কোভিড পর্বে কাজের সুযোগ, লকডাউনের বাজারেও রমরমিয়ে চলছে ই-কমার্স সংস্থাগুলো, রহস্য কী?

কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে স্তব্ধ পৃথিবী। ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি। তবে পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে না চলে যায়, তাঁর জন্য বেশ কয়েকটি উপায় অবলম্বন করছে সরকার। পৃথিবী জুড়ে অর্থনীতিবিদরা কীভাবে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে ফের চাঙ্গা করা যায়, তা নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। লকডাউন পরিস্থিতি কাটিয়ে যত দ্রুত সম্ভব অর্থনীতির হাল না ধরলে আগামী দিনে খুব কঠিন পরিস্থিতির মুখে হতে হতে পারে।

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। তাঁদের বেশির ভাগই শ্রমিক ও বিনা চুক্তির কর্মী। অনেক নামকরা সংস্থায় নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ। কর্মীদের বেতনও অনেক ক্ষেত্রে হ্রাস হয়েছে।

এই কঠিন পরিস্থিতি যেখানে কার্যত গৃহবন্দি গোটা দেশ, সেখানে দাড়িয়ে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলি। প্রথম দিকে হোম ডেলিভারি বা অনলাইন শপিং-এর উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এখন পুরোদমে কাজ করছে এই  e-commerce platform-গুলি।

 

কীভাবে পাল্টে যাচ্ছে আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার পদ্ধতি? (E-commerce Business Trends)

e-commerce business during lockdown

 

প্রথম দিকে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুর জন্য চালু করা হয় ই-কমার্স পরিষেবা। প্রথম দিকে খাদ্যদ্রব্য ও রান্নার সরঞ্জাম ডেলিভারি করলেও এই মুহূর্তে অন্যান্য অ-নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও অর্ডার নিচ্ছে এই সাইটগুলো। এছাড়াও ফুড ডেলিভারি অ্যাপের মাধ্যমে খাবারের অর্ডার তো লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই চালু।

 

লকডাউনে কি সত্যিই বেড়েছে কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যবসা?

দেশের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলির দাবি, একদিকে যেমন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা তুঙ্গে, তেমনই অন্যদিকে প্রবণতা বেড়েছে বাড়িতে বসে শপিং করার। সারা দেশে লকডাউনের জেরে তথ্যপ্রযুক্তি সহ আরও অনেক কর্মী এখন বাড়িতে বসেই কাজ করছেন। আর তাই বেড়েছে ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র যেমন মোবাইল বা ল্যাপটপের চাহিদা। এছাড়াও বেড়েছে এসি ও ফ্রিজের মত জিনিসের চাহিদাও। যদিও গ্রীষ্মের সময় এই সব জিনিসের চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে, কিন্তু এখন লকডাউনের জেরে যেখানে সমস্ত দোকানপাট ও শো-রুম বন্ধ, সেখানে e-commerce website থেকে কেনার হিড়িক বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ।

লকডাউন পরবর্তী সময়েও ভিড় এড়াতে এই অনলাইন ব্যবস্থার উপরই জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাগুলোর। এ ক্ষেত্রে একদিকে যেমন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায়, তেমনই অন্যদিকে বাড়িতে বসেই আপনার মনের মতো জিনিস পেয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে ই-কমার্স সাইট ফ্লিপকার্ট জানিয়েছে যে এই লকডাউনের সময়ে তাঁদের প্ল্যাটফর্মে সার্চের পরিমাণ প্রায় ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

কী ধরনের প্রোডাক্ট সার্চ করছেন বা অর্ডার করছেন ক্রেতারা? (Mostly Searched Products Through E-commerce Websites)

e-commerce platform

 

মূলত এই গরমের সময় বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক জিনিসের চাহিদা এমনিতেই বাড়ে। যার মধ্যে টিভি, ফ্রিজ, এসি আছে। তাছাড়া বাড়িতে বসে কাজ করতে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, কুলারের মত জিনিসের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে বলেই দাবি করেছে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলি। এছাড়াও চাহিদা বেড়েছে পার্সোনাল গ্রুমিং ইকুইপমেন্টের। যেমন ধরুন ট্রিমার বা ড্রায়ারের মতো সামগ্রী। রিপোর্টে এও দাবি করা হয়েছে লকডাউনে সেলুন বা পার্লার খোলার অনুমতি মেলেনি ফলে ঘরে ঘরে ট্রিমারের চাহিদা সাড়ে চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সর্বোচ্চ সার্চ করা প্রোডাক্টের মধ্যে উঠে এসেছে দাঁড়ি ছাঁটার ট্রিমার।

এই মুহূর্তে অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনেই শুধুমাত্র জিনিস পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আর রেড জোনে শুধুমাত্র অত্যাবশ্যক সামগ্রী। অরেঞ্জ জোন ও গ্রিন জোনে স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটপ ছাড়াও চাহিদা বেড়েছে জামাকাপড় ও হোম মেকিং অ্যাপ্লায়েন্সের।

এছাড়াও সুইগি বা জোমাটোর মত ফুড ডেলিভারি অ্যাপের মাধ্যমেও অত্যাবশ্যক পণ্য ও রান্নার সরঞ্জামের অর্ডার করছেন গ্রাহকরা।

 

কমার্সের ভবিষ্যৎ (Future of E-commerce Business)

কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে কোন কিছুই আর আগের মতো থাকবে না। নতুন এক জীবনধারার জন্ম নেবে আগামী দিনগুলিতে। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। অনলাইন বিজনেস থেকে শুরু করে অনলাইনে পড়াশোনা সবটাই বেশি প্রাধান্য পাবে। কাজেই আগামী দিনে প্রযুক্তি জানা ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে তা বলাই যায়। শোরুমে গিয়ে জিনিস কেনার চেয়ে হয়ত ঘরে বসে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই নিজেদের কেনাকাটা সারবেন সাধারণ মানুষ। হয়ত রেস্টুরেন্টে গিয়ে ১০ জনের মাঝে বসে খাওয়াদাওয়া করার চেয়ে নিজের বাড়িতেই খাবার আনিয়ে নেবেন। বা বাড়িতে বসেই হয়ত ভিডিও কলিং-এর মাধ্যমেই সেরে ফেলবেন বিজনেস মিটিং বা অফিসের কোনও কনফারেন্স।

এর ফলে একদিকে যেমন অনলাইন অর্ডারিংয়ের পরিমাণ বাড়বে, তেমনই চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোগান বজায় রাখতে প্রচুর কর্মীও নিতে হবে সংস্থাগুলোকে। সবমিলিয়ে কোভিড পর্বে নিদারুণ হতাশার আবহে আশার আলো e-commerce business.

Comments are closed.