গত ৩ বছরে শুধু মহারাষ্ট্রেই আত্মহত্যা করেছেন ১২ হাজারের ওপর কৃষক, সরকারি রিপোর্টে সামনে এল মর্মান্তিক ছবি

২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা ১২ হাজার ২১ জন! শুক্রবার মহারাষ্ট্র সরকারের দেওয়া এই তথ্যে ফুটে উঠেছে দেশের কৃষকদের মর্মান্তিক দুরাবস্থার কথা। শুধু তাই নয়, একটি লিখিত প্রতিক্রিয়ায় সে রাজ্যের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী সুভাষ দেশমুখ জানিয়েছেন, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ৬১০ জন কৃষকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে মহারাষ্ট্রে।
গত ২০১৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের আত্মহত্যার খবর প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে। গত তিন বছরে দেশ দেখেছে একাধিক কৃষক লং মার্চ। বারবার চাষিদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরব হওয়া মানুষজন অভিযোগ জানিয়েছেন, ভালো নেই দেশের কৃষক। কর্ণপাত করেনি কোনও সরকারই। বরং বারবারই কৃষক আত্মহত্যার খবরকে অস্বীকারই করে এসেছে বিভিন্ন শাসক। সেখানে শুধু একটি রাজ্যেই কৃষকের আত্মহত্যার এই পরিসংখ্যান সামনে আসতেই চমকে উঠেছেন দেশের মানুষ।
প্রাকৃতিক কারণে বা ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে কয়েক বছরে দেশে কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। যদিও এ নিয়ে গত কয়েক বছরে মোদী সরকারের তরফে কোনও সরকারি তথ্য মেলেনি। তবে মহারাষ্ট্র সরকারের এই লিখিত বিবৃতিতে আঁচ করা যাচ্ছে, সারা দেশের কৃষক মৃত্যুর সংখ্যাটা কোন ভয়াবহ জায়গায় যেতে পারে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সমাজকর্মী জীতেন্দ্র ঘাটগে তথ্যের অধিকার আইনে জানতে চান, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কতজন কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রে? এই প্রেক্ষিতে শুক্রবার মহারাষ্ট্রের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী সুভাষ দেশমুখ লিখিত প্রতিক্রিয়ায় জানান, ওই ৩ বছরে রাজ্যে ১২ হাজার ২১ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। যার মধ্যে ৬ হাজার ৮৮৮ টি কেসে রাজ্যের তরফে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৮৪৫ টি পরিবার ইতিমধ্যে ১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।
পাশাপাশি, ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৬১০ জন কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনার কথা স্বীকার করেছে মহারাষ্ট্র সরকার। এর মধ্যে ১৯২ টি কেস ক্ষতিপূরণের উপযুক্ত বলে মনে করেছে সরকার। লিখিত উত্তরে আরও জানানো হয়, ৩২৩ জন কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চলছে এবং ৯৬ টি কেস সরকারি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য নয়।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের বিধানসভায় এক আলোচনায় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ দাবি করেছিলেন, রাজ্যের ২৪ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ মুকুবের ফলে রাজ্যের প্রায় ৫০ লক্ষ কৃষক উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু এতেও যে কৃষক আত্মহত্যা ঠেকানো যাচ্ছে না, তার প্রমাণ মিলল রাজ্য সরকারের রিপোর্টেই।

Comments are closed.