নন্দীগ্রাম আসলে যা ঘটেছিল #৫: সিপিএমের ছোড়া গুলিতে পরপর মৃত ৩, শঙ্কর সামন্তকে পাল্টা খুন করে বদলা, রণক্ষেত্র ভাঙাবেড়া

আগের পর্ব যেখানে শেষ হয়েছিল: ৩ জানুয়ারি পুলিশকে আক্রমণ করলেন নন্দীগ্রামের মানুষ, আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে খেজুরিতে শুরু হল সিপিআইএমের প্রস্তুতি, পাল্টা ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি গঠন

 

৪ জানুয়ারি ২০০৭। ভোরেই বাদল মন্ডল, জয়দেব পাঁইকসহ নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের কয়েকজন সিপিআইএম নেতা বাড়ি ছাড়েন। ৪ তারিখ বিকেলে ফের নন্দীগ্রামে যান শুভেন্দু অধিকারী। শুরু হয় বৃহত্তর আন্দোলনের পরিকল্পনা। ভাবনা-চিন্তা শুরু হয় দলমত নির্বিশেষে গ্রামবাসীদের নিয়ে একটা মঞ্চ তৈরির। পরদিন ৫ তারিখ নন্দীগ্রাম পৌঁছন পিডিসিআই নেতা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরি। গড়চক্রবেড়িয়ার মোড়ে সভা হয় এবং সেই সভায় ঠিক হয়েছিল, নন্দীগ্রামের সবকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকে নিয়ে কোনও দলীয় পতাকা ছাড়া একটি কমিটি গঠন করা হবে। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। সেদিনই সন্ধ্যায় খেজুরির দিক থেকে নন্দীগ্রামে প্রথম বোমা ছোড়ে সিপিআইএম বাহিনী। নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীদের ভয় দেখানোই ছিল বোমা ছোড়ার উদ্দেশ্য। পরদিন ৬ জানুয়ারি সকালে গড়চক্রবেড়িয়া, সোনাচূড়া, কেন্দেমারি মহম্মদবাজার এবং ১ নম্বর ব্লকের নানা এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, এসইউসিআই, পিডিসিআই এবং সিপিআইএমের যে সমস্ত নেতা ও সক্রিয় কর্মী জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেছিলেন, সবাই মিলে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি তৈরি করেন। এই কমিটির প্রথম মিটিং হয়েছিল গড়চক্রবেড়িয়ার ভূতার মোড়ে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কমিটিতে যোগ দিলেন জমি দিতে অনিচ্ছুক হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। তারপর প্রায় বিকেল পর্যন্ত গড়চক্রবেড়িয়া থেকে সোনাচূড়া, কেন্দেমারি থেকে মহেশপুর, সর্বত্র মাইক বাজিয়ে চলেছিল এই কমিটির প্রচার। যার মূল বক্তব্য ছিল, জমি কিছুতেই দেওয়া হবে না এবং গ্রামে ঢুকতে দেওয়া যাবে না পুলিশকে। অবশ্য পুলিশের নয়, সেই ৬ জানুয়ারি রাত থেকেই নন্দীগ্রামে শুরু হয়েছিল সিপিআইএমের সশস্ত্র আক্রমণ, যার পালটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সেখানকার মানুষ। এবং সেই প্রতিরোধ ছিল সিপিআইএমের আক্রমণের মতোই সশস্ত্র। কী ঘটল ৬ জানুয়ারি রাতে?

