কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা: কড়া আইন আনতে চলেছে অমিত শাহর নেতৃত্বাধীন কমিটি

কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কড়া আইন আনতে চলেছে কেন্দ্র। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি আটকাতে বেশ কিছু আইনি কাঠামো তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ অফ মিনিস্টারস (জিওএম)। সূত্রের খবর, যৌন হয়রানি মামলায় সংশোধিত হতে চলেছে একাধিক ফৌজদারি ধারা।
বছর দুয়েক আগে দেশজুড়ে #মিটু আন্দোলনের ঝড় ওঠে। অভিনেত্রী, গায়িকা থেকে সাংবাদিক, একাধিক ক্ষেত্রের মহিলারা কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির তীক্ত অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে আনতে শুরু করেন। এই পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে গঠিত হয় জিওএম। দ্বিতীয় মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সালের জুলাই মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে নতুন করে গঠন করা হয় গ্রুপ অফ মিনিস্টারস।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক পদস্থ আধিকারিক সূত্রে খবর, সুপ্রিম কোর্টের ১৯৯৭ সালের বিশাখা গাইডলাইন মেনেই কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার অপরাধের নয়া আইন তৈরি হবে। এই গাইডলাইন মেনেই ২০১৩ সালের আইন আনা হয়। কিন্তু সে আইনে কিছু সংশোধনের প্রস্তাব আনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ২০১৩ সালের আইনে বেশ কিছু ত্রুটি দেখা গিয়েছে। যেমন, কোনও আইনি প্রেক্ষাপট ছাড়াই সিভিল কোর্ট ক্ষমতা দেয় ইন্টারনাল কম্পেলেন্টস কমিটিকে (আইসিসি)। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে মালিক পক্ষকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হত। সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী, সংস্থায় কর্মরত মহিলা যদি কমিটির তদন্তের পরেও অপরাধীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি ধারায় মামলা করতে চান তাঁকে সাহায্য করতে হবে। এই আইনকে আরও কঠোর করার চিন্তাভাবনা করেছে কেন্দ্র।
জিওএম এর তরফে ২০১২ সালের নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যার প্রেক্ষিতে গঠিত বিচারপতি জে এস ভার্মা কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে। যেখানে বিচারপতি ভার্মা কমিটি আইসিসি-র জায়গায় এমপ্লয়মেন্ট ট্রাইব্যুনাল গড়ার জন্য সুপারিশ করেছিল। সংশ্লিষ্ট কমিটির মতে, আইসিসি-র তত্ত্বাবধানে ইন-হাউস অনেক সময় অভিযোগকারিণীর দাবিকে নিরস্ত করতে পারে। এই প্রেক্ষিতে আইন সংশোধনের জন্য দেশের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, শীর্ষ আমলা ও রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে আলোচনা করছে ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিপিআর অ্যান্ড ডি)। বিভিন্ন ফৌজদারি ধারার সংশোধন হলে মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতনের মামলারও সংশোধনী হবে।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, কর্মস্থলে মহিলাদের যৌন হয়রানিতে শীর্ষে রয়েছে রাজধানী দিল্লি। এরপরেই রয়েছে বেঙ্গালুরু, পুণে এবং মুম্বই। রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির অভিযোগ এসেছে কর্ণাটক থেকে। সংশ্লিষ্ট বছরে বিভিন্ন আশ্রম, হোম, অফিস এমনকী দেশজুড়ে জনসমক্ষে মোট ২০ হাজার ৯৬২ টি যৌন হয়রানির অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

Comments are closed.