Coronavirus Pandemic: বিশ্বজুড়ে মন্দির-মসজিদ-গির্জায় চিরাচরিত ধর্মীয় আচার-আচরণেও বদল

মাত্র একটি মারণ ভাইরাসের আতঙ্ক, সেটাই আজ বিশ্বজুড়ে মানুষের বিশ্বাস, সৌজন্য বিনিময় এমনকী খাদ্যাভাসে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের একশোরও বেশি দেশে করোনাভাইরাসের হানায় মৃত্যু ছাড়িয়েছে সাড়ে চার হাজার, প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত।
কীভাবে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, স্বাভাবিক চলাফেরায় করোনাভাইরাস থাবা বসিয়েছে?
করোনা সংক্রমণের ভয়ে সাবধানতাবশতঃ অনেকেই ভ্রমণের পরিকল্পনা নিজে থেকে বাতিল করে দিচ্ছেন। কোনও কোনও সংস্থা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশে কর্মীদের পাঠাচ্ছেন না ব্যবসায়িক অসুবিধা সত্ত্বেও। হাত মেলানোর মাধ্যমে যে সৌজন্য বিনিময় হত, ভাইরাসের আশঙ্কায় সেটাও বাদ রাখছে মানুষ। আচার-অনুষ্ঠানের জমায়েত থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। মন্দির, মসজিদ, গির্জায়ও করোনা আতঙ্কে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ, মানুষের এতদিনকার ধর্মীয় আচার-অভ্যেসও যেন হঠাৎ বদলে গিয়েছে শুধুমাত্র একটি ভাইরাসের আতঙ্কে।

হিন্দু ধর্মে করোনার প্রভাব
হিন্দুদের উল্লেখযোগ্য উৎসব হোলির সময়ই করোনার থাবায় বদলে গিয়েছে বসন্তের আগমনে রঙ খেলার চেনা ছবি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে কোনও বড় জমায়েত থেকে তিনি দূরে থাকছেন। এবার হোলি উৎসবেও অংশ নিচ্ছেন না। ইস্কন মন্দিরের প্রাচীন দোল উৎসব মুলতুবি ছিল। বিদেশি ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের মন্দিরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, যা ইস্কনের প্রাচীন ঐতিহ্যের বিপরীত। তবু জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষকে। হোলি উৎসবে বিশ্বের নানা প্রান্তে মুখে মাস্ক লাগিয়ে রঙ খেলতে দেখা গিয়েছে মানুষকে। এই মারণ ভাইরাসের আতঙ্কে বারাণসীতে বিশ্বনাথ মন্দিরের বিগ্রহও পুরোহিতরা ঢেকে দিয়েছেন মুখোশে। করোনা আতঙ্কে দূর থেকে পুণ্যার্থীদের পুজো নিবেদন করতে বলছেন পুরোহিতরা। বিভিন্ন মন্দিরেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বড় ভক্ত সমাগম আটকানোর চেষ্টা করছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। ভক্তদের পুজো নিবেদনের সময়েও সজাগ পুরোহিতরা।

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের উপর করোনা প্রভাব
যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পুণ্যার্থী জড়ো হন, মুসলিমদের পবিত্র ধর্মীয় স্থান সেই মক্কাতেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। মক্কায় ওমরাহ বন্ধ করার পাশাপাশি মদিনাতেও প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কাবা মসজিদ, মদিনাতে বিদেশি পুণ্যার্থীদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে করোনাভাইরাস এড়াতে। সৌদি আরবে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মুসলমান উমরাহ ও হজ পালন করতে যান। করোনাভাইরাস এড়াতে ভিসা থাকা সত্ত্বেও করোনা আক্রান্ত দেশের বাসিন্দাদের সৌদি আরবে প্রবেশ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দুই ইরানবাসী শিয়া মসজিদের পবিত্র গেটে চুমু দিয়ে ঘোষণা করেন তাঁরা করোনাভাইরাস নিয়ে ভীত নন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিয়োয় তাঁদের বক্তব্য, ঐশ্বরিক শক্তির কাছে কোনও অসুখ-বিসুখ টিকতে পারে না। যদিও এই কাজের জন্য দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়।
বিশ্বব্যপী প্রচুর মুসলিম স্বীকার করেছেন করোনা আতঙ্কে তাঁদের দৈনন্দিন ধর্মীয় আচারে কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম করোনায় আক্রান্তের খবরে মৌলবিরা শুক্রবারের নামাজের সময় জড়ো হওয়া পুণ্যার্থীদের করোনাভাইরাস সম্পর্কে সজাগ করছেন। মসজিদে একে অপরকে গলাগলি করা, জড়িয়ে ধরা, হাত মেলানোর মতো যে সৌজন্যমূলক আচরণ করা হত, তা এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে মুসলিমদের। এমনকী নামাজ পড়ার জন্য নিজের নিজের মাদুর আনার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মসজিদে।

খ্রিস্টানদের উপর করোনার প্রভাব
করোনাভাইরাস শঙ্কার মধ্যে পোপ ফ্রান্সিস যাজকদের উদ্দেশে ঘোষণা করেছেন, অসুস্থদের সেবা করার সাহস দেখাতে হবে। করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মেডিক্যাল টিম ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ইনি। তবে কোনওরকম ‘ফিজিক্যাল কনট্যাক্ট’ ছাড়া অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব থেকে করোনা আক্রান্তদের খোঁজ নেওয়া, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। ভ্যাটিক্যান সিটিতে প্রতি রবিবার নিয়ম করে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষকে সাবধান করছেন পোপ ফ্রান্সিস নিজে। এদিকে ঘানা থেকে আমেরিকা কিংবা ইউরোপের ক্যাথলিক চার্চে যে ভাবে মানুষ প্রার্থনা জানাতে জড়ো হত, তা অনেকটাই কমেছে। তা ছাড়া করমর্দন ছাড়াই গির্জায় প্রার্থনা করার কথা বলা হচ্ছে। প্রার্থনার সময় দূরত্ব নিয়ে বসছেন পুণ্যার্থীরা। কিন্তু গির্জায় যে সব চিরাচরিত প্রথা ও আয়োজন চলে আসছে তা অনেকটাই বদলে গিয়েছে বলে স্বীকার করছেন ফাদাররা। আমেরিকার জর্জটাউনের চার্চের রেক্টর করোনাভাইরাসের শিকার হওয়ার পর সেখানে যাওয়া প্রত্যেক পুণ্যার্থীকে সতর্ক করে আলাদা থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

Comments are closed.