আগের পর্ব যেখানে শেষ হয়েছিল: অপরিকল্পিতভাবে শুরু হনল ১৪ মার্চ পুলিশের অভিযান। ভাঙাবেড়ায় ডিউটিতে থাকা এক অফিসার শুরু করলেন তাঁর অভিজ্ঞতা। ইট, বোম উড়ে আসছে, নার্ভ ধরে রাখতে পারল না পুলিশ……
আমি এবং কয়েকজন অফিসার তখন ভাঙাবেড়া ব্রিজ পেরিয়ে দৌড়ে ঢুকে পড়েছি নন্দীগ্রামে, হঠাৎ গুলির শব্দ পেয়ে থমকে গেলাম। প্রথমে বুঝতে পারিনি কোনদিক থেকে গুলি চলল! মুহূর্তের মধ্যে দেখলাম, কয়েক হাতের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি পুলিশ ব্রিজের ওপর থেকে গুলি চালাচ্ছে। এই সবই ঘটে গেল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। আমরা কয়েকজন তখন পুলিশের গুলি আর গ্রামবাসীদের মধ্যে পড়ে গিয়েছি। ভাঙাবেড়া ব্রিজটা দু’দিকের ঢাল থেকে একটু উঁচুতে। তাই বাঁচোয়া, না হলে তখন পুলিশের চালানো গুলি আমাদেরই লেগে যেত। সঙ্গে সঙ্গে বিপদ বুঝে আমি ফের উঠে পড়লাম ব্রিজে। পিছিয়ে গেলাম খেজুরির দিকে। তখনও পুলিশ ব্রিজ থেকে গ্রামবাসীদের দিকে গুলি চালাচ্ছে।
২০০-২৫০ মিটারের মধ্যে বেশ কয়েকজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আর গ্রামবাসীরা যেমন পারছে দৌড়ে পালাচ্ছে। আমরা নন্দীগ্রামের দিকে নেমে পড়া সত্বেও কেন পুলিশ হঠাৎই গুলি চালালো তা তখনও বুঝতে পারছিলাম না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই নন্দীগ্রামের দিকে যতদূর চোখ যায়, পুরো ফাঁকা হয়ে গেল। আমি তখন ব্রিজের ওপরে। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, ব্রিজের অন্যদিকে রাস্তায়, মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রচুর লোক মাটিতে পড়ে আছে। কে বেঁচে আছে, কে মারা গেছে বোঝা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা হল ব্রিজের ওপর। তারপর আইজি, এসপি এগোলেন নন্দীগ্রামের দিকে। সঙ্গে ফোর্স। আমিও আবার ব্রিজ পেরোলাম। শুধু গোঙানোর শব্দ ছাড়া চারিদিকে আর কোনও আওয়াজ নেই। মাটিতে পড়ে লোকজন ছটফট করছে।
চারদিকে চাপ-চাপ রক্ত। পুজোর জিনিসপত্র সব উল্টে পড়ে আছে, চটি, জুতো, লাঠি পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। গণ্ডগোলে ডিউটি করতে গিয়ে এরকম ইটবৃষ্টি এবং বোমার সামনে বহুবার পড়েছি। কিন্তু তার জন্য কখনও এভাবে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে হয়নি। বিশেষ করে যখন কয়েকজন ব্রিজ পেরিয়েই গিয়েছিলাম, পুরো ফোর্স ব্রিজ পেরিয়ে দৌড় শুরু করলে গ্রামবাসীরা এমনিই পালিয়ে যেত। সেই অবস্থায় সিনিয়র অফিসাররা কেন হঠাৎ করে গুলি চালানোর নির্দেশ দিলেন তা তখনও বুঝতে পারছিলাম না।
চারদিকে লোকজনকে মাটিতে পড়ে ছটফট করতে দেখে তখন মনে হচ্ছিল বড়ো একটা গোলমাল হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছিল বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছে। যদিও তখনও পর্যন্ত বুঝতে পারছি না, কতজন মারা গিয়েছে। তবে একটা জিনিস বুঝতে পারছিলাম, যেই অর্ডার দিক না কেন, এই ইট, পাথর আর বোমার মধ্যে স্রেফ নার্ভ ধরে রাখতে না পেরে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে। প্যানিক ফায়ারিং। সামনে থাকা নিচুতলার কর্মীদের উপর তখন একদিকে ইট, বোমা পড়ছে। অন্যদিকে, কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় চোখ জ্বলছে। এর মধ্যে গুলি চালানোর অর্ডার পেয়ে তারা টার্গেট ফায়ারিং করেছে। এর ফলাফল কী হতে পারে তা ভাবেনি। প্রায় আড়াই মাস ধরে অবরুদ্ধ নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে এমনই সাত-পাঁচ ভাবছি, এরই মধ্যে কেউ একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময়কে বলল, সবকটা বডি তুলে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে।
সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ঠিক হল, তিনটে দলে ফোর্সকে ভাগ করা হবে। দুটো দল তালপাটি খাল বরাবর তল্লাশি করতে করতে পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে যাবে। যাকে আমাদের ভাষায় বলে সার্চ পার্টি। এই দুটো দল গ্রামের ভেতরে তল্লাশি করতে করতে সামনের দিকে এগোবে। এই তল্লাশি অভিযান খানিকটা হওয়ার পর তৃতীয় দলটা সোজা পিচ রাস্তা ধরে সোনাচূড়ার দিকে এগোবে। ভাঙাবেড়া ব্রিজ থেকে এক কিলোমিটারের মতো সোনাচূড়ার দিকে এগিয়ে তিনটে দল এক জায়গায় একত্রিত হবে। তারপর একসঙ্গে বড়ো ফোর্স পিচের রাস্তা দিয়ে যাবে সোনাচূড়ায়। সেখানে হবে ক্যাম্প। এরকম পরিকল্পনার কারণ, ভাঙাবেড়া ব্রিজের দু’দিকে তালপাটি খাল বরাবর বেশ কিছুটা জনবসতি রয়েছে। দু’দিকেই গ্রাম, একশো-দেড়শো করে ঘর। সেখানে যদি কেউ লুকিয়ে থাকে তাদের ধরতে এই পরিকল্পনা। আমি গেলাম পশ্চিমদিকের দলের সঙ্গে। ব্রিজের পাশেই খালের ধারে একটা পাথরের বড়ো ল্যাম্প পোষ্ট। প্রথমেই চোখে পড়ল, ল্যাম্প পোষ্টে তিন-চার জায়গায় পাথর খসে গিয়েছে গুলির দাগে। তখনও টাটকা বারুদের গন্ধ। তার পাশে তখনও জড়ো করে রাখা ইটের স্তুপ।
চারিদিকে লণ্ডভণ্ড হয়ে পরে রয়েছে পুজোর জন্য আনা বিভিন্ন দেবদেবীর মাটির মূর্তি, থালা, বাটি, ফুল, মালা, ধুপকাঠি। মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে প্রচুর পুরুষ-মহিলার চটি, জুতো। গুলি চলতে শুরু হওয়ার পর যে যেমনভাবে পেরেছে দৌড়ে পালিয়েছে। খালের পাশ দিয়ে যে ইটের রাস্তাটা পশ্চিমদিকে গিয়েছে তা ধরে একটু এগোতেই একটা বড়ো বাড়ি। স্থানীয় পুলিশ কর্মীদের কেউ একজন বলল, এটাই পঞ্চায়েত সদস্য শঙ্কর সামন্তর বাড়ি। তার আশেপাশে পর পর আরও কয়েকটা বাড়ি। সব খালি। কোথাও কোনও জন মানুষের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। কোনও আওয়াজ নেই। প্রায় ঘণ্টাখানেক পুরো গ্রামে তল্লাশি চালিয়ে আমরা আস্ত আস্তে এগোলাম উত্তর দিকে। একটু এগোতেই যতদূর চোখ যায় ধূ ধূ ফাঁকা মাঠ। গ্রাম শেষ। আর কোথাও কারও লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনা নেই। হেঁটে গিয়ে উঠলাম পিচ রাস্তায়। একটা ছোট্ট মতো মোড়। সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন এসপি, আইজি। ভাঙাবেড়া থেকে তালপাটি বরাবর পূর্বদিকে পুলিশের যে ফোর্সটা গিয়েছিল, তারাও কিছু বাদে এসে যোগ দিল ওই মোড়ে। শুনলাম, ওরা কিছু বন্দুক উদ্ধার করেছে। সত্যি না মিথ্যে জানি না। তবে আমি যেদিকে সার্চ পার্টিতে ছিলাম, সেখানে কোনও বন্দুক বা অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। ঠিক হল, পিচ রাস্তা দিয়ে হেঁটে সোনাচূড়া যাওয়া হবে। ওই মোড় থেকে আইজি অরুণ গুপ্তা চলে গেলেন খেজুরি থানায়।
গোটা ঘটনার এফআইআর করতে হবে। আমরা এগোলাম সোনাচূড়ার দিকে। মাথার ওপর খটখটে রোদ, তবে গরম বিশেষ নেই। মাথায় খালি ঘুরপাক খাচ্ছে নানান প্রশ্ন, কত লোক মারা গেল, তখনও তা জানি না। বুঝতে পারছিলাম না এই যে পুলিশ ঢুকে পড়ল, এবার নন্দীগ্রামের আন্দোলন কি শেষ, নাকি নতুন করে আবার আন্দোলন শুরু হবে। কী হবে এই বেহিসাবি পুলিশ অভিযানের ইমপ্যাক্ট?
হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে প্রায় দেড়টা-দু’টো নাগাদ পৌঁছলাম সোনাচূড়া বাজরে। রাস্তার আশপাশে কোথাও একটা লোকেরও দেখা নেই। সোনাচূড়া বাজার পুরো শুনশান। সমস্ত দোকান-পাট বন্ধ। কয়েক ঘণ্টা আগে যে ভাঙাবেড়া ব্রিজে কান পাতা যাচ্ছিল না মানুষের চিৎকার, স্লোগান, শাঁখের আওয়াজে, হঠাৎই কয়েক রাউন্ড গুলির পর যেন গোটা এলাকাটা নো-ম্যানস ল্যান্ডে পরিণত হয়েছে। জাস্ট উবে গেছে মানুষগুলো। তখন একে একে ফোন আসতে শুরু করেছে পরিচিতদের কাছ থেকে। সবারই এক প্রশ্ন, টেলিভিশনে দেখাচ্ছে, অনেক লোক মারা গিয়েছে, পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে। বাড়ির লোক থেকে পরিচিত সবাই জানতে চাইছে, ঠিক কী হয়েছে, আমি ঠিক আছি কিনা। সোনাচূড়া বাজারে রাস্তার পাশেই একটা বন্ধ দোকানের সামনে বসলাম।
বাজার থেকে পশ্চিম দিকে যে রাস্তাটা নেমে গিয়েছে, সেটা ধরে একটু এগোলেই ডান হাতে একটা স্কুল। সেখানে ক্যাম্প হওয়ার কথা। একটা বড়ো ফোর্স রওনা দিল স্কুলের দিকে। কী করব বুঝতে পারছি না, কতক্ষণ থাকতে হবে তাও জানি না। খালি ভাবছি কতক্ষণে এই মৃত্যুপুরী থেকে বেরবো। এভাবেই কাটল আরও কয়েক ঘন্টা। ফোর্স ততক্ষণে ওই স্কুলে ক্যাম্প করে ফেলেছে। আমরা কয়েকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছি। পূর্ব মেদিনীপুরের এক অফিসার বললেন, আমাকে সোনাচূড়া ক্যাম্পে থাকতে হবে। তাঁকে বললাম, কোনওভাবেই সম্ভব না, আমাকে ফিরতেই হবে। রাত প্রায় আটটা নাগাদ ছাড়া পেলাম সোনাচূড়া থেকে। আর এক মূহুর্ত সময় নষ্ট না করে সোজা রওনা দিলাম কাঁথির দিকে। যে রাস্তা দিয়ে কয়েক ঘন্টা আগে হেঁটে গিয়েছি, সেখান দিয়েই ফিরলাম।
আগের দিন রাতে কাঁথিতেই ছিলাম। ততক্ষণে জেনে গিয়েছি ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে পুলিশ অভিযানে। আমি যেখানে ছিলাম, সেই ভাঙাবেড়া ব্রিজে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। গোকুলনগরে ৩ জনের। ফেরার সময় পুরো খেজুরিতেই দেখছিলাম নানান জায়গায় মানুষের জটলা। ফেরার সময় গাড়িতে বসে ফোনে কথা বলেছিলাম নানান লোকের সঙ্গে। কথা বলতে বলতেই বুঝতে পারছিলাম, সকালের আধ ঘন্টা পুলিশ অভিযানের ঝড় বয়ে গিয়েছে কলকাতা সহ গোটা রাজ্যের ওপর দিয়ে। শুনলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা থেকে রওনা দিয়েছেন নন্দীগ্রামের দিকে। তখনও আমার কাছে পরিষ্কার নয়, কেন, কীভাবে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল। ১৪ জন মারা গিয়েছে বিশ্বাই করতে পারছিলাম না।
