কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করার অভিযোগে গত কয়েক দিন ধরে কংগ্রেস সমর্থিত এনএসইউআই, এআইএসএফ ও ছাত্র ভারতী সংগঠনের তীব্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি মেম্বার যোগেশ সোমানকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রাহুলের একটি সভার মন্তব্যকে কটাক্ষ করে গত ১৪ ডিসেম্বরে ট্যুইটার ও ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন যোগেশ সোমান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকে ব্যঙ্গ করে দেশজুড়ে ধর্ষণের ঘটনায় রাহুল ‘রেপ ইন ইন্ডিয়া’ বলেছিলেন। বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা তাঁর ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানালে রাহুল গান্ধী সেই সভায় ঘোষণা করেন, আমি রাহুল গান্ধী, রাহুল সাভারকর নই।
রাহুলের এই মন্তব্যকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যঙ্গ করেন যোগেশ সোমান। তিনি ভিডিয়ো বার্তায় বলেন, আপনি সত্যিই সাভারকর নন। আবার সত্যি গান্ধীও নন। আপনার মধ্যে এদের কারও আদর্শ নেই। যোগেশ যোগ করেন, তিনি গান্ধীর ‘পাপ্পুগিরি’-র প্রতিবাদ করছেন।
এরপরই কংগ্রেসের যুব সংগঠন ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া (এনএসইউআই) এই ৫১ সেকেন্ডের ভিডিয়োর প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। গত ২৪ ডিসেম্বর তারা উপাচার্যের অফিস ঘেরাও করে এবং একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। পাশাপাশি ২৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমি অফ থিয়েটার আর্টসের ডিরেক্টর যোগেশের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের করে। এরপর থেকে দীর্ঘ প্রতিবাদ চলতে থাকে। গত ৯ জানুয়ারি যোগেশের কুশপুতুল দাহ করা হয়। গত সোমবারও গভীর রাত পর্যন্ত এই প্রতিবাদ চলে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অজয় দেশমুখ জানান, যোগেশকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের চিঠি দিয়ে দেশমুখ জানান, এ ব্যাপারে একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটিও গঠন করা হচ্ছে। যোগেশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে চার সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে ওই কমিটি।
যদিও এনএসইউআই-র সর্বভারতীয় সম্পাদক নিখিল কাম্বের দাবি, শুধু ছুটিতে পাঠালেই হবে না। যোগেশ সোমানকে ডিরেক্টরের পদ থেকে ছেঁটে ফেলতে হবে। তাঁর অভিযোগ, নিয়মবহির্ভূতভাবে এই পদে বসেছেন সোমান এবং একটিও ক্লাস করেননি তিনি। কাম্বে জানান, পড়ুয়াদের অভিযোগ রয়েছে, একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শ তাঁদের মগজে ঢোকাতে বেশি আগ্রহী তিনি।
এদিকে সোমানকে ছুটিতে পাঠানো নিয়ে বিজেপি-র বক্তব্য, কংগ্রেস ও বামেরা নাগাড়ে সোমানকে হুমকি দিচ্ছে। এটা কি ‘অসহিষ্ণুতা’ নয়? বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার আর্টসের ছাত্র তথা ছাত্র ভারতীর নেতা অপূর্ব ইঙ্গেলের দাবি, কোনও পড়ুয়ার সঙ্গেই ভালো ব্যবহার করেন না যোগেশ। রাজনীতি যোগেই এই পদে বসেছেন তিনি। তাই তাঁকে সরিয়ে যতদিন না যোগ্য কোনও ব্যক্তির হাতে অ্যাকাডেমি অফ থিয়েটার আর্টসের ভার দেওয়া হচ্ছে, ততদিন এই আন্দোলন চলবে।
Comments are closed.