নিয়েই সমস্যার সূত্রপাত। নিয়ম অনুযায়ী সিভিসি ও ভিসি বাছাই করবে কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটি। সেই সার্চ কমিটির সুপারিশ পৌঁছবে উচ্চ পর্যায়ের কমিটির কাছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটিতে থাকেন প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং লোকসভায় সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের নেতা। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি সার্চ কমিটির সুপারিশ থেকে একটি নাম বেছে নেবে।

 

সার্চ কমিটির সুপারিশে সমস্যা কেন?

কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বের সার্চ কমিটির একজন অন্যতম সদস্য ছিলেন অর্থসচিব রাজীব কুমার। ক’দিন আগেই তিনি সেই কমিটি থেকে ইস্তফা দেন। তারপরই দেখা যায় রাজীব কুমারের নাম উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির কাছে সিভিসি হিসেবে সুপারিশ করে পাঠিয়েছে সার্চ কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির বৈঠকে এনিয়ে তীব্র আপত্তি তোলেন কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী।

 

অধীরের আপত্তির পর?

অমিত শাহ রাজীব কুমারের নাম করা মাত্রই আপত্তি তোলেন অধীর। বহরমপুরের সাংসদের যুক্তি মেনে নেন প্রধানমন্ত্রী। অনিয়ম করা যাবে না বলেন মোদী। তারপর নিজের ট্যাঁক থেকে বের করেন সঞ্জয় কোঠারির নাম। ঘটনাপ্রবাহের আকস্মিকতায় হতবাক অধীর চৌধুরী।

 

কে সঞ্জয় কোঠারি?

বর্তমানে এই আইএএস অফিসার রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের সেক্রেটারি পদে রয়েছেন। সঞ্জয় কোঠারি নিজে এই পদের জন্য আবেদনও করেননি।

 

তাহলে সিভিসি হচ্ছেন কে?

উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির তিন সদস্য। তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্থাৎ ২ জন যেদিকে মত দেবেন, তিনিই দায়িত্ব পাবেন। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সুপারিশ সঞ্জয় কোঠারির নামে সমর্থন দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। স্বভাবতই দেশের পরবর্তী সিভিসি হতে চলেছেন ১৯৭৮ সালের হরিয়ানা ক্যাডারের আইএএস অফিসার সঞ্জয় কোঠারি।

 

বিরোধীদের আপত্তি কোথায়?

প্রথমত, সার্চ কমিটির সদস্য নিজে কীভাবে সিভিসি পদের জন্য আবেদন করেন?

দ্বিতীয়ত, প্রতিবাদের মুখে সেই আবেদন বাতিল হলে কীভাবে নিয়মের তোয়াক্কা না করে পদের জন্য আবেদন না করা একজনকে সেই পদের মনোনয়ন দেওয়া হয়?

বিরোধীদের প্রশ্ন, কোন দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে এত মরিয়া হয়ে উঠেছেন নরেন্দ্র মোদী যে নিয়ম-কানুনের অবধি তোয়াক্কা করছেন না!

Comments are closed.