প্রায় মাঝরাতে কাঁথি ফিরলাম। পরদিন আবার ডিউটি, সকাল সকাল বেরতে হবে। ১৫ মার্চ সকাল ১১ টা নাগাদ পৌঁছলাম হেঁড়িয়া মোড়ের কাছাকাছি। আমরা কয়েকজন অফিসার। ডিআইজি এন রমেশবাবু ব্রিফ করবেন। যাওয়ার সময় গাড়িতে বসেই শুনতে পেলাম, অনেক জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেস রাস্তা অবরোধ করেছে। দু’একটা ছোট-খাট অবরোধ দেখলামও। কিন্তু মূল অবরোধটা হেঁড়িয়া থেকে নন্দকুমার পর্যন্ত। শুরু হল ডিআইজির ব্রিফিং। বললেন ‘চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক আছে। সিচুয়েশন ট্যাকেল করতে হবে।’ কিছু দূরেই মেন রোডে একটা অবরোধ হচ্ছিল, আমদের কয়েকজনকে যেতে বললেন, অবরোধ তুলতে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে অবরোধ। আমি কিছু ফোর্স নিয়ে গিয়ে দেখি পরিস্থিতি হাতের বাইরে। মানুষ প্রচণ্ড উত্তেজিত, অবরোধ তুলতে গেলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। আগের দিন পুলিশের অভিযানে ১৪ জন মারা গিয়েছে, পুলিশ দেখে অবরোধকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ল। গুলি চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ডিআইজি’কে জানিয়ে দিলাম অবরোধ তোলা যাবে না। শুনে তিনি ক্ষুব্ধ হলেন। তারপর আমাদের বললেন, সোনাচূড়া চলে যেতে। সেদিন দু’একজন সিনিয়র অফিসারের কথা শুনে মনে হয়েছিল, তাঁরা চাইছেন, অবরোধ তোলাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে ক্ষিপ্ত জনতার সংঘর্ষ হোক। তাতে দু’চার জন পুলিশ গুরুতর জখম হলে বা তাঁদের মৃত্যু হলেই যেন ভালো। তাতে যেন আগের দিনের পুলিশি অভিযান ও তাতে ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা ব্যালেন্স করা যাবে। রাজ্যজুড়ে বার্তা দেওয়া যাবে, কীভাবে পূর্ব মেদিনীপুরে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ!
এরপর আমি রওনা দিলাম সোনাচূড়ার দিকে। ভাঙাবেড়া ব্রিজে পৌঁছে পুরো অবাক হয়ে গেলাম। গোটা এলাকা লাল পতাকায় মোড়া। যত সোনাচূড়ার দিকে এগোচ্ছি তত সিপিআইএমের লাল পতাকা বাড়ছে। ১৪ মার্চ রাত পর্যন্ত একটা পতাকাও ছিল না কোথাও। প্রায় তিনমাস একজন সিপিআইএম কর্মীও ছিল না যেখানে, এক রাতের মধ্যে সেই এলাকাটাকে আর চেনা যাচ্ছে না। ১৫ মার্চ সোনাচূড়া যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল, সিপিআইএমের বড়ো কোনও সমাবেশ আছে সামনে। ১২ ঘন্টার মধ্যে কীভাবে হল এই মহাজাগতিক কাণ্ডকারখানা? কারা, কী উদ্দেশ্যে রাতারাতি লাগাল এত লাল পতাকা? কখনই বা লাগাল? এবং শুধু রাস্তার দু’ধারেই নয়, বিভিন্ন বাড়িতে উড়ছে সিপিআইএমের লাল ফ্ল্যাগ। পুলিশের অভিযান এবং তারপরে এক রাতের মধ্যে কী এমন ঘটল যে নন্দীগ্রামে আন্দলনের মূল কেন্দ্র রাতারাতি দলবদল করে নিল?
