পঞ্চায়েতে জয়ী সদস্যদের তৃণমূলে যোগদান ঠেকাতে অভিনব ব্যবস্থা বিজেপির, সদস্যদের পাঠানো হচ্ছে ভিন রাজ্যে।
কয়েকদিন আগেই বিজেপির হাত থেকে আগলে রাখতে বিধায়কদের কর্ণাটক থেকে বাসে করে হায়দরাবাদে নিয়ে গিয়েছিলেন কংগ্রেস এবং জেডিএস নেতৃত্ব। শেষ পর্যন্ত আস্থা ভোটে না গিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা। অন্য দলের হাত থেকে জনপ্রতিনিধিদের রক্ষা করার এমন উদাহারণ পশ্চিমবঙ্গসহ অন্য রাজ্যে আগেও আছে। কিন্তু এবার পঞ্চায়েত ভোটের পর দলের ভাঙন রুখতে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি যেভাবে পার্শ্ববর্তী পাঁচটি রাজ্যে শিবির খুলেছে, তা নজিরবিহীন বললেও কম বলা হয়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা যাতে তৃণমূল কংগ্রেসে চলে না যান তার জন্য রাজ্য বিজেপি পাঁচটি রাজ্যে বিশেষ শিবির খুলেছে। সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের একাধিক পঞ্চায়েত জয়ী সদস্যকে অসম, সিকিম এবং বিহারে পাঠানো হয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের প্রতিনিধিদের পাঠানো হয়েছে ঝাড়খন্ড এবং ওড়িশায়।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত গঠন হতে এখনও অন্তত আড়াই মাস বাকি। এর মধ্যে তাঁদের জেতা প্রার্থীরা যাতে তৃণমূলে চলে না যান তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। বহু লোককে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে।
উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি জিতেছে ৩১০ টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতেছে ৩৩ টি আসন। আলিপুরদুয়ারে গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩০৯ টি, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩০ টি এবং জেলা পরিষদে ১ টি আসন জিতেছে বিজেপি। কোচবিহারে গ্রাম পঞ্চায়েতে ১১৬ টি এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে ৬ টি আসন জিতেছে তারা। জলপাইগুড়ির বিজেপি নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানালেন, এই তিন জেলা মিলে বিজেপির টিকিটে জয়ী ৮৮ জন সদস্যকে ইতিমধ্যেই অসম এবং সিকিমে পাঠানো হয়েছে। সবাইকে জেলা পার্টি থেকে ২-৩ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সেখানে বাড়ি ভাড়া করে থাকছেন। বোর্ড গঠনের সময় তাঁদের ফেরত আনা হবে।
মালদহ জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতে ৫৩১ টি, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৯৭ টি এবং জেলা পরিষদে ৬ টি সিট জিতেছে বিজেপি। জেলার বিজেপি নেতা রমন দে জানান, তাঁদের জেলায় জয়ী সদস্যদের মধ্যে প্রায় ২০০ জনকে দলের পক্ষ থেকে ঝাড়খন্ডের সাহেবগঞ্জে এবং ১৫০ জনকে পাঁকুড়ে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের রাখা হয়েছে একাধিক ধর্মশালায়। উত্তর দিনাজপুরের বিজেপি নেতা শঙ্কর শর্মার বক্তব্য, তাঁদের জেলায় তিনস্তর মিলে যে ৪০০ জনের বেশি জিতেছেন তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ লোককেই ৮ জুনের পর পাঠানো হবে বিহারে।
দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় ভাল ফল করেছে বিজেপি। বাঁকুড়া জেলার বিজেপি নেতা ডাঃ সৌগত পাত্র জানালেন, তাঁদের জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৩৫ টি এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩২ টি আসন জিতেছে বিজেপি। তার মধ্যে ৫০ জনকে ইতিমধ্যেই ঝাড়খন্ডে পাঠানো হয়েছে। কয়েকজনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পাশের পুরুলিয়া জেলায়। আবার পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় জয়ী অনেক বিজেপি সদস্যকে পাঠানো হয়েছে ওড়িশায়। ঝাড়গ্রাম জেলার বিজেপি নেতা জহর শতপথীর বক্তব্য, তাঁদের জেলায় তিনস্তর মিলে প্রায় ৪০০ জন জিতেছেন। তার মধ্যে ১৫০ জনকে এনে রাখা হয়েছে ঝাড়গ্রাম পার্টি অফিসে।
অগাস্টের শেষ সপ্তাহে শুরু হবে পঞ্চায়েতের তিনস্তরে বোর্ড গঠনের কাজ। বিজেপির বক্তব্য, বিভিন্ন জায়গায় তাদের দল ভাঙাতে নেমেছে রাজ্যের শাসক দল। কোথাও ভয় দেখানো হচ্ছে, কোথাও বা প্রধান কিংবা সভাপতির লোভ দেখানো হচ্ছে। তাই দলের ভাঙন ঠেকাতে পাশের বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই সেখানে জনপ্রতিনিধিদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর জন্য জেলার পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবে রাজ্য পার্টির পক্ষ থেকেও টাকা খরচ করা হচ্ছে। পাশের রাজ্যগুলিও সাহায্য করছে। বিজেপির দাবি, আড়াই-তিন মাস পর বোর্ড গঠনের সময় জয়ী সদস্যদের রাজ্যে ফেরানো হবে। যদিও তৃণমূলের পালটা বক্তব্য, অনেক বিরোধী সদস্য নিজে থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।