কাশ্মীর কেমন আছে, একবার দেখে আসুন অমিত শাহ, চান মেহবুবা কন্যা ইলতিজা

কাশ্মীর উপত্যকার পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ শান্ত বলে কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি মানতে নারাজ জননিরাপত্তা আইনে বন্দি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির কন্যা ইলতিজা। সংসদের বাজেট অধিবেশনে কেন্দ্র আরও দাবি করেছিল, বিশেষ মর্যাদা লোপের পর কাশ্মীরে কোনও বিক্ষোভ হয়নি, সেখানকার মানুষ কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেননি। মুফতি-কন্যা কেন্দ্রের এই দাবিকেও অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, কাশ্মীরের মানুষ কতটা ক্ষুব্ধ, তা নিজের চোখে দেখে আসার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাশ্মীর সফর করা উচিত। গত অগাস্ট মাসে কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের উপর থেকে বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়। তার পর কেটে গিয়েছে ছয় মাসেরও বেশি সময়। তার মধ্যে কাশ্মীরে একবারের জন্যও যাননি অমিত শাহ।
গত ৫ অগাস্ট থেকে গৃহবন্দি করে রাখা হয় মেহবুবা মুফতি, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা, আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং তাঁর বৃদ্ধ বাবা, জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আব্দুল্লাকে। বন্দি আছেন আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এবং বিভিন্ন সংগঠনের কর্তা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কাশ্মীর থেকে আইএএস-এ প্রথম হওয়া জম্মু-কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্ট-এর নেতা শাহ ফয়জল। সম্প্রতি তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ফয়জলের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে জননিরাপত্তা আইন। এর বলে প্রশাসন তাঁদের ছয় মাস থেকে দু’বছর পর্যন্ত বিনা বিচারে বন্দি রাখতে পারে। প্রশাসনের ব্যাখ্যা, এই নেতারা জনগণের পক্ষে বিপজ্জনক। ওমরকে জননিরাপত্তা আইনে আটক রাখার কারণ, তিনি নাকি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি বাইরে থাকলে প্রচুর মানুষকে খেপিয়ে তুলতে পারেন, জনগণকে উত্তেজিত করে তুলতে পারেন। মুফতির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাষণ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার মুফতি-কন্যা ইলতিজা বলেন, কাশ্মীরের মানুষ পিডিপি বা ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতাদের উপর যতটা না ক্ষুব্ধ, তার থেকে অনেক বেশি ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় সরকারের উপর। আমি প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা করি। কাশ্মীর নিয়ে কেউ হয়ত তাঁকে ভুল বুঝিয়েছেন। কেন্দ্র জানে না, কাশ্মীরের মানুষ কী পরিমাণ ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একবার কাশ্মীরে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আসুন।
গত ছয় মাস ধরে উপত্যকায় প্রায় সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও পুলিশের অভিযোগ, অনেকে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নানা রকমের উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন, মানুষকে হিংসাত্মক কাজকর্মে অংশ নিতে বলছেন। এই কারণে দু’শোর বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে ইলতিজা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার যেখানে নিষিদ্ধ, সেখানে অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে কী করে?
এদিকে আইনশৃঙ্খলার কথা তুলে জম্মু-কাশ্মীরে পঞ্চায়েত ভোট স্থগিত করে দেওয়া হল। সেখানকার স্বরাষ্ট্র দফতর নিরাপত্তা সংস্থাগুলির রিপোর্টের ভিত্তিতে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কাশ্মীরের পরিস্থিতি যদি শান্তই থাকে, তা হলে কেন আইনশৃঙ্খলার কথা বলে পঞ্চায়েত ভোট স্থগিত করে দেওয়া হল কেন? এ তবে কেমন শান্তি?

Comments are closed.