শুভেন্দু যোগের মধ্যেই বিজেপির নয়া অস্বস্তির নাম শান্তনু ঠাকুর! কেন

বিধানসভা ভোটের আগে শুভেন্দু অধিকারীকে দলে টেনে উজ্জীবিত গেরুয়া শিবির। শুভেন্দুর মাপের সংগঠক তাঁদের দলে আসায় বাংলা দখলে আরও আত্মবিশ্বাসী বঙ্গ বিজেপি। এই আপাত সুখের আবহে গেরুয়া ব্রিগেডের নতুন মাথাব্যথার নাম শান্তনু ঠাকুর। বনগাঁর সাংসদের হালচাল মোটেই সুবিধার লাগছে না বিজেপি নেতৃত্বের। 

CAA এর মাধ্যমে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো বিজেপি। গত লোকসভা ভোটে এই প্রতিশ্রুতির কাঁধে ভর করে বনগাঁয় উড়েছিল গেরুয়া পতাকা। কিন্তু তারপর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো দিন। নাগরিকত্ব পাননি মতুয়ারা। যা ক্রমশ ক্ষোভের আকার নিচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। এই অবস্থায় বিগত কিছুদিন ধরেই বেসুরো বাজছেন বিজেপি সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর। বনগাঁয় দিলীপ ঘোষের সভায় যেমন তাঁকে দেখা যায়নি তেমনই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র শেখাওয়াতের অনুষ্ঠানেও গরহাজির ছিলেন তিনি। মতুয়াদের অসন্তোষের খবর পৌঁছয় বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র কানে। রেড রোডের অনুষ্ঠান থেকে কৈলাস বলেন, জানুয়ারির মধ্যেই নাগরিকত্ব প্রদানের কাজ শুরু করে দেবে ভারত সরকার। ঠাকুরনগর গিয়ে একথা বুঝিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু বরফ গলেনি। তাই ঠিক হয়েছিল অমিত শাহের দুদিনের বাংলা সফরের একটি দিন তাঁকে ঠাকুরবাড়ি এনে মতুয়াদের আশ্বাস দেওয়া হবে। কিন্তু শুভেন্দুর যোগদানের ঘটনা তাতে জল ঢেলেছে। 

এই পরিস্থিতিতে তোপ দাগলেন বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। রবিবার অমিত শাহ যখন শান্তিনিকেতন সফর করছেন, ঠিক তখন মালদায় মতুয়াদের ধর্মীয় মহাসম্মেলনে শান্তনু ঠাকুর বলেন, হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে উপেক্ষিত অংশ হল মতুয়ারা। তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে কোন সরকারই চেষ্টা করেনি। রক্ষা হয়নি কোনও প্রতিশ্রুতি। আমাদের দাবি অবিলম্বে CAA চালু করতে হবে। রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে মতুয়ারা বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলেও দাবি তাঁর। 

ভোটের আগে দলীয় সাংসদের এই হুঁশিয়ারিতে চাপে পড়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। কাকতালীয় হলেও ঠিক একই সময় বোলপুরে বসে অমিত শাহ জানিয়েছেন, টিকাকরণের পর CAA নিয়ে এগোনো হবে। ক্রনোলজি মোতাবেক CAA এর পর দেশব্যাপী NRC আসার কথা। কিন্তু CAA এর রুল ফ্রেমিং এখনও হয়নি। ফলে এই বিষয় নিয়ে কেন্দ্র কতটা সিরিয়াস তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়য়ের মধ্যে। অমিত শাহ নিজে এসে আশ্বাস দিলে হয়ত ক্ষোভের ক্ষতে সাময়িক প্রলেপ পড়ত কিন্তু সেটাও হয়নি। 

মুদ্রার উল্টোপিঠও আছে। সম্প্রতি গোপালনগরে বিশাল সমাবেশ করে মতুয়াদের পাশে থাকার কথা জানিয়ে গিয়েছেন মমতা। বলেছে, মতুয়ারা এই দেশেরই নাগরিক। নতুন সার্টিফিকেটের দরকার নেই। পাশাপাশি বিভিন্ন অনুদান থেকে শুরু করে সুযোগ সুবিধা। মমতা সরকার যে মতুয়াদের পাশে রয়েছে, তা বোঝাতে চেষ্টার কসুর করছে না শাসক দল। পরিস্থিতি এমন যে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন খোদ শান্তনু ঠাকুর। তারপরই শান্তনুকে তৃণমূলে আসার ডাক দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। 

শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে নতুন করে উজ্জীবিত বঙ্গ বিজেপি, তখন CAA ইস্যুতে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে মাথাব্যথা ক্রমেই বাড়ছে। ক্ষোভের আগুনে জল ঢালতে কী পদক্ষেপ নেয় গেরুয়া শিবির সেটাই সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন।

Comments are closed.