এক অফিসারের অভিজ্ঞতা: গোকুলনগর, অধিকারীপাড়া
ভাঙাবেড়া ব্রিজের দিকে আইজি, এসপি রওনা দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমরা খেজুরি থেকে এগোলাম গোকুলনগর, অধিকারীপাড়ার দিকে। তেখালি ব্রিজ পর্যন্ত গাড়িতে গেলাম। ব্রিজের কাছে গাড়ি থেকে নামতেই শুনতে পেলাম কীর্তণের আওয়াজ। তেখালি ব্রিজ থেকে মোরামের রাস্তা পূর্ব দিকে নেমে গিয়েছে গোকুলনগর, অধিকারীপাড়ার দিকে। তালপাটি খাল বরাবর। আমরা পুরো ফোর্স নিয়ে এগোতে শুরু করলাম সেই মোরামের রাস্তা ধরে। আমাদের ডানদিকে তালপাটি খাল, বাঁদিকে মাঠ, আল ধরে রাস্তা চলে গিয়েছে। আমরা পায়ে হেঁটে সামান্য এগোতেই কীর্তণের আওয়াজ বেড়ে গেল। সামনে তখন বিরাট জমায়েত। মোরামের রাস্তাতেই বিভিন্ন দেব-দেবীর মাটির প্রতিমা, কয়েক’শো মহিলা তাঁর সামনে বসে পুজো করছে। সঙ্গে প্রচুর পুরুষও। সব মিলিয়ে হাজারখানেক মানুষের জমায়েত থেকে আমরা তখন ৪০০- ৫০০ মিটার মাত্র দূরে।
আমাদের ওপর নির্দেশ ছিল, অবরোধ হঠিয়ে অধিকারীপাড়ায় ঢোকার। সামনেই মোরামের রাস্তা কাটা। একটু এগোতেই উলূধ্বনি, শাঁখ, ঘন্টা বাজানো অনেক বেড়ে গেল। বুঝতে পারলাম এরা কিছুতেই পুলিশকে এগোতে দেবে না, তাই এমন রাস্তা আটকে পুজোর প্ল্যান করেছে। রাস্তাটাও বেশ সরু। অবরোধ না হঠিয়ে এগনো সম্ভব নয়। আমরা বারবার পুরো জমায়েতকে সরে যেতে বললাম, কিন্তু কে কার কথা শোনে।
বাধ্য হয়েই তখন ফোর্সকে বললাম, এগোতে। কিছু পুলিশকর্মী এগিয়ে মাটির প্রতিমা তুলতে গেল রাস্তা থেকে। পুলিশ মাটির প্রতিমায় হাত দিতেই তুলকালাম শুরু হয়ে গেল। মহিলারা লাঠি, ঝাঁটা, খুন্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল পুলিশের ওপর। আমাদের সঙ্গে কিছু মহিলা পুলিশও ছিল। তারা এগলো মহিলাদের বাধা দিতে। আমাদের ফোর্সের হাতে লাঠি ছিল ঠিকই, কিন্তু তা পুলিশের ব্যবহারের লাঠি। ছোট সাইজের। ওদের মহিলা এবং পুরুদের হাতে বড় বড় লাঠি আর বাঁশ। তাই দিয়েই আমাদের এগিয়ে যাওয়া পুলিশকর্মীদের মারতে শুরু করল। যাচ্ছেতাই অবস্থা। আমাদের ৫০-৬০ জন পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ৫০০-৬০০ স্থানীয় মানুষ। সেই সঙ্গে পিছন থেকে শুরু হয়ে গেল ইটবৃষ্টি। প্রচুর ইট জড়ো করা ছিল মাঠে। লোকজনও রেডি ছিল। আমাদের দিকে উড়ে আসতে শুরু করেছে প্রচুর ইট, পাথর। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে আমাদের ফোর্সের ধস্তাধস্তি হচ্ছে। তার মধ্যে ইট পড়ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার অর্ডার দিলাম। সঙ্গে রাবার বুলেট। ফোর্স কিছু কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটালোও, কিন্তু কাঁদানে গ্যাস ছিল অত্যন্ত কম। শুধু তাই নয়, বুঝতে পারছিলাম গ্রামবাসীদের এই মারমুখী মেজাজ দেখে অনেক পুলিশের লোকই পালিয়ে যাচ্ছে। অনেকে লুকিয়ে পড়েছে বাড়ির আড়ালে। কয়েকজনকে দেখলাম তেখালি ব্রিজের দিকে দৌড়াতে। সারা জীবনে অনেক ল-অ্যান্ড অর্ডার ডিউটি করেছি। কিন্তু এমন অপরিকল্পিত অভিযান, পরিস্থিতির ভুল অ্যাসেসমেন্ট কোথাও দেখিনি।