পুলিশ ঠেকাতে ৪ জানুয়ারি থেকে ১ নম্বর ব্লকের নানা জায়গায় পাহারার ব্যবস্থা করেছিলেন স্থানীয় মানুষ। সমস্ত মোড়ে প্রচুর মানুষের জমায়েত থাকত। কিন্তু ৫ তারিখ রাতে খেজুরির দিক থেকে সিপিআইএমের বোমাবাজির পর রাত পাহারার ব্যবস্থা করা হয়। ৬ তারিখ ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, মূলত খেজুরি সীমানা বরাবর দিন ও রাতে পাহারার বন্দোবস্ত করার। নন্দীগ্রাম ও খেজুরির মাঝে তালপাটি খাল। খালের ওপর তেখালি এবং ভাঙাবেড়া ব্রিজ। ৬ তারিখ সন্ধ্যায় সোনাচূড়ার বাসিন্দা এবং ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির এক নেতার কাছে একটি ফোন আসে। ফোনটা করেছিলেন খেজুরির দিক থেকে সিপিআইএমের এক ক্যাডার। সেই রাতে নন্দীগ্রাম আক্রমণের দায়িত্ব যাঁদের ছিল সেই দলের সদস্য ছিলেন তিনি। কিন্তু সিপিআইএমের হয়ে আক্রমণ করলেও নন্দীগ্রামের মানুষকে সতর্ক করতে এবং পুরনো একটি ঘটনায় সিপিআইএমের নেতাদের উপর আক্রোশ থেকেই তিনি এই কাজ করেছিলেন। তিনি বাধ্য হয়েছিলেন সিপিআইএমের হয়ে অস্ত্র ধরতে, না হলে পরিবার নিয়ে খেজুরিতে থাকতে পারতেন না। এর পরেও বহু ক্ষেত্রেই নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীরা খেজুরির সাধারণ মানুষ এবং সিপিআইএম সমর্থকদের একাংশের সাহায্য পেয়েছিলেন। যা খেজুরির সিপিআইএম নেতারা জানতেও পারেননি।

ধরা যাক, খেজুরির এই সিপিআইএম ক্যাডারের নাম ক এবং নন্দীগ্রামের ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতার নাম খ। দু’জনেরই নিরাপত্তার কারণে তাঁদের নাম লিখলাম না।

কঃ আজ রাতে আমরা ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে আক্রমণ করব। সে রকমই প্ল্যানিং হয়েছে। আপনারা তৈরি থাকবেন।

খঃ মানে? কী প্ল্যান হয়েছে?

কঃ আমাদের বলা হয়েছে নন্দীগ্রামে ঢুকতে। ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে তুরাঘাটা দিয়ে আমাদের ঢোকার কথা, ওখানে আপনারা লোক জড়ো করুন। আর ২-৩ টে বন্দুক জোগাড় করুন।

খঃ আমরা বন্দুক কোথায় পাব? বন্দুক জোগাড় করা মুশকিল।

কঃ কিন্তু জোগাড় করতে পারলে ভালো হয়, অনেকেরই তো বাড়িতে লাইসেন্স বন্দুক আছে। আপনারা যদি ৩-৪ টে গুলিও চালান আমরা দলবল নিয়ে ফিরে যাব, নন্দীগ্রামে ঢুকবো না। চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু আপনারা বাধা না দিলে আমার কিছু করার থাকবে না। তখন ঢুকতেই হবে নন্দীগ্রামে।

খঃ ঠিক আছে, দেখছি।

কঃ দেখার কিছু নেই। প্রতিরোধের ব্যবস্থা করুন, এখনও অনেক সময় আছে। আমরা আক্রমণ করলেই পালটা কয়েক রাউন্ড গুলি চালাবেন।

এই ফোনের কথা খ সঙ্গে সঙ্গে জানিয়েছিলেন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আর এক নেতাকে, সেই নেতা পরে খুন হয়েছিলেন। তিনি নিশিকান্ত মন্ডল। আগে সিপিআইএম করতেন। পরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। এবং নন্দীগ্রামের আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী নেতা ছিলেন নিশিকান্ত মন্ডল। ধুরন্ধর সংগঠক। দু’জনে মিলে আলোচনা করে ঠিক করলেন, ভাঙাবেড়া ব্রিজ থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিম দিকে তুরাঘাটায় জমায়েত করা হবে। কিন্তু বন্দুক তাঁরা জোগাড় করতে পারেননি। তার বদলে তাঁরা একটা অন্য পরিকল্পনা করেন। ফোন করেছিলেন একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিনিধিকে। সেই সংবাদমাধ্যম সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় থেকে প্রচণ্ড সরকার বিরোধী অবস্থান নেয় এবং স্বাভাবিকভাবেই  নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীদের আস্থা অর্জন করে।

