ভোটের আগে ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে বিজেপি নেতাকে খুনের যে অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে, তাঁর মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকে
গত ১২ ই মে ষষ্ঠ দফা ভোটের আগের রাতে ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে যে বিজেপি নেতাকে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, সেই রমেন সিংহ আসলে মারা গিয়েছেন স্ট্রোকে। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে চিকিৎসার পরিভাষায় মৃত্যু কারণের জায়গায় লেখা হয়েছে, ‘সেরেব্রো ভাসক্যুলার অ্যাক্সিডেন্ট’। শুধু তাই নয়, মৃত বিজেপি নেতা রমেন সিংহের শরীরে কোনও এক্সটার্নাল ইনজ্যুরিও ছিল না, এমনকী তাঁর শরীরের কোনও গুরুত্বপূর্ণ অর্গানে কোনও ক্ষত পাননি ময়না তদন্ত করা চিকিৎসকরা (পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট রয়েছে the bengal story র কাছে )।
১২ ই মে ভোট ছিল ঝাড়গ্রামে। জঙ্গলমহলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ভোটের আগের রাতে গোপীবল্লভপুরে বিজেপি নেতার অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবরে এলাকায় তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ভোটের দিন সকাল থেকে বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে রমেন সিংহ খুন হয়েছেন বলে বারবার খবর প্রচারিত হয়। অভিযোগ তোলা হয় তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মৃত বিজেপি নেতার পরিবারের লোকজন স্থানীয় ১৫ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য ভোটের দিন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল কিনা তা এখন খতিয়ে দেখছে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, যদি তদন্তে দেখা যায় পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে বা ভোটের দিন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে রাজনৈতিক কারণে জেনে-বুঝে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হবে।
ঠিক কী ঘটেছিল ১১ ই মে, শনিবার রাতে
রমেন সিংহের পরিবার অভিযোগ করেছিলেন, ‘শনিবার রাত ১১ টা নাগাদ প্রথমে রড এবং তারপর একের পর এক লাঠির আঘাতে পিটিয়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা খুন করেছে গোপীবল্লভপুরের বেলিয়াবেড়ার বিজেপি নেতাকে’। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভোটের দিন সকাল থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে মৃতদেহ ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করে জেলা পুলিশ। শুধু তাই নয়, ময়না তদন্তের নিরপেক্ষতার স্বার্থে চিকিৎসকদের একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করার জন্য জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে আর্জি জানায় পুলিশ। যার জেরে দু’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রমেন সিংহের মৃতদেহের ময়না তদন্ত করেন। পুরো ময়না তদন্ত প্রক্রিয়া ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়।
ময়না তদন্তের রিপোর্টে চিকিৎসকরা জানান, উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে তাৎক্ষণিক কোনও উত্তেজনায় রমেন সিংহের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই।
ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ জানিয়েছেন, রবিবার রাতেই ময়না তদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, রমেন সিংহকে খুন করা হয়নি। কিন্তু জেনে-বুঝে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
Comments are closed.