রাতারাতি বকেয়া মেটাতে হলে ব্যবসা গোটানো ছাড়া উপায় থাকবে না, জানালেন ভোডাফোনের আইনজীবী মুকুল রোহতগি

গত দশ বছরে ভারতে ব্যবসা করতে গিয়ে ভোডাফোনের প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এই অবস্থায় রাতারাতি বকেয়া টাকা মেটানোর নির্দেশ মানতে হলে ভারতে ব্যবসার ঝাঁপ বন্ধ করতে হবে ভোডাফোনকে। যার ফলে কর্মহীন হয়ে পড়বেন দশ হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রায় ৩০ কোটি গ্রাহক। এমনটাই দাবি করলেন ভোডাফোন-আইডিয়ার আইনজীবী মুকুল রোহতগি।

তিনি আরও জানিয়েছেন, ভোডাফোন যদি এদেশের টেলিকম বাজার থেকে সরে যায়, তা হলে দেশে মাত্র দুটি বেসরকারি টেলিকম সংস্থা থাকবে (জিও, এয়ারটেল), ফলে বাজারে প্রতিযোগিতা কমবে।
উল্লেখ্য, লাইসেন্স ফি, স্পেকটার্ম চার্জ বাবদ ভোডাফোনের কাছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে সরকারের। সুদ ও জরিমানা সমেত যার মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার ১৭ তারিখের মধ্যে তা মিটিয়ে দিতে বলেছিল ভোডাফোনকে। সূত্রের খবর, ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা মিটিয়ে দিলেও মঙ্গলবারের মধ্যে পুরো টাকা মেটাতে পারেনি ভোডাফোন। সেই প্রেক্ষিতে ভারতে এই টেলিকম সংস্থাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন সংস্থার গ্রাহকরাও। এই অবস্থায় প্রবীণ আইনজীবীর এই মন্তব্যে জল্পনা ছড়িয়েছে।
এই সংক্রান্ত একটি রায়ে বকেয়া টাকা কেন্দ্রকে দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। যার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রও কড়া অবস্থান নিয়ে দ্রুত বকেয়া চেয়ে নির্দেশ জারি করে। কিন্তু ভোডাফোনের বক্তব্য, এভাবে রাতারাতি এত কোটি টাকা কখনওই তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়, এটা সরকারকে বুঝতে হবে। গত কয়েক বছরে ভারতে টেলিকম সংস্থাগুলি ক্ষতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলেই দাবি ভোডাফোনের।
এই বিষয়টি নিয়ে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ফের আবেদন করা হয় ভোডাফোনের তরফে। বলা হয়, এদিনই তারা ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে দেবে কেন্দ্রকে, শুক্রবারের মধ্যে আরও ১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু তা মানতে চায়নি সর্বোচ্চ আদালত। এক্ষেত্রে ভোডাফোনের তরফে সরকারকে যে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে তাও ব্যবহার করা যাবে না বলে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট এও বলে, টেলিকম সংস্থার বিরুদ্ধে এখনই কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
ভোডাফোনের পাশাপাশি এয়ারটেল ও টাটা গোষ্ঠীরও বিপুল বকেয়া রয়েছে সরকারের কাছে। সোমবার এয়ারটেল কেন্দ্রকে ১০ হাজার কোটি টাকা ও টাটা গোষ্ঠী ২১৯৭ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে। এখনও এয়ারটেলের কাছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি এবং টাটা গোষ্ঠীর কাছে ১৩ হাজার কোটি টাকা প্রাপ্য কেন্দ্রের। ১৭ মার্চের মধ্যে তা মেটাতে হবে সংস্থাদুটিকে। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, দেশে কোনও বেসরকারি টেলিকম সংস্থা পরিষেবা বন্ধ করে দিক, তা তাঁরা চান না।

Comments are closed.