নিশিকান্ত মণ্ডল এবং ভুমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ওই নেতার মনে হয়েছিল, সংবাদমাধ্যম সঙ্গে থাকলে দুটো সুবিধা হবে। প্রথমত, সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে সিপিআইএম বাহিনী বিশেষ কিছু করার সাহস পাবে না। তাছাড়া বড়সড় কিছু ঘটে গেলেও তা ফলাও করে প্রচার হবে। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতার ফোন পেয়ে ওই সংবাদমাধ্যমের এক ক্যামেরাম্যান, যিনি তখন নন্দীগ্রামেই থাকতেন, রাতেই সোনাচূড়া পৌঁছে যান।

ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে কিছু লোককে রেখে তুরাঘাটার কাছে খালের ধারে বিরাট জমায়েত করে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। ঠিক রাত সওয়া ন’টা নাগাদ খেজুরির দিক থেকে প্রথম গুলি চলেছিল তুরাঘাটায়। পর পর কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় সিপিআইএম সশস্ত্র বাহিনী। সঙ্গে বোমা। আধ ঘণ্টা বাদে ক আবার ফোন করেন খ কে।

কঃ  সব লোক নিয় ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে চলে যান, আমরা ওদিকে যাচ্ছি। আর পালটা কিছু ব্যবস্থা করুন।

খ তখন সবাইকে বলেন তাড়াতাড়ি ভাঙাবেড়া যাওয়ার জন্য। কিন্তু লোকজন তাতে প্রথমে রাজি হননি। সবার এক বক্তব্য, ওই জায়গায় আক্রমণ হচ্ছে, ছেড়ে যাওয়া, ঠিক হবে না। এরপর খ সবাইকে বলেন, এখানে খাল রয়েছে, তা  হেঁটে পার হয়ে ওরা ঢুকবে না। বরং ভাঙাবেড়া ব্রিজ পার হয়ে নন্দীগ্রামে ঢুকতে পারে। আমাদের অবিলম্বে ভাঙাবেড়ায় যাওয়া উচিত। এ’কথা শুনে বেশিরভাগ লোক তাড়াহুড়ো করে ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে জড়ো হন। অল্প কিছু লোক থেকে গিয়েছিলেন তুরাঘাটায়। খ অবশ্যই নন্দীগ্রামের মানুষেকে জানাননি, কেন হঠাৎ তিনি প্ল্যান বদলে সবাইকে ভাঙাবেড়া যেতে বলছেন। আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশ দীর্ঘদিন জানতেন না, কারা ফোন করে সিপিআইএমের প্ল্যানিংয়ের খবর দিয়ে সাহায্য করছেন।

রাত সাড়ে ১০টা-১১টা নাগাদ ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে খেজুরির দিক থেকে প্রথম গুলি চালায় সিপিআইএম ক্যাডাররা। ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে নন্দীগ্রামের দিকে ১৫০-২০০ মিটার দূরে রাস্তার পূর্বদিকে বেশ কয়েকটা বাড়ি ছিল। তার আড়ালে ছিলেন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির লোকজন। মাঝে মধ্যেই গুলি চালাচ্ছিল সিপিআইএম বাহিনী, কখনও কখনও বোমাও ছুড়ছিল। সেই দিন সন্ধে থেকেই ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির লোকজন ওই জমায়েতের মধ্যেই মাঝারি উচ্চতার, সাধারণ চেহারার এক ব্যক্তিকে দেখতে পান, যিনি ওই এলাকার বাসিন্দা নন। ওই ব্যক্তি সেইদিন সকালে ভূতার মোড়ে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি গঠনের মিটিংয়েও ছিলেন। আন্দোলনকারীরা যখন খেজুরির দিক থেকে আক্রমণকারী সিপিআইএম বাহিনীকে ঠেকাতে রাতে সোনাচূড়া থেকে ভাঙাবেড়ার মধ্যে ছোটাছুটি করছেন, কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওই ব্যক্তি। খেজুরির দিক থেকে এই পরপর বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর সময় সেই অপরিচিত ব্যক্তি ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির এক স্থানীয় নেতাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনারা আমাকে কিছু বোমা বা পেটো (স্থানীয় ভাষায় হাতে তৈরি ছোট বোমা) দিতে পারেন?’

