করোনা কালে ছাঁটাই যেন সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে। লোহা-লক্করের কারখানা থেকে সংবাদমাধ্যম, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কর্পোরেট অফিস থেকে বাজারে রোজ পসরা বিছিয়ে বসা তরকারিওয়ালা, কাজ গিয়েছে সর্বত্র। এবার সেই তালিকায় নাম তুলল সৌরভের বিসিসিআই।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে আর নবীকরণ হচ্ছে না ১১ জন ক্রিকেট কোচের মেয়াদ। কাজ হারানো কোচের মধ্যে অন্তত ৫ জন কখনও না কখনও জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। করোনা অতিমারির সময় এই প্রথম এত বড় মাত্রায় ছাঁটাই প্রক্রিয়া চলল বোর্ডে। কাজ হারানো কোচেদের মধ্যে অন্যতম হৃষিকেশ কানিতকর, শিবসুন্দর দাশ, রমেশ পাওয়ার, সুব্রত ব্যানার্জি, সুজিথ সোমসুন্দর।
ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি বা NCA এর হেড অফ ক্রিকেট হওয়ার পর রাহুল দ্রাবিড় নিজে হাতে কোচিং স্টাফ বেছে নিয়েছিলেন। তারপর রাহুলের নেতৃত্বেই কাজ চালাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু দু’দিন আগে রাহুল দ্রাবিড় নিজেই ফোন করে কোচেদের মেয়াদ নবীকরণের সম্ভাবনা না থাকার কথা জানান বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, এই ১১ জন কোচের প্রত্যেকের সঙ্গে এক বছরের চুক্তি করেছিল বোর্ড। এই মাসেই যা শেষ হচ্ছে। চুক্তি মোতাবেক কোচেরা বছরে ৩০ থেকে ৫৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ, চুক্তি যে ফের নবীকরণ হচ্ছে না, তা আগে জানানো হয়নি কানিতকর, এসএস দাশ, রমেশ পাওয়ারদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কোচ জানিয়েছেন, দু’দিন আগে রাহুল তাঁকে ফোন করে জানান, বিসিসিআই চুক্তি নবীকরণের পথে যাচ্ছে না। সম্ভবত নতুন করে আর কোনও চুক্তিও হবে না। কিন্তু কেন নবীকরণ হবে না তারও কোনও কারণ দেখানো হয়নি, বলছেন সদ্য কাজ হারানো কোচ। তাঁদের দাবি, রাহুল দ্রাবিড় অনেক চেষ্টা করেও বোর্ডের মন গলাতে না পেরে রণে ভঙ্গ দিয়েছেন।
চুক্তি পুনর্নবীকরণ না হওয়ায় উভয় সঙ্কটে পড়েছেন ওই ১১ জন কোচ। রাজ্য সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই পরের মরসুমের কোচ বেছে ফেলেছে। আবার বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগও এ বছরের মতো শুরু বা শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে চাকরি কোথায় পাবেন তা নিয়ে এখন ঘরে-বাইরে চিন্তায় পড়েছেন কানিতকর, সুব্রত ব্যানার্জিরা। করোনা অতিমারি ও লকডাউনের কারণে মার্চ থেকেই টানা বন্ধ বেঙ্গালুরুর NCA। সেপ্টেম্বর তা খুললেও এখনও গিয়ে পৌঁছননি ক্রিকেটাররা।
বিসিসিআইয়ের এই সিদ্ধান্তের কারণ কি অর্থনৈতিক? করোনা কালে আর পাঁচটা সংস্থা যখন লোকসানের দোহাই দিয়ে নাগাড়ে ছাঁটাই চালাচ্ছে, তখন বিশ্বের ধনীতম ক্রিকেট বোর্ডও কি একই যুক্তি দিতে যাচ্ছে? বোর্ডের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদন বলছে, ছাঁটাইয়ের পিছনে আর যাই হোক, অর্থনৈতিক কারণ নেই। কেন? তারও উত্তর রয়েছে প্রতিবেদনে। ২০১৮ সালের মার্চ নাগাদ বোর্ড যে ব্যালান্স শিট প্রকাশ্যে এনেছিল তাতে দেখা গিয়েছে, বিসিসিআইয়ের হাতে নগদ ও ব্যাঙ্কে গচ্ছিত মোট সম্পদের পরিমাণ ৫,৫২৬ কোটি টাকা। তার মধ্যে ২,৯৯২ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিটে রাখা আছে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে বিসিসিআই স্টার টিভি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ৫ বছরের সম্প্রচার সত্ত্বের চুক্তি করে ৬,১৩৮.১ কোটির বিনিময়ে।
ফলে অর্থনৈতিক যুক্তি ধোপে টিকবে না। তাহলে এমন কী কারণ, যার জন্য চুক্তি যে নবীকরণ হচ্ছে না তা আগেভাগে জানানো হল না কোচেদের? সৌরভের বোর্ড কি রাহুল দ্রাবিড়কে মাথায় রেখে এনসিএর খোলনলচে বদলাতে চাইছে? তাই কি এক ধাক্কায় ছাঁটাই ১১ জন কোচ? যদি তাই হয় তাহলে রাহুল দ্রাবিড়ের ভবিষ্যৎ কতটা সুরক্ষিত, প্রশ্ন তুলছেন ছাঁটাই হওয়া কোচেদের একাংশ।
Comments are closed.