হাওয়ালা চক্রের মাধ্যমে টাকা তোলা এবং নগদ লেনদেনের অভিযোগ, রাজ্য বিজেপির কোষাধ্যক্ষ সাওয়ার ধানানিয়াকে নোটিস সিআইডির
লোকসভা নির্বাচনে হিসেব বহির্ভূত টাকা বিলি করা এবং হাওয়ালা অপারেটারের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করতে রাজ্য বিজেপির কোষাধ্যক্ষকে তলব করল সিআইডি। সূত্রের খবর, রাজ্য বিজেপির কোষাধ্যক্ষ সাওয়ার ধানানিয়া সহ আরও একজনকে গত ১৫ ই মে ভবানীভবনে হাজিরা দেওয়ার জন্য তার আগের দিন নোটিস পাঠায় সিআইডি। কিন্তু সাওয়ার ধানানিয়া কলকাতায় নেই, ১৯ অথবা ২০ শে মে শহরে ফিরবেন বলে সিআইডি অফিসারদের জানানো হয়েছে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে।
গত ১২ ই মে, ষষ্ঠ দফা ভোটের দিন আসানসোল স্টেশন থেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রাক্তন আপ্ত-সহায়ক গৌতম চট্টোপাধ্যায় এবং দিল্লির বিজেপি নেতা লক্ষ্মীকান্ত সাউকে ১ কোটি টাকা সহ রেল পুলিশ গ্রেফতার করে। সেই কেস তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিআইডি। সেই কেসের তদন্তের সূত্র ধরে রাজ্যে ভোটে হাওয়ালার মাধ্যমের টাকা পাচারের এক চাঞ্চল্যকর যোগসূত্র খুঁজে পান গোয়েন্দারা। ধৃত লক্ষ্মীকান্ত সাউ গত এক মাসে কলকাতা এবং ওড়িশার একাধিক হাওয়ালা কারবারির কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা তুলেছেন বলে তাঁকে জেরা করে জানতে পেরেছে সিআইডি। সূত্রের খবর, সেই টাকা ব্যবহার করা হয়েছে এই নির্বাচনে। এই হাওয়ালার টাকার সূত্র ধরে এবং নির্বাচনে হিসেব বহির্ভূত নগদ টাকা লেনদেনের অভিযোগে সম্প্রতি সিআইডি রাজ্য বিজেপির কোষাধ্যক্ষ সাওয়ার ধানানিয়াকে ভবানী ভবনে ডেকে পাঠায়। এর পাশাপাশি আসানসোলের বার্নপুর এলাকার বজরংলাল আগরওয়াল নামে এক সক্রিয় বিজেপি নেতাকেও ভবানী ভবনে হাজিরা দিতে নোটিস পাঠিয়েছে সিআইডি। রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, বজরংলাল আগরওয়াল বার্নপুরে জ্ঞান ভারতী নামে একটি বইয়ের দোকান চালান। জেরায় ধৃত লক্ষ্মীকান্ত সাউ এবং গৌতম চট্টোপাধ্যায় পুলিশকে জানিয়েছেন, রাজ্য বিজেপির কোষাধ্যক্ষ সাওয়ার ধানানিয়ার নির্দেশ মতো তাঁরা ১২ ই মে খড়গপুর থেকে বার্নপুরে যান এবং বজরংলাল আগরওয়ালের কাছ থেকে ১ কোটি টাকা নেন। সেই টাকা সহ সেদিনই তাঁরা আসানসোল স্টেশনে ধরা পড়েন। সম্প্রতি লক্ষ্মীকান্ত সাউ এবং গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের বয়ান রেকর্ড করেছে সিআইডি।
এবার ভোটে বিজেপির পক্ষ থেকে নজিরবিহীনভাবে টাকা বিলি করা হচ্ছে বলে বারবারই অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, ভোটের আগে ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা, সম্প্রতি বারুইপুর থেকে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা, এপ্রিলের শেষে পানাগড় এলাকার এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা, কলকাতার রবীন্দ্র সরণি থেকে ৩০ লক্ষ টাকা সহ বহু নগদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। কিন্তু সবচেয়ে চাঞ্চল্য ছড়ায় আসানসোল স্টেশন থেকে ১ কোটি টাকা সহ বিজেপির দুই নেতা লক্ষ্মীকান্ত সাউ এবং গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের খবরে। এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়েই কলকাতা এবং ওড়িশার একাধিক হাওয়ালা চক্রের পাণ্ডার হদিস পায় রেল পুলিশ, যাঁদের মাধ্যমে টাকার লেনদেন হয়েছে। এবং গোটা ঘটনায় ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় রাজ্য বিজেপির কোষাধ্যক্ষের নাম সামনে এসেছে বলে জানিয়েছে রাজ্য পুলিশ, যার জেরে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই রাজ্যে এই ব্যাপক নগদ লেনদেনের ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।
Comments are closed.