‘আপনি কে, ‘পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন ওই নেতা।

‘আমি বাইরে থাকি, সকালে মিটিংয়ে এসেছিলাম, আর ফিরে যাইনি। আপনাদের সাহায্য করতে এসেছি।’

‘কিন্ত এত রাতে তো বোমা জোগাড় করতে পারব না।’

‘কিছু চকোলেট বোমা বা অন্তত আতস বাজি যোগাড় করতে পারবেন?’

এরপর ভুমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ওই নেতা এক যুবককে মোটরসাইকেলে করে পাঠিয়েছিলেন সোনাচূড়া বাজারে। যদি কোনও দোকান খুলিয়ে চকোলেট বোমা আনানো যায়। কিন্তু তাও পাওয়া যায়নি।

বোমা না পেয়ে ওই অপরিচিত ব্যক্তি ভুমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতাদের বলেন পেট্রলের ব্যবস্থা করতে। এবার আর কোনও সমস্যা হয়নি। অনেক মোটরসাইকেল ছিল, তা থেকে পেট্রল বের করা হয়। এরপর তিনি বলেন যাঁদের বাড়িতে যা খালি বোতল আছে তা নিয়ে আসতে। আশেপাশের লোকজন তাঁদের বাড়ি থেকে ছোট-বড় প্রচুর খালি বোতল নিয়ে আসেন। গামছার মধ্যে ৪০-৫০ টা নানা মাপের খালি বোতল নিয়ে আসেন স্থানীয় মানুষ। এরপর ওই অপরিচিত ব্যক্তি খালি বোতলের মধ্যে পেট্রল ভরে, দেশলাই জ্বালিয়ে তার মধ্যে ফেলে দেন। তারপর ওই আগুন ধরা বোতল ছুড়তে শুরু করেন ভাঙাবেড়া ব্রিজে লক্ষ্য করে। ব্রিজে এবং রাস্তার পিচের ওপর পড়ে বোতলগুলো ভাঙছিল, আর আগুন ছিটকে যাচ্ছিল খেজুরির দিকে। এটাই নন্দীগ্রামের দিক থেকে খেজুরিতে ভুমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ বাহিনীর প্রথম প্রতিরোধ। বোমা, গুলির পালটা বোতল বোমা। ওই ব্যক্তির নাম মধুসূদন মন্ডল। ভুমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের কাছে মধুদা। বাড়ি হলদিয়ায়। নন্দীগ্রামে গিয়েছিলেন ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি। ২০১০ সালে তাঁকে  পুলিশ গ্রেফতার করেছিল মাওবাদী অভিযোগে। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির দীর্ঘ আন্দোলনের এবং সিপিআইএম বিরোধী লড়াইয়ে প্রথম সারির সৈনিক। নন্দীগ্রাম অবশ্য তাঁকে মধুসূদন মন্ডল নামে চিনত না। চিনত নারায়ণ নামে।

