সরকার-ধনকড় সংঘাত চরমে: রাজ্যে শিক্ষার পরিবেশ একেবারেই ঠিক নেই, বিস্ফোরক রাজ্যপাল

রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে এবার একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন জগদীপ ধনকড়। শুক্রবার ফরাক্কায় এক অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে বর্ধমান সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে রাজ্যপাল একেবারে খোলাখুলিই বলেন, এই রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পরিবেশ কিন্তু একেবারেই ঠিকঠাক নেই। এই অবস্থার পরিবর্তন করা দরকার। তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের উপর রাজ্য সরকারের প্রবল চাপ রয়েছে। রাজ্যপালের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবে তাঁর ক্ষমতা ও এক্তিয়ার নিয়ে তিনি সম্পূর্ণ সচেতন। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের তুলনায় রাজভবন বা রাজ্যপালের ক্ষমতা অনেকটাই বেশি। তাঁর মন্তব্য, এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কে কত বড় বস সেটা জানাতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কোনও ক্ষতি করা চলবে না।
এর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ছাত্রছাত্রীদের ঘেরাও করা নিয়ে রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পরামর্শ উপেক্ষা করেই তিনি সোজা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান বাবুলকে ঘেরাওমুক্ত করতে। ওই অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব না হলেও ওই ইস্যুতে রাজ্যপাল উপাচার্যকে টেলিফোনে দু’চার কথা শুনিয়ে দেন। রাজ্যপালের অনুরোধ সত্ত্বেও উপাচার্য সুরঞ্জন দাস ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকতে রাজি হননি। ধনকড় তাঁকে ভর্ৎসনা করে বলেন, পুলিশ না ডাকলে উপাচার্য যেন পদত্যাগ করেন। উপাচার্য পাল্টা জানিয়ে দেন, পুলিশ তিনি ডাকবেন না, বরং প্রয়োজনে পদত্যাগে রাজি আছেন। এ নিয়ে মাস খানেক আগে বেশ জলঘোলা হয়। তখনই রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, তিনি উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই ধনকড়ের সঙ্গে নানা বিষয়ে শাসক দলের সংঘাত চলছে। তবে শুক্রবার যেভাবে তিনি রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সরকারকে নিশানা করলেন, তা রীতিমতো নজিরবিহীন। বর্ধমানে রাজ্যপাল বলেন, সবার কাছে আমার আবেদন, ছাত্রদের এবং শিক্ষার স্বার্থে দয়া করে শিক্ষাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। তৃণমূল শাসনে গত আড়াই বছর ধরে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন বন্ধ আছে। তা উল্লেখ করে রাজ্যপাল বলেন এটা হওয়া একেবারেই উচিত নয়। সম্প্রতি অবশ্য রাজ্য সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্র ভোট করার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালইয়ে সেই ভোট হয়েছে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। তাতে এসএফআই সবকটি পদে বিপুলভাবে জিতেছে। গত কয়েক মাস ধরে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা স্তরের শিক্ষকরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। রাজ্যপাল তাঁদের দাবিকেও সমর্থন করেছেন।

 

Comments are closed.