নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়া নথি গ্রহণযোগ্য নয়, যতক্ষণ না কর্তৃপক্ষ তার সাপেক্ষে প্রমাণ দিচ্ছে, রায় গুয়াহাটি হাইকোর্টের
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যখন দেশজুড়ে আন্দোলন চলছে, পাশাপাশি জনসাধারণের মনে প্রশ্ন উঠছে, এই আইন এবং এনআরসি কার্যকর হলে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য কী কী নথিপত্র সরকারের কাছে জমা দিতে হবে, তখন এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল গুয়াহাটি হাইকোর্ট। আদালত জানিয়েছে, যতক্ষণ না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার সাপেক্ষে কোনও প্রমাণ পাচ্ছে, নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে জমা দেওয়া নথি ততক্ষণ গ্রহণযোগ্য নয়। সম্প্রতি গুয়াহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি মনোজিৎ ভুঁইয়া এবং বিচারপতি পার্থিবজ্যোতি শইকিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ এক মামলার শুনানিতে এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে।
জানা গিয়েছে, রাবিয়া খাতুন নামে এক মহিলা পিটিশন দায়ের করেছিলেন আদালতে। শোনিতপুরের ফরেনার ট্রাইব্যুনাল ২০১৭ সালের ১৬ মে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে বিদেশি নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করে রাবিয়াকে। তার বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেছিলেন রাবিয়া। নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চারটি নথি জমা দিয়েছিলেন রাবিয়া। তার মধ্যে ছিল নিজের ভোটার কার্ড, ১৯৬৫ সালের ভোটার তালিকায় থাকা তাঁর নাম, এ ছাড়াও নিজের বিয়ের সার্টিফিকেটও জমা দিয়েছিলেন ওই মহিলা। কিন্তু আদালত মনে করছে, এই নথিগুলি রাবিয়ার নাগরিকত্বের যথেষ্ট প্রমাণ নয়। আদালত বলেছে, ভোটার কার্ড নাগরিকত্বের সঠিক প্রমাণ নয়। কারণ তার থেকে এটা প্রমাণ হয় না, সংশ্লিষ্ট নাগরিক ১৯৮৫ সালের অসম চুক্তি অনুযায়ী ফরেনার বা বিদেশি নাগরিক কি না। আদালত আরও বলেছে, ১৯৬৫ সালের ভোটার তালিকা ও যে ভোটার কার্ড ওই মহিলা আদালতে জমা দিয়েছিলেন, তাতে এটাও বোঝা যাচ্ছে না যে, তাঁর বাবা অথবা দাদু এ দেশের ভোটার ছিলেন কি না। সুতরাং এই নথিগুলি গ্রহণযোগ্য নয়। বিচারপতিরা এই রায়ে আরও বলেছেন, এই প্রমাণগুলি ছাড়াও ওই মহিলা নিজের পক্ষে কোনও ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে দেখাতে পারেননি। তাই ওই মহিলার নাগরিকত্ব প্রমাণ হয়নি। আর ম্যারেজ সার্টিফিকেটও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার সাপেক্ষে কোনও প্রমাণ দেয়নি। আদালত আরও বলেছে, ওই মহিলা এইসব নথি ছাড়া অন্য কোনও প্রামাণ্য নথি দাখিল করতেও ব্যর্থ হয়েছেন। মহিলার বাবা যে এই দেশেই ছিলেন, সেই প্রমাণও দিতে পারছেন না রাবিয়া।
এর আগে সাহিরা খাতুন নামে অন্য এক মহিলার আবেদনের প্রেক্ষিতে গুয়াহাটি হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, স্কুল সার্টিফিকেট দেখাতে পারেননি, বলে তিনি ভারতের নাগরিক নন।
Comments are closed.