এরপরও গুলি চালানো এবং বোমা ছোড়া অব্যাহত থাকে খেজুরির দিক থেকে। ভোর হয় হয়। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা ভাবছিলেন, আর কিছুক্ষণ কাটিয়ে দিতে পারলেই দিনের আলো ফুটবে, আক্রমণ থামবে খেজুরির দিক থেকে। এমনই সময় প্রায় ভোর প্রায় সাড়ে পাঁচটা নাগাদ খেজুরির দিক থেকে সিপিআইএমের ছোড়া গুলি সরাসরি এসে লাগে সোনাচূড়ার বাসিন্দা কিশোর ভরত মন্ডলের পেটে। বড়োদের সঙ্গে ভরতও রাত জাগছিল। পেট থেকে নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসে। হতভম্ব হয়ে যান সকলে। মধুসূদন মন্ডল সেই নাড়িভুড়ি ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ভরতের পেটে। সেই ছবি তুলেছিলেন ওই সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরাম্যান। নন্দীগ্রামে প্রথম মৃত্যুর ফুটেজ। তারপর ভরত মন্ডলকে ট্রেকারে চাপিয়ে কয়েকজন রওনা দেন নন্দীগ্রাম হাসপাতালের দিকে। মাঝরাস্তায় মৃত্যু হয় ভরত মন্ডলের। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে প্রথম মৃত্যু। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সিপিআইএম বাহিনী ভাঙাবেড়া ব্রিজের অনেকটা কাছে চলে এসেছিল। রাতের অন্ধকারে তাদের এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে হচ্ছিল, একটু আলো ফুটতে তাদের সুবিধে হয়ে যায়। এরপর সিপিআইএম বাহিনীর ছোড়া গুলিতে পর পর মৃত্যু হয় শেখ ইমদাদুল এবং বিশ্বজিৎ সাহার। বিশ্বজিতের গুলি লেগেছিল পিঠের একদম ওপরের দিকে, গুলিটা বেড়িয়ে গিয়েছিল তলপেট দিয়ে। সেই সঙ্গে গুলি এবং বোমায় জখম হয়েছিলেন অন্তত ৩০-৪০ জন। ছ’টা-সাড়ে ছ’টা নাগাদ আক্রমণ থামিয়ে ফিরে গিয়েছিল সিপিআইএম বাহিনী। তারা ভেবেছিল এই আক্রমণের ধাক্কা আর সামলাতে পারবে না নন্দীগ্রামের মানুষ। ৩ জনের মৃত্যু, এত জন জখম, সিপিআইএম জেলা নেতারা ভেবেছিলেন, আন্দোলনের বীজ মাটিতে পোঁতার সঙ্গে সঙ্গেই তা বিনাশ করে দেওয়া গিয়েছে। আর মাথা তুলে দাঁড়াবে না আন্দোলন। এবং তাঁরা ভুল ভেবেছিলেন। এই হামলা এবং ৩ জনের মৃত্যু নন্দীগ্রামের মানুষের জেদ আরও বাড়িয়ে দিল। চোয়াল শক্ত করে ৭ জানুয়ারি ভোরে শপথ নিল দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের। ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের।

কয়েক ঘন্টার মধ্যেই প্রত্যাঘাত করল ভুমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। সকাল ন’টা-সাড়ে নটা নাগাদ ভুমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির লোকজন ঘিরে ফেলেছিলেন ভাঙাবেড়া ব্রিজের একদম পাশে নন্দীগ্রামের শঙ্কর সামন্তের বাড়ি। শঙ্কর সামন্ত তখন সোনাচূড়ায় সিপিআইএম সমর্থিত নির্দল পঞ্চায়েত সদস্য। বর্ধিষ্ণু পরিবারের শঙ্কর সামন্ত এক সময় কংগ্রেস করতেন। তারপর তিনি এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসও করেছিলেন কিছুদিন। কিন্তু সিপিআইএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের অভ্যন্তরীণ গণ্ডগোলের জন্য শঙ্কর সামন্ত ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়েন। ফরওয়ার্ড ব্লককে হারাতে সিপিআইএম শঙ্কর সামন্তকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছিল। তারপর থেকেই তিনি সিপিআইএম বলে এলাকায় পরিচিত হয়ে যান। এই শঙ্কর সামন্তকে ঘর থেকে বের করে কুপিয়ে, পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। এই খুনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন তাঁদের  দু’একজন আমাকে পরে বলেছিলেন, শঙ্কর সামন্তর ওপর তাঁদের কোনও আক্রোশ ছিল না। কিন্ত ৭ তারিখ সকালে তাঁর বাড়ির দোতলার জানলা থেকেই গুলি চালিয়েছিল সিপিআইএম বাহিনী। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ বিশ্বজিৎ সাহার পিঠের গুলি। তাঁদের বক্তব্য ছিল, সিপিআইএম বাহিনী মাটিতে দাঁড়িয়ে গুলি চালালে কিছুতেই তা পিঠের ওপরের অংশ দিয়ে ঢুকে তলপেট দিয়ে বেরতে পারে না। একমাত্র উঁচু জায়গা থেকে গুলি চালালেই তা সম্ভব। শঙ্কর সামন্তের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল সিপিআইএম বাহিনীর লোকেরা এবং দোতলার জানলা থেকেই গুলি ছোড়া হয়।

