বাঁকুড়া জেলার বিকনা সারা রাজ্যে মূলত ডোকরা গ্রাম বলেই পরিচিত। ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডোকরা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এই গ্রামের মানুষজন। প্রয়াত যুদ্ধ কর্মকার এই ডোকরার কাজের জন্য ১৯৮৮ সালে পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। মূলত মেটাল কাস্টিং-এর বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে প্রস্তুত হয় একটি সম্পুর্ণ কাজ। ঘর সাজানোর জিনিসের বাইরেও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরি করে ডোকরা শিল্প আবার রীতিমতো আশা জাগাচ্ছে গ্রামীণ কর্মসংস্থানে। মাঝে রীতিমতো সমস্যার মধ্যে ছিলেন ডোকরা শিল্পীরা। কিন্তু বিশ্ব বাংলার বিপণি থেকে শুরু করে বিদেশেও রপ্তানির মাধ্যমে বাঁকুড়ার এই বিকনা গ্রামই এখন আবার স্বয়ংসম্পুর্ণ।
বিকনা গ্রামে ডোকরা শিল্পীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন পীযূষ রানা। thebengalstory.com কে তিনি জানালেন, ডোকরাতে পিতল গলানোর কাজটি আগে মূলত করা হত ‘কয়লার ভাটিতে’। তবে এর ফলে পরিবেশ দূষণের হার অস্বাভাবাবিকভাবে বেড়ে যেত, যা শিল্পীদের পক্ষেও ছিল মারাত্মক ক্ষতিকারক। এর পর তাঁরা শিল্পীদের বোঝাতে শুরু করেন, গড়ে তোলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘আটচালা’। পীযূষবাবুর কথায়, ‘কয়লার ভাটি’-র জায়গায় তাঁরা এখন ব্যবহার করছেন ইলেকট্রিক বা গ্যাস ওভেন। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবেভাবে প্রায় ২৫০ জন যুবক, যুবতী-র কর্মসংস্থানও হয়েছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। পরিবেশবান্ধব এই চুল্লী ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সাধারণভাবে কয়লার ভাটিতে যেমন জায়গা লাগে অনেক বেশি, তেমন প্রয়োজন না হলেও একসঙ্গে অনেকটা পরিমাণ পিতল গলাতে হয়। নতুন এই ইলেকট্রিক চুল্লীতে সেই সমস্যা নেই। প্রয়োজনমাফিক পিতল গলানো যায়।
পীযূবাবু আরও জানালেন, ডোকরা থেকে শিল্পসামগ্রী তৈরী করা একটি দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি। প্রথমে মোমের ওপর নকশা তোলা হয়, এরপর দেওয়া হয় বালি এবং মাটির আস্তরণ। দু’ধরনের স্তর থাকে। প্রথমে লোনা মাটি, এরপর দ্বিতীয় স্তরে লোটা মাটি। তারপর পিতল গলিয়ে সেটি একটি ছিদ্র দিয়ে ঢেলে দেওয়া হয় মাটির ছাঁচে। তারপর মাটির ছাঁচটিকে বিশেষ পদ্ধতিতে ভেঙে দিয়ে পিতলের মূল শিল্পটি বের করে আনা হয়। যেহেতু অল্প পরিমাণ পিতল গলিয়ে এখন কাজ করা যাচ্ছে তাই বৈচিত্র অনেক বেশি হচ্ছে। নানা ধরনের গয়না, ঘর সাজানোর সামগ্রী মিলছে। বিশ্ববাংলা বিপণি থেকে শুরু করে বিদেশেও পাড়ি জমাচ্ছে বাংলার ডোকরা। পরিবেশবান্ধব ডোকরা শিল্প বাংলার অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তিও বটে।