পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সিপিএম নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে কি শেষ পর্যন্ত দল থেকে বহিষ্কার করবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট? নাকি তাঁকে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হবে? এ নিয়ে তীব্র দোটানায় পড়ে অবশেষে সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব দুই সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করল।
এ বছরের ২৩ এবং ২৪ শে জুলাই দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে সুশান্ত ঘোষের তীব্র সমালোচনা করেন কয়েকজন সিপিএম নেতা। অভিযোগের মূল কারণ ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে thebengalstory.com এ সুশান্ত ঘোষের ধারাবাহিকভাবে ডায়েরি লেখা। এই ডায়েরিতে সুশান্ত ঘোষ একাধিক ইস্যুতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিমের সমালোচনা করেন। শুধু তাই নয়, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম এবং নেতাই বা জঙ্গলমহল নিয়ে একাধিক অজানা ঘটনার কথা এই ডায়েরিতে লেখেন সুশান্ত ঘোষ। এই ডায়েরি সেই সময় শুধু যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয় তাই নয়, সিপিএমের অন্দরেও তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করে। এই ডায়েরির কথা উল্লেখ করেই এ বছরের জুলাই মাসের রাজ্য কমিটির বৈঠকে কয়েকজন সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষের সমালোচনা করেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, দলের অন্দরের কথা এভাবে লেখার বিষয়টি শীর্ষ নেতৃত্ব অনুমোদন করেন কিনা। যার জবাবে সেই মিটিংয়ে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, ‘সুশান্ত ঘোষ যা লিখেছেন তা বহিষ্কার যোগ্য অপরাধ। কিন্তু তিনি দলের রাজ্য কমিটির সদস্য নন। তিনি যে জেলার (পশ্চিম মেদিনীপুর) সদস্য, তাঁদের উচিত এই বিষয়টা দেখা।’
সেই রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে সূর্যকান্ত মিশ্রর এই বক্তব্যের পরই সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায় তড়িঘড়ি সুশান্ত ঘোষকে শো-কজ করেন। সূত্রের খবর, এই শো-কজের জবাবে সুশান্ত ঘোষ ভুল স্বীকার করেননি বা ক্ষমা তো চানইনি, বরং তীব্র সমালোচনা করেন তরুণ রায়ের। জানা গিয়েছে, শো-কজের জবাবে সুশান্ত ঘোষ পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য সরাসরি তরুণ রায় এবং তাঁর পছন্দের নেতাদেরই দায়ী করেছেন। শো-কজের এমন আক্রমণাত্মক জবাব পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে যান পশ্চিম মেদিনীপুর সিপিএম নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, সুশান্ত ঘোষের এই জবাবের কথা তরুণ রায় সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে জানান এবং এরপর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পার্টি সুশান্ত ঘোষকে বহিষ্কার করার জন্য আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কাছে সুপারিশ করে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পার্টি সুশান্ত ঘোষকে দল থেকে বহিষ্কার করার যে সুপারিশ করেছে তা নিয়ে যদিও তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। তার প্রধান কারণ এখনও পার্টির নিচুতলার নেতা-কর্মীদের বড় অংশের মধ্যে সুশান্ত ঘোষের প্রবল জনপ্রিয়তা। একটি জেলা নেতৃত্বের সুপারিশে সুশান্ত ঘোষের মতো নেতাকে বহিষ্কার করলে, বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে সিপিএম সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্যের মত। সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের এই সুপারিশের জেরে সম্প্রতি সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী কোনও ঝুঁকি না নিয়ে দুই সদস্যের এক তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। আগামী ১৭ এবং ১৮ ই অক্টোবর সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক। তারপরই এই তদন্ত কমিশনের সরকারিভাবে কাজ শুরু করবে। কথা বলবে পশ্চিম মেদিনীপুর নেতৃত্ব এবং সুশান্ত ঘোষের সঙ্গে। তবে সব মিলে সুশান্ত ঘোষের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে সতর্কভাবেই পা ফেলতে চাইছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা।
Comments are closed.