৬ জানুয়ারি রাত থেকে ৭ তারিখ সকাল পর্যন্ত ঝড় বয়ে গেল ভাঙাবেড়া ব্রিজ থেকে সোনাচূড়া, গড়চক্রবেড়িয়া হয়ে নন্দীগ্রাম বাজার পর্যন্ত। যার জেরে পুরো নন্দীগ্রামে আড়াআড়ি দু’ভাগ হয়ে গেলেন সমস্ত মানুষ। বেশিরভাগই ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে, কেউ কেউ সিপিআইএমের সঙ্গে। আর নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের প্রায় সবাই ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটিতে যোগ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন বহু সক্রিয় সিপিআইএম কর্মীও। সকলেই বুঝতে পারছিলেন, জমি রক্ষার জন্য সিপিআইএম এবং পুলিশের যৌথ আক্রমণ মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নিতে হবে। তাঁদের প্রথম সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তখনও নন্দীগ্রামে যে সমস্ত সিপিআইএম কর্মী, সমর্থক, সদস্য রয়েছেন, তাঁদের এলাকাছাড়া করার। এবং ১ নম্বর ব্লকে তা হয়ে যাওয়ার পর সীমানাবর্তী ২ নম্বর ব্লকের যেখানে সিপিআইএমের প্রভাব বেশি, সেই এলাকাও দখলে আনতে হবে। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি ৭ তারিখ সকালেই বুঝে যায়, খেজুরির দিক থেকে এবার থেকে লাগাতার আক্রমণ হবে। তাই নন্দীগ্রামকে অবিলম্বে সিপিআইএম মুক্ত করা দরকার। ভেতর থেকে প্রতিরোধ থাকলে, বাইরের আক্রমণের মোকাবিলা করা মুশকিল হয়ে যাবে। খেজুরির পাশাপাশি নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লক, দু’দিকের এই সাঁড়াশি আক্রমণ সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই ১ নম্বর ব্লকে অধিপত্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লক দখলেরও পরিকল্পনা করে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। দখল মানে সিপিআইএম উৎখাত অভিযান।

ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি যেভাবে এলাকা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল, তা আঁচ করতে খুব বেশি সময় লাগেনি সিপিআইএমের। এরই মধ্যে ঘটেছিল কয়েকটা ঘটনা। ১০-১১ জানুয়ারি নাগাদ নন্দীগ্রামে তেখালি ব্রিজের কাছে আশ্রয় শিবির তুলে নেয় সিপিআইএম। কয়েক’শো ঘরছাড়া মানুষের থাকার ঠিকানা হল খেজুরি এবং হলদিয়া। জানুয়ারির মাঝামাঝি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিআইএমের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হল দলের রাজ্য দফতর ৩১ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। চিঠি লিখলেন বকলমে জেলা কমিটির সম্পাদক লক্ষ্মণ শেঠ এবং দলের নন্দীগ্রামের নেতা নির্মল জানা। তারপর তাতে সই করলেন জেলা সম্পাদক সুধীর গিরি। সুধীর গিরি তখন রীতিমতো অসুস্থ। চিঠিতে লেখা হল, নন্দীগ্রামে দলের শ’য়ে শ’য়ে নেতা-কর্মী পরিবার নিয়ে ঘরছাড়া। যাঁরা থেকে গিয়েছেন তাঁদের ওপরও আক্রমণ চলছে। এলাকা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা স্থানীয় নেতৃত্বের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। ঘরছাড়াদের এলাকায় ফেরাতে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। পুলিশের সক্রিয়তার দাবি নিয়ে লক্ষ্মণ শেঠ নিজে এলেন  মুজফফর আহমেদ ভবনে। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু সেই চিঠি পড়ে তমলুকের সাংসদকে জানিয়ে দিলেন, ব্যাপারটা মুখ্যমন্ত্রী দেখবেন। তারপর সেই চিঠি দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতে। এরপর থেকেই লক্ষ্মণ শেঠ

চাপ দিতে শুরু করলেন মহাকরণ এবং রাজ্য নেতৃত্বের ওপর। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিআইএমের তখন একটাই দাবি, যেভাবে হোক ঘরে ফেরাতে হবে নন্দীগ্রামের এলাকাছাড়াদের। তখন রাজ্য প্রশাসনের ওপর একদিকে চাপ বাড়ছে সিপিআইএমের, অন্যদিকে চুপ করে বসে ছিল না ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটিও।

ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটিও বাড়াচ্ছে মুক্তাঞ্চল। ফেব্রুয়ারি গড়াতে না গড়াতেই নন্দীগ্রামের ১ নম্বর ব্লক কার্যত স্টেট উইদিন স্টেট। একদিকে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতৃত্বে চলছে রাজনৈতিক কর্মসূচি। তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, এসইউসিআই, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরির দল, সবাই মিলে মিটিং, মিছিল। সেখানকার সমস্ত মানুষকে একত্রিত করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে লড়াইকে গণ-আন্দোলনের চেহারা দেওয়া। অন্যদিকে, মধুসূদন মন্ডলের নেতৃত্বে চলছে পুলিশ ও সিপিআইএমকে ঠেকানোর জন্য সশস্ত্র প্রস্তুতি। সোনাচূড়া থেকে জেলিংহাম, বিস্তীর্ণ এলাকায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ। কিন্ত নন্দীগ্রামের আন্দোলনে কীভাবে যুক্ত হলেন মধুসূদন মন্ডল? কবেই বা সেখানে ঢুকল মাওবাদীরা?

 

মধুসূদন মন্ডল এবং মাওবাদী

২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি প্রথম নন্দীগ্রামে যান মধুসূদন মন্ডল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলারই হলদিয়ার দূর্গাচকে বাড়ি। মধুসূদন মন্ডল এপিডিআর করতেন। ১৯৬৬ সালে জন্ম। বাবা বিজয় কুমার মন্ডল। পাঁচ ভাই ও এক বোনের সংসার, হলদিয়ার দরিদ্র পরিবারে বড়ো হওয়া। মধুসূদনের দাদু বড়দাকান্ত মন্ডলের কিছু কৃষি জমি ছিল হলদিয়ায়। ১৯৬৪ সালে মধুসূদনের জন্মের দু’বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিল্পের জন্য সেই জমি অধিগ্রহণ করে। তখনই কার্যত শুরু হয়েছিল হলদিয়ার শিল্পায়ন প্রক্রিয়া। সেই সময় জমি অধিগ্রহণের বিনিময়ে সরকার প্রতি একর জমির দাম দিয়েছিল ২৬০০ টাকা। হ্যাঁ, এক একর জমির ক্ষতিপূরণের মূল্য দু’ হাছার ছশো টাকা। সেই সঙ্গে সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল, প্রত্যেক জমিহারা পরিবারের অন্তত একজনের চাকরি হবে। সেই চাকরি আর কোনও দিনও হয়নি।

