২৩ মে বেঙ্গালুরুতে নামেই জেডিএস নেতা কুমারস্বামীর শপথ। আসলে বুধবার বিকেলে টিপু সুলতানের শহরে ২০১৯ লোকসভা ভোটের মহড়া। বিজেপি বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের জোটবদ্ধ হয়ে দিল্লি দখলের যে লড়াই শুরু হয়েছে তার প্রস্তুতি শিবির। বুধবার কর্ণাটকে কংগ্রেস-জেডিএস জোট সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতের তালিকায় সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, কমল হাসান, ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন এবং সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
লোকসভা ভোট যতই এগোচ্ছে, ততই বিরোধী শিবিরের এককাট্টা হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা হলেও চিন্তিত বিজেপি শিবির। আর সেই কারণেই আগ্রাসী বডি ল্যাঙ্গোয়েজ ভাবটা ধরে রেখে অমিত শাহ হুঙ্কার ছাড়ছেন, ২০১৯ সালে তাঁরাই দিল্লিতে সরকার গড়বেন। কিন্তু কর্ণাটকে বিধানসভার রেজাল্ট, ইয়েদুরাপ্পার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েও আস্থা ভোট এড়িয়ে ইস্তফা এবং ২৩ মে কুমারস্বামীর শপথ গ্রহণ আগামী দিনের দেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিশা দেখাবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কী সেই দিশা?
কর্ণাটকে সংখ্যার নিরিখে ১০৪টি আসন নিয়ে এক নম্বর দল বিজেপি। ৭৮টি আসন জিতে দ্বিতীয় কংগ্রেস এবং তাদের প্রায় অর্ধেক আসন নিয়ে তৃতীয় দেবেগৌড়া-কুমারস্বামীর জেডিএস। অথচ মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন জেডিএস নেতা কুমারস্বামী। এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও তারা সরকার গড়তে পারছেন না বলে যখন বিজেপি কর্ণাটকের আসন্ন সরকার গঠনকে অনৈতিক বলছেন, সেই ফর্মুলাই কি ফের একবার ভারতবর্ষের রাজধানীতে দেখা যাবে, সেই প্রশ্নও কিন্তু উঠছে টিপুর শহর থেকে। কারণ, এক নম্বর দল হয়েও সরকার গড়তে না পারায় বিজেপির ক্ষোভ, দুঃখ তো থাকবেই। কিন্তু কংগ্রেসকে যেভাবে বিনা শর্তে জেডিএসকে সাপোর্ট করতে হচ্ছে, তা কি রাহুল ব্রিগেডও খুব একটা উদার চিত্তে মেনে নিতে পারছে? কিন্তু ২০১৯ সালের আগে বিজেপিকে যেভাবেই হোক ঠেকানোর বাধ্যবাধকতা!
দিল্লির রাজনৈতিক মহলের আলোচনায় এই জল্পনাও উঠছে, আগামী লোকসভা ভোটের পর রাজধানীতেও কর্ণাটকের পুনরাবৃত্তি হবে না তো? এককভাবে যদি ম্যাজিক ফিগার ২৭২ এর খানিকটা কিংবা অনেকটা আগে থেমে যায় মোদী-অমিত শাহ ব্রিগেড, তবে হয়তো আঞ্চলিক দলগুলির একটা ব্লককেই সমর্থন করতে বাধ্য থাকবে কংগ্রেস।
আর এখানেই উঠছে মূল প্রশ্ন, এই আঞ্চলিক দলগুলোর চালিকা শক্তি কার হাতে থাকবে? তার উত্তরও খুব সহজ। নির্বাচন পরবর্তী রাজনীতি সহজ পাটিগণিত বোঝে। সেই কারণেই, প্রভাবে এবং সাংসদ সংখ্যার বিচারে বুধবার কুমারস্বামীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মধ্যমনি হতে চলেছেন নিঃসন্দেহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোনিয়া গান্ধী সম্ভবত যাচ্ছেন না কর্ণাটকে। তবে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী থাকবেন। কিন্তু বাকি আঞ্চলিক নেতাদের মধ্যে, জাতীয় রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে সাংসদ সংখ্যায় তৃণমূল নেত্রীই নিঃসন্দেহে এক নম্বরে। লোকসভায় ৩৪ এবং রাজ্যসভায় ১৩ জন সাংসদের দল তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় রাজনীতিতেও এই মুহূর্তে যথার্থভাবেই সংখ্যার বিচারে তিন নম্বর দল।
বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের যে কাজটা জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে করেছে সিপিএম, স্রেফ সংখ্যার বিচারে তাতে এখন তারা অনেকটাই পিছিয়ে। সেই জায়গায় উঠে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কারণেই কর্ণাটকে নতুন মুখ্যমন্ত্রীর শপথে থেকে ২০১৯ এর লোকসভা ভোট পর্যন্ত জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়তে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেসের। যা বেঙ্গালুরুতে কুমারস্বামীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আরও স্পষ্ট হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।