রবীন্দ্রভারতীর বাংলায় এম এ, ই-রিকশায় হরিণঘাটার মাংস বিক্রি করে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করেন মালা মুখার্জি
গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবার থেকে আসা, উচ্চ শিক্ষিত। বাড়ির লোকের, এমনকী তাঁর নিজেরও পরিকল্পনা ছিল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে কোনও সরকারি চাকরি করা। কিন্তু বিয়ের পর বাচ্চা আর সংসার সামলে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি কলকাতার বাগুইহাটির গৃহবধূ মালা মুখার্জির। তবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চিন্তা থেকে সরে আসেননি তিনি। ২০১৬ সাল থেকে ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভস্টক ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের অধীনে হরিণঘাটা ব্র্যান্ডের প্রক্রিয়াজাত মাংস ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করে আজ মালাদেবী শুধু স্বাবলম্বীই নন, একজন সফল ব্যবসায়ীও বটে। সপ্তাহে তাঁর রোজগার আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা, মাসে এক লক্ষ টাকারও বেশি আয় করেন বাগুইহাটির এই গৃহবধূ।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করেন মালা মুখার্জি। ইচ্ছে ছিল কোনও সরকারি চাকরি করবেন। সেই মতো প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু ২০১২ সালে তাঁর বিয়ে হওয়ার পর সংসার ও সন্তান সামলে সরকারি চাকরির জন্য নিরবচ্ছিন্ন প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল না। এই অবস্থায় প্রক্রিয়াজাত মাংসের ব্যবসার কথা প্রথম মাথায় আসে মালাদেবীর। সেই শুরু। প্রথমে ‘হেলদি ডায়েট’ নামে একটি ছোট দোকান খোলেন। বিক্রিবাটা মন্দ না হলেও, মালাদেবী সেখানেই থেমে থাকতে চাননি। কিনে ফেলেন একটি ই-রিকশা। সেটা করে হরিণঘাটা ব্রান্ডের প্রক্রিয়াজাত আমিষ দ্রব্য বিক্রি করতে শুরু করেন। প্রথম প্রথম সপ্তাহে তিন থেকে চার হাজার টাকা রোজগার করতেন। প্রথমে ই -রিকশা চালানোর জন্য কোনও চালক নেওয়ার কথা ভাবলেও, তা করেননি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের হাতেই ব্যবসার হাল ধরতে চেয়েছেন তিনি। ই- রিকশা চালিয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গা চিকেন, মাটন ইত্যাদি বিক্রি করা শুরু করেন। মালা মুখার্জির কথায়, প্রথম প্রথম একটু সংকোচ বোধ হোত। উচ্চশিক্ষিত গৃহবধূ হয়ে ই-রিক্সা চালিয়ে মাংস বিক্রি করছেন, এতে অনেকেরই আপত্তি ছিল। বাঁকাচোখের চাউনি ছিল। সেই দৃষ্টিভঙ্গি এখনও অনেকের বদলায়নি। কিন্তু মালাদেবীর বড় সমর্থক তাঁর স্বামী। এবং পরিবারকে পাশে পেয়েই এতটা রাস্তা পেরতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।
এছাড়া আর কোনও বাধা-বিপত্তির মুখে পড়েছেন? মালাদেবী জানান, বছর কয়েক আগে ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে গোটা রাজ্যের মানুষ হোটেলে মাংস খাওয়া থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাত মাংস কেনায় অনীহা দেখিয়েছিলেন। সেই সময় সাময়িকভাবে তাঁর ব্যবসাও প্রভাবিত হয়েছিল। তবে হরিণঘাটা ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে কিছুদিনের মধ্যেই অবস্থা বদলায়। যেখানে সপ্তাহে আগে তিন থেকে চার হাজার টাকার বিক্রিবাটা হোত, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। তবে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে এখানেই থেমে থাকতে চান না মালা মুখার্জি। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি একাধিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত তিনি। মাংসের সঙ্গে সঙ্গে এবার শাক-সবজির ব্যবসাও শুরু করছেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্ডার দিলে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেবেন সবজি। তাঁর এই সাফল্যে স্বামী ও পরিবারের ভূমিকা বিশাল বলে জানান মালা দেবী। সেই সঙ্গে যেভাবে হরিণঘাটার পক্ষ থেকে সরকারি সহায়তা পেয়েছেন তাও অনস্বীকার্য বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। মালা মুখার্জির কথায়, মহিলারাও যে কোনও কাজে সাফল্য পেতে পারেন, যদি তা করার সাহস দেখাতে পারেন।
Comments are closed.