নন্দীগ্রামের আন্দোলনে যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে শুরুর দিন থেকে অংশ নিয়েছিলেন তার মধ্যে সক্রিয় রাজনৈতিক নেতাদের বাদ দিলে প্রথম বহিরাগত মধুসূদন মন্ডল। ২০১০ সালে ২৭ জুন সিআইডি তাঁকে মাওবাদী অভিযোগে গ্রেফতার করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলা থেকে। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক খুন, খুনের চেষ্টা এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা। আমি নন্দীগ্রামে যেতে শুরু করার পর জানুয়ারির মাঝামাঝি বা শেষে প্রথম শুনি নারায়ণ নামে এক ব্যক্তির কথা। তিনি নাকি এই আন্দোলনকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তিনি গান গেয়ে এলাকায় এলাকায় ঘুরে বেড়ান। এবং, পুলিশ তাকে খুঁজছে। পুলিশ এবং স্থানীয় সিপিআইএম নেতারা সেই জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির একদম গোড়ায় আমাকে জানিয়েছিলেন, মাওবাদী নারায়ণের নেতৃত্বে  সশস্ত্র বাহিনী নন্দীগ্রাম দখলে নেমেছে। অনেক পরে জানতে পারি, এই নারায়ণই আসলে মধুসূদন মন্ডল। তারপর যখনই নন্দীগ্রামে গিয়েছি, চেষ্টা করতার তাঁর সঙ্গে দেখা করার। কিন্ত কখনই তাঁর দেখা পাইনি। নভেম্বরে সিপিআইএমের নন্দীগ্রাম পুর্নদখলের পর, ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের সময় কিংবা পরেও নন্দীগ্রামে গিয়ে দেখা করতে চেয়েছিলাম তাঁর সঙ্গে। পারিনি। অথচ তিনি নন্দীগ্রামেই ছিলেন। কিন্তু সাধারণ গ্রামবাসী বা ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতা, কেউই তাঁর খোঁজ আমাকে দেননি। বরং তাঁকে নিয়ে সোনাচূড়া, গড়চক্রবেড়িয়া এলাকায় কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই তাঁরা সতর্ক হয়ে যেতেন। সন্দেহজনকভাবে জরিপ করতেন আমাকে, বুঝতে চাইতেন মধুসূদন মন্ডলকে খোঁজ করার উদ্দেশ্য। তখনই বুঝতাম এই লোকটার এমন একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে যে, কেউই চান না তিনি ধরা পড়ে যান বা তাঁর কোনও ক্ষতি হোক। তারপর দীর্ঘদিন নন্দীগ্রাম আন্দোলন নিয়ে আর আমি ভাবিনি। মধুসূদন মন্ডলের কথাও একরকম ভুলে গিয়েছিলাম। এই লেখা শুরু করার সময় আবার মাথায় এল মধুসূদন মন্ডলের নাম। তাঁর সঙ্গে কথা না বলে নন্দীগ্রাম নিয়ে কিছু লেখা অসম্ভব। কারণ, নন্দীগ্রামে সিপিআইএমের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ এবং লড়াইয়ে ভুমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের প্রথম গৃহ শিক্ষকের নাম মধুসূদন মন্ডল, ওরফে নারায়ণ। এই লড়াইয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তিনি।

 

কী হয়েছে আগের পর্বে, পড়ুন: নন্দীগ্রাম আসলে যা ঘটেছিল #৪: সংঘর্ষ শুরুর ঠিক আগে নন্দীগ্রামে সিটু অফিস কেন ভাঙচুর করেছিলেন সিপিআইএম কর্মীরা?

 

এই লেখা যখন আমি শুরু করি মধুসূদন মন্ডল তখন জেলে। তাঁর বিরুদ্ধে যা সব অভিযোগ, কবে ছাড়া পাবেন তা ঘোর অনিশ্চিত। জানতাম তাঁর সঙ্গে জেলে গিয়ে দেখা করা বা কথা বলার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করলেও অনুমতি মেলার সম্ভাবনা কম। তাই তখন আমাকে অন্য কৌশল নিতে হল। প্রথমে খোঁজ নিলাম, কবে কোন আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে শুনানির ডেট পড়ে। জানতে পারি এক- দেড় মাস পরপর আলিপুর পুলিশ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার  শুনানি হয়। সেই সব দিনে যাওয়া শুরু করলাম আলিপুর আদালতে। কখনও পুলিশ ভ্যানে, কখনও কোর্টের লক আপে, কখনও বা কোর্টের গরাদের মধ্যে কথা বলি তাঁর সঙ্গে। এক এক দিন ৫-১০ মিনিট করে কথা হোত। প্রথম দু’ একদিন কোনও কাজের কথা হয়নি। স্রেফ নিজের পরিচয় দিতে পেরেছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে তাঁর সঙ্গে নন্দীগ্রাম নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাই। এমনভাবে বেশ কয়েকদিন কথা বলি তাঁর সঙ্গে। তিনি যেভাবে যা বলেছিলেন, তথ্য অবিকৃত রেখে কিছু শব্দ অদল-বদল করে তাঁর বয়ানেই প্রায় পুরোটাই লিখলাম। নন্দীগ্রাম নিয়ে মধুসূদন মন্ডলের অভিজ্ঞতা।

মধুসূদন মন্ডলই ওরফে নারায়ণই কি নন্দীগ্রামে প্রবেশ করা প্রথম মাওবাদী? তবে কি আন্দোলনে প্রথম থেকেই ছিল মাওবাদীরা?

চলবে

(১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে নন্দীগ্রাম আসলে যা ঘটেছিল। প্রতি পর্বে লাল রং দিয়ে আগের পর্বের লিঙ্ক দেওয়া থাকছে)

Comments are closed.