কন্যাশ্রী প্রকল্পকে হাইলাইট করাতে মাধ্যমিকে এবার মেয়েদের রেজাল্ট ভাল হয়েছে, সিপিএম প্রাথমিক সদস্যের ফেসবুক পোস্টে বিতর্ক।
বুধবার বেরিয়েছে মাধ্যমিকের ফল। এবার মাধ্যমিকে গোটা রাজ্যে প্রথম কোচবিহারের সঞ্জীবনী দেবনাথ। কিন্তু কোনও মেয়ের মাধ্যমিকে প্রথম হওয়ার সঙ্গে কি রাজ্যের কন্যাশ্রী প্রকল্পের সম্পর্ক আছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছেন বলে কি তার সাফল্য তুলে ধরতে কোনও মেয়েকে এবার মাধ্যমিকে প্রথম করা হয়েছে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে? বা কন্যাশ্রী প্রকল্পকে হাইলাইট করতে মেয়েদের সামগ্রিক রেজাল্ট ভাল করানো হয়েছে?
নিশ্চই ভাবছেন, এ কেমন বিচিত্র প্রশ্ন? এ কখনও হয় নাকি? কেউ কেউ হয়তো বলবেন, মেয়ে প্রথম হয়েছে বলে এও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এক চূড়ান্ত বৈষম্যমূলক প্রচার।
কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ফেসবুকে ঘুরছে এমনই এক পোস্ট। পোস্টটি করেছেন চন্দননগরের এক সক্রিয় সিপিএম কর্মী এবং প্রাথমিক সদস্য সৌরেন্দ্রনাথ ঘোষ ওরফে বুবাই ঘোষ। ঘোষ বুবাই নামে তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। তিনি শুধু এই পোস্ট করেই থামেননি। তিনি তাঁর পোস্টে ট্যাগ করেছেন মহিলা নেত্রী এবং সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য রূপা বাগচিকে। সঙ্গে আরও বেশ কয়েক জনকে ট্যাগ করেছেন তিনি। কিন্তু রূপা বাগচিকে এই পোস্টে ট্যাগ করার জন্য শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ফেসবুক পোস্টটিতে অ্যানিমেশনে দেখানো হয়েছে, অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত বলছেন, ‘বেঙ্গল বোর্ডের মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেয়েরা বেশি ভাল রেজাল্ট করেছে’। জবাবে একজন পুরুষ বলছেন, ‘করলো না করানো হল? কন্যাশ্রী আরও একটু হাইলাইট হল’।
গরিব পরিবারের মেয়েদের আরও স্কুলমুখী করতে, পড়াশোনায় উৎসাহ দিতে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রকল্পের ফলে মেয়েদের স্কুলছুট হওয়া যেমন কমেছে, তেমনই নাবালিকা বিয়েও অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যদিও এই প্রকল্পের কিছু সমালোচনা অনেক সময়েই করেছেন শীর্ষ সিপিএম নেতারা। ব্যক্তিগত আলোচনায় এই প্রকল্পকে ‘চমক’ এবং ‘খয়রাতি’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন কেউ কেউ। যদিও কন্যাশ্রী প্রকল্পের জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে প্রকাশ্যে বিশেষ সমালোচনা করেন না তাঁরা। কিন্তু এবছর মাধ্যমিক ফল বেরনোর পরদিন সিপিএমের এক প্রাথমিক সদস্য ফেসবুক পোস্টে কন্যাশ্রী প্রকল্পকে আক্রমণ করতে গিয়ে মেয়েদের ভাল ফল করাকে যেভাবে কটাক্ষ করেছেন, তা নজিরবিহীন। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার এই ফেসবুক পোস্টের পর অনেকে তাতে ‘লাইক’ও করেন। সন্ধ্যে পর্যন্ত পোস্টটি ‘শেয়ার’ও করেছেন একজন।
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য সৌরেন্দ্রমোহন ঘোষকে ফোন করা হলে তিনি জানান, মজা করে তিনি এই কাজ করেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর পোস্টে রূপা বাগচির মতো রাজ্য কমিটির সদস্যকে ট্যাগ করায় তৈরি হয়েছে বিতর্ক। রূপা বাগচির বক্তব্য, এই ধরনের পোস্ট করে ছেলেটি ঠিক করেননি। মেয়েরা পুরোপুরি মেধার নিরিখে ভাল রেজাল্ট করছে।
এবছর মার্চ মাসেই সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে দলের যে সাংগঠনিক রিপোর্ট রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র পেশ করেছেন, তার ৬০ পৃষ্ঠায় সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে একটা পুরো অনুচ্ছেদ লেখা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুরুত্ব আরোপ করার কথা বলা হয়েছে। এমনকী রাজ্যের প্রায় ৭৭ হাজার বুথে অন্তত দুজন করে সোশ্যাল মিডিয়া ভলান্টিয়ার নিয়োগের কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু এই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারেই ফের বিতর্কে সিপিএম। ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করেই প্রথম বিতর্ক শুরু হয়েছিল সিপিএমের তৎকালীন সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। এবছর পঞ্চায়েত ভোটের দিন বিতর্ক হয় সাংসদ মহম্মদ সেলিমের ছেলে রাসেল আজিজের একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে। আর এবার ফেসবুকে মেয়েদের ভাল রেজাল্ট করাকেই কটাক্ষ করে প্রাথমিক সদস্যের পোস্টে অস্বস্তিতে আলিমুদ্দিন।