অশোক মিত্র আমার পিতৃবত। তাঁর কাছ থেকে বরাবর পুত্রস্নেহই পেয়েছি। বস্তুত অর্থনীতিকে বৃত্তি হিসেবে আমার বেছে নেওয়ার পেছনেও অশোক কাকার সরাসরি না হলেও একটা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। মনে হয় আমার বাবা অরুণ কুমার সরকার তাঁকে দেখেই নিজের ছেলেকে অর্থনীতি পড়ানোর অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
অশোক কাকার কাছে আমার ঋণ সব অর্থেই সীমাহীন। মনে আছে ১৯৭৯ সাল, আমেরিকা যাচ্ছি পিএইচডি করতে। কোনও একটা কারণে সেই সময়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ধর্মঘট চলছিল। তাই বিদেশি মুদ্রার ব্যবস্থা করতে পারছিলাম না। অথচ কিছু বিদেশি মুদ্রা না পেলেই নয়। কী মনে করে গেলাম অশোক কাকার কাছে। সবটা শুনে অশোক কাকা ফোন করলেন তাঁর পুরনো বন্ধু আই জি প্যাটেলকে। আই জি প্যাটেল তখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নার। বলাই বাহুল্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের হস্তক্ষেপে গিদেশি মুদ্রার ব্যবস্থা হয়ে গেল তখনই।
আমি পিএইচডি করে বিদেশ থেকে ফেরার পর পরই বাবা মারা গেলেন। সেই পারিবারিক সঙ্কটের সময় আমি এবং মা বিশেষভাবে অশোক কাকার ওপরে নির্ভর করেছি। পরে চাকরি করার সময়, বিশেষ করে কোথায় চাকরি করব, কোথায় চাকরি করা উচিত নয়, সব ব্যাপারেই অশোক কাকা পরামর্শ দিয়েছেন। কখনও তাঁর কথার অমান্য করিনি।
পরবর্তীকালে রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে অশোক কাকার সঙ্গে আমার একটা তফাত হয়েছিল। রাজনীতি নিয়ে আমার দু’একটা পপুলার লেখা তিনি অনুমোদন করেননি। কিন্তু এ নিয়ে কখনও তাঁর সঙ্গে মনোমালিন্যের প্রশ্নই ওঠেনি।
গত বছরও আমার ছেলে নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে অশোক কাকাকে প্রণাম করতে গিয়েছি। কিন্তু তাঁর ক্রমশ শারীরিক অবনতি দেখে খুবই খারাপ লাগত, কষ্ট হোতও। চোখে দেখতে পেতেন না, কানে শুনতে পেতেন না। তবু দেখেছি, আমার বাবার ব্যাপারে, বিশেষ করে বাবার কবিতা নিয়ে অশোক কাকার একটা আশ্চর্য ভাললাগা ছিল।
এই মুহূর্তে আমি কলকাতার বাইরে। তাই তাঁর শেষকৃত্যে যেতে পারব না। কিন্তু আমার পেশাগত এবং ব্যক্তি জীবনে অশোক কাকার অবদান কখনই ভোলার নয়।