দীনেশ ত্রিবেদী: জনতা দল থেকে কংগ্রেস হয়ে তৃণমূল, পরবর্তী গন্তব্য…

রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে নাটকীয় ভাবে ইস্তফা দিয়েছেন দীনেশ ত্রিবেদী। বিরোধীরা বলছেন ভোটের আগে দীনেশের তৃণমূল ত্যাগ বড়ো ধাক্কা। স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল এতে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
২০১৯ এর লোকসভা ভোটে বারাকপুরে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহের কাছে হেরে যান তিনি। পরে তৃণমূল তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করে। শুক্রবার সেই দীনেশ ত্রিবেদী রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে মহানাটকীয়ভাবে ইস্তফা দিলেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এবার তাঁর গন্তব্য বিজেপি। যদিও দীনেশ নিজে এখনও কিছু জানাননি। যদিও দলবদল দীনেশ ত্রিবেদীর কাছে নতুন নয়।
কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে কমার্স গ্র্যাজুয়েট দীনেশ ত্রিবেদী সফল ব্যবসায়ীর পাশাপাশি একজন প্রশিক্ষিত পাইলট।

ব্যক্তিগত জীবন

পার্টিশনের পর করাচি থেকে মা বাবার সঙ্গে দিল্লি চলে আসেন দীনেশ। তাঁর স্কুল জীবন কাটে হিমাচল প্রদেশের বোর্ডিং স্কুলে। এই সময় দীনেশ ত্রিবেদীর বাবা কলকাতার হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে চলে আসেন গঙ্গা পারে। বাবা মায়ের সঙ্গে কলকাতা আসেন দীনেশ ত্রিবেদী। ভর্তি হন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। এরপর ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস থেকে এমবিএ করেন। পাশাপাশি পাইলটের প্রশিক্ষণ নেন। ২ বছর চাকরি করেন মার্কিন মুলুকের শিকাগোতে। ভাল সেতার বাজাতে পারেন। আগ্রহ নিয়ে শোনেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত। একসময় ভেবেছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনে সন্ন্যাসী হয়ে যাবেন। কিন্তু বাড়ির চাপে সেই ইচ্ছে অপূর্ণ রাখতে হয়। তারপর ভেবেছিলেন অভিনয় করবেন। কিন্তু তাতেও মনের সায় পাননি। শেষ পর্যন্ত কলকাতায় বিমান পণ্য পরিবহণের ব্যবসা শুরু করেন।

[আরও পড়ুন- ২২১ এর কম পাব না, শাহ লড়ুন নন্দীগ্রামে, জিতলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, India Today Conclave এ চ্যালেঞ্জ মমতার] 

দীনেশের রাজনৈতিক জীবন 

১৯৮০ সালে কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ। ১৯৯০ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে জনতা দলে নাম লেখান। ১৯৯০-৯৬ সাল পর্যন্ত জনতা দলের প্রার্থী হিসেবে গুজরাট থেকে রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। ১৯৯৮ সালে মমতা ব্যানার্জি তৃণমূল তৈরী করলে জনতা দল ছেড়ে তাতে যোগ দেন। তৃণমূলের প্রথম জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন দীনেশ ত্রিবেদী। ২০০২ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। ২০০৯ সালে তৃণমূলের টিকিটে ব্যারাকপুর থেকে জিতে প্রথমবার লোকসভায় যান। ২০০৯ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হন। এরপর ২০১১ সালে পরিবর্তনের ভোটে মহাকরণ দখল করেন মমতা ব্যানার্জি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা ব্যানার্জি দীনেশকে রেলমন্ত্রী করেন। ২০১২ সালের রেল বাজেটে ট্রেন ভাড়া বাড়ানো নিয়ে দলের সঙ্গে গোলমাল লাগে দীনেশের। তৃণমূলের অভিযোগ, দলের নীতির বিরুদ্ধে গেছেন দীনেশ ত্রিবেদী। দলনেত্রী দীনেশ ত্রিবেদীকে সরিয়ে রেলমন্ত্রী পদে বসান মুকুল রায়কে। মুকুল রায় ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।
তারপর কিছুদিন দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলেও ক্রমশ ফের সামনের সারিতে দীনেশ ত্রিবেদীকে তুলে আনেন মমতা ব্যানার্জি। ২০১৪ সালে বারাকপুর থেকে ঘাসফুল প্রতীকে লড়েন দীনেশ ত্রিবেদী। সিপিএমের হেভিওয়েট প্রার্থী তরিৎ তোপদারকে হারিয়ে আবার লোকসভায় যান দীনেশ ত্রিবেদী।
শুক্রবার রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে দীনেশ ত্রিবেদী অভিযোগ করেন তিনি কাজ করতে পারছেন না। দলে থেকে দমবন্ধ হয়ে আসছে। ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর করোনা মোকাবিলার ভূয়সী প্রশংসা শোনা যায় তাঁর গলায়। আর সংসদ থেকে বেরনোর সময় বললেন, দল এখন আর মমতা ব্যানার্জির হাতে নেই, কর্পোরেটের হাতে চলে গিয়েছে। ঠিক যে কথা নিয়ম করে বলছিলেন দলবদলুরা। এই মন্তব্যের পর মনে করা হচ্ছে দীনেশ ত্রিবেদীর বিজেপিতে যোগ দেওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।

Comments are closed.