উত্তরপ্রদেশে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের নাম ও ছবি দিয়ে বড় বড় হোর্ডিং লাগানো হয়েছিল। সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগে হোর্ডিংয়ে নাম ও ছবি থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মোকদ্দমাও চালাচ্ছিল যোগী রাজ্যের পুলিশ। যা নিয়ে এক সময় তোলপাড় হয়েছিল জাতীয় রাজনীতি। পরে আদালতের নির্দেশে গুটিয়ে ফেলতে হয় হোর্ডিং। যদিও হোর্ডিংয়ে নাম ও ছবি থাকা ব্যক্তিরা সহজে রেহাই পাচ্ছেন না।
সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন লখনউয়ের মহম্মদ কলিম। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারও করে। পরে আদালত জামিনে মুক্তি দেয়। গত শুক্রবার সেই মহম্মদ কলিমকে ফের গ্রেফতার করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। জানা গিয়েছে, ২১ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা ফাইন করা হয়েছিল কলিমকে। সেই টাকা দিতে না পারায় ফের গ্রেফতার করা হয়েছে পেশায় রিকশা চালক কলিমকে। শুক্রবার মহম্মদ কলিমকে ১৪ দিনের হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। জানিয়েছেন লখনউ পুলিশের তহসিলদার শম্ভু শরন।
এ বছরের শুরুর দিকে লখনউ প্রশাসন মোট ৫৭ জনের কাছে রিকভারি নোটিস পাঠিয়েছিল। মোট ফাইনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে মহম্মদ কলিম একজন। কিন্তু রিকশা চালক মহম্মদ কলিম এত টাকা পাবেন কোথায়? প্রশ্ন উঠছে, লক্ষ লক্ষ টাকা ফাইন করা হয়েছে কীসের ভিত্তিতে?
কলিমের স্ত্রী জানাচ্ছেন, রিকশা খারাপ হয়ে যাওয়ার পর একটি ভ্যান জোগাড় করে ফ্রিজ, এসি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছিলেন তাঁর স্বামী। কিন্তু সম্প্রতি সেই ভ্যানটিও খারাপ হয়ে যায়। ফলে কার্যত বেকার হয়ে পড়েন মহম্মদ কলিম। গত কয়েকদিন ধরে তাই বাড়ির সামনেই বিস্কুট, ডালমুট প্রভৃতি বিক্রি করছিলেন। সেখান থেকেই গত শুক্রবার তাঁকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
হতবাক কলিমের স্ত্রীয়ের প্রশ্ন, এত টাকা আমরা কোথায় পাব? আমাদের তো বাড়িই নেই। চিরকাল ঝুপড়িতে থাকছি। স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও পারেননি বলে জানিয়েছেন তিনি। শহরের বাইরে কোথাও কলিমকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। দেখা করতে গেলে কলিমের স্ত্রীকে বলা হয়, দেখা করতে দেওয়া হবে না। জামাকাপড় রেখে যেতে বলা হয়। স্বামীকে ঠিক কোথায় রাখা হয়েছে, কেমন আছে সে, তা নিয়ে প্রবল দুশ্চিন্তায় মহম্মদ কলিমের স্ত্রী। বাবাকে দেখতে না পেয়ে কান্নাকাটি জুড়েছে ৪ সন্তান।
মহম্মদ কলিমের আইনজীবী আসমা ইজ্জত সওয়াল করেন, প্রশাসনের এই পদক্ষেপ বেআইনি। মহামারি আইন যখন লাগু রয়েছে তখন এসব করে প্রশাসন কী বার্তা দিতে চাইছে, তা নিয়েও আদালতে প্রশ্ন তোলেন আসমা ইজ্জত। পরবর্তী শুনানি ১৩ জুলাই।
তবে শুধু রিকশাওয়ালা মহম্মদ কলিম নয়, সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে গ্রেফতার হওয়া কংগ্রেস নেত্রী তথা অভিনেতা সাদাফ জাফর কিংবা অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস এস আর দারাপুরির বাড়িতেও ফাইনের চিঠি পৌঁছেছে।
সাদাফ জাফরের অভিযোগ, কিছুদিন আগেই জনা পনেরো পুলিশ কর্মী তাঁর বাড়িতে এসে ফাইন দেওয়া না হলে বাড়ি ঘর সব দখল নেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়ে গিয়েছেন। এমনকী সাদাফ জাফরের নাবালক সন্তানদেরও ভয় দেখিয়েছেন পুলিশকর্মীরা বলে অভিযোগ সাদাফ জাফরের। পুলিশ গিয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস এস আর দারাপুরির বাড়িতেও। সেখানেও ফাইন না দিলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার হুমকি দিয়েছে পুলিশ বলে অভিযোগ।
এস আর দারাপুরির নাতি সিদ্ধার্থ জানিয়েছেন, পুলিশ আমাদের বাড়িছাড়া করার হুমকি দিয়ে গিয়েছে। আমার দিদা অসুস্থ এবং বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে আমাদের রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হলে তা ভয়াবহ ব্যাপার হবে। তাঁর অভিযোগ, এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশকে অমান্য করছে পুলিশ প্রশাসন। যেখানে হাইকোর্ট সাফ জানিয়েছিল, ১০ জুলাই পর্যন্ত ফাইন আদায় বা নোটিস প্রেরণ করা যাবে না।
পুলিশ অবশ্য ভুল কিছুই দেখছে না। বিক্ষোভকারীদের শায়েস্তা করতে এভাবেই ফাইন আদায়ের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে সূত্রের খবর। ফলে উত্তরপ্রদেশে নতুন করে উসকে উঠতে পারে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভ, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
Comments are closed.