কোভিড ১৯ এর জেরে থমকে গিয়েছে দেশ। অভূতপূর্ব পতন অর্থনীতিতে। আর এই সূত্র ধরেই দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলছে ছাঁটাই। আর যেখানে ছাঁটাই হচ্ছে না সেখানে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বেতন। যার ব্যতিক্রম নয় সংবাদমাধ্যমও।
দ্য হিন্দু থেকে শুরু করে দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া কিংবা এনডিটিভি, ইতিমধ্যেই বহু সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে কর্মীদের। এবার সেই আঁচ এসে পড়ল বাংলার সংবাদমাধ্যমেও। সূত্রের খবর, আনন্দবাজার পত্রিকা, এই সময় এবং আজকাল পত্রিকায় কর্মীদের বেতনে কোপ পড়েছে।
দেশের অন্যতম বড় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠী। প্রতি বছরই পয়লা বৈশাখে আনন্দবাজার পত্রিকার কর্মীদের ইনক্রিমেন্ট ও প্রোমোশন দেওয়া হয়। কিন্তু এপ্রিলের শুরুতে সংস্থার পক্ষ থেকে ই-মেইল করে কর্মীদের জানানো হয়েছিল, এবছর ইনক্রিমেন্ট, প্রমোশন বন্ধ। এবার সেখানেই আটকে না থেকে একটি নির্দিষ্ট অংকের বেশি টাকা যাঁরা বেতন পান তাঁদের বেতনে কমানো হল। সূত্রের খবর, যে সমস্ত কর্মীর বাৎসরিক বেতন ১২ লক্ষ টাকা কিংবা তার বেশি, তাঁদের অধিকাংশেরই বেতন কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা কর্তৃপক্ষ।
বাংলার সবচেয়ে বড় সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠীর মতোই বেতন কমানোর রাস্তায় হেঁটেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মিডিয়া গোষ্ঠী বেনেট কোলম্যানও। আগেই জানা গিয়েছিল, বেনেট কোলম্যানের দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া খবরের কাগজের কর্মীদের বেতন কাটা হচ্ছে। এবার টাইমস গ্রুপেরই বাংলা সংবাদপত্র এই সময়ের কর্মীদেরও বেতনে কোপ পড়ছে। সূত্রের খবর, এই সময়ের কর্মীদের মূল বেতনের প্রায় ৫ শতাংশ এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধার প্রায় ৮ শতাংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, টাইমস অফ ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর বাংলা খবরের কাগজ এই সময়ের কর্মীদের বেতন এবং আর্থিক সুবিধের প্রায় ১৫ শতাংশ কমানো হচ্ছে। আনন্দবাজারের সঙ্গে এই সময়ের মূল পার্থক্য হল, আনন্দবাজারে একটি নির্দিষ্ট অংকের ওপরে যাঁদের বেতন তাঁদের স্যালারি কাট হয়েছে, কিন্তু এই সময়ের ক্ষেত্রে বেতন কমছে প্রতিটি কর্মীরই।
বেতনে কোপ পড়েছে আর এক জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপত্র আজকালেও। জানা গিয়েছে, আজকালের কর্মীদের বেতন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বেতন কমানো হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। কিন্তু আজকালের কর্মী ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তাঁদের হুঁশিয়ারি, এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হলে, তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
মার্চের শেষে লকডাউন শুরু হতেই বিভিন্ন ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানে এর প্রভাব পড়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্র থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের চাকরিতেই কর্মী সংকোচন, বেতন হ্রাস, বিনা বেতনে ছুটি শুরু হয়ে গিয়েছে। বাংলায় আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে শুরু করে দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া বা দ্য হিন্দুর মতো ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানেও এবার তার প্রভাব পড়তে শুরু করল।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরই গুজব রটেছিল খবরের কাগজের পাতার মধ্যে দিয়ে করোনা সংক্রমিত হতে পারেন মানুষ। এর জেরে সাময়িকভাবে বাংলা এবং দেশের সর্বত্র খবরের কাগজ প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর ফের সংবাদপত্র বিলি বণ্টন শুরু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাগজের বহর কমে গিয়েছে অনেকটাই।
Comments are closed.