সেদিনই আমি প্রথম নন্দীগ্রাম গিয়েছিলাম। সেখানে দু’আড়াই মাস ধরে যা যা ঘটেছিল, সংবাদপত্র পড়ে কিংবা টেলিভিশনে খবরে দেখে জানতাম। প্রত্যক্ষ কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। আগের দিনে দুপুরে কোলাঘাটে একটা অডিটরিয়ামে অফিসারদের ব্রিফিং হয়েছিল ১৪ তারিখের অভিযান নিয়ে। সিনিয়র অফিসাররা সব ব্রিফ করেছিলেন নন্দীগ্রাম অভিযানের প্ল্যানিং কী হবে তা বলার জন্য। সেখানে এক সিনিয়র অফিসার বলেছিলেন নন্দীগ্রামের আন্দোলন সংবাদমাধ্যমে তৈরি করা। কাগুজে বাঘ সব। কিছু মানুষ বাধা টাধা দিতে পারে, কিন্তু পুলিশ দেখলে পালিয়ে যাবে। চিন্তার কিছু নেই। তাছাড়া ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়েছিল, বাধা যাই আসুক, পুলিশকে এলাকায় ঢুকতে হবে। কিন্তু তেখালি ব্রিজ থেকে গোকুলনগর দিকে এগোতেই পারছিলাম না আধ ঘণ্টা ধরে। একে সরু মোরামের রাস্তা, একদিকে খাল, অন্যদিকে মাঠ। এমন মরিয়া প্রতিরোধ হঠিয়ে এগোতে গিয়ে আমরাই তখন আক্রান্ত হয়ে গিয়েছি। তখনই বুঝতে পারছিলাম, নন্দীগ্রামের মানুষের প্রতিরোধ নিয়ে সিনিয়র অফিসারদের অ্যাসেসমেন্টে মারাত্মক ভুল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই মুহূর্তে পিছু হঠার আর কোনও জায়গা নেই।
মিনিট দশেকের মধ্যেই আমাদের সঙ্গে থাকা কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট শেষ হয়ে গেল। গ্রামবাসীরা অনেক বালতিতে জল ভরে রেখেছিল। তার মধ্যে ওই এলাকায় বড়ো বড়ো গাছ ছিল। হাওয়াও ছিল উত্তর দিক থেকে। তাই কাঁদানে গ্যাসে কাজও হচ্ছিল না তেমন। মিনিট ৪০-৫০ হয়ে গিয়েছিল, আমাদের ১৫-২০ জন ততক্ষণে মারাত্মকভাবে জখম। কিছু ফোর্স পালিয়ে গিয়েছে। যা তা ছন্নছাড়া অবস্থা। এই অবস্খায় কী করবো জানার জন্য আমরা দু-তিনজন নানা অফিসারকে ফোন করার চেষ্টা করছি, কিন্তু কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। আমার পাশেই থাকা একজন অফিসার হঠাৎই ফোনে পেয়ে গেলেন এক সিনিয়র অফিসারকে। তাঁকে দ্রুত জানানোও হল, গোকুলনগরে আমাদের পরিস্থিতি। বলা হল, আমাদের কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট সব শেষ। কিছু গ্রামবাসী আহত হয়েছে, আমাদের লোকও জখম হয়েছে কয়েকজন। কাঁদানে গ্যাস নিয়ে ফোর্স পাঠানোর জন্য বলা হল ওই সিনিয়র অফিসারকে। সব শুনে তিনি শুধু বললেন, দেখছি। কিন্তু কিছুই করলেন না। আমরা তালপাটি খালের ধারে মোরামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। পুলিশের যে কাঁদানে গ্যাস শেষ, রাবার বুলেট শেষ স্থানীয় লোকজনও তখন বুঝে গেছে। আর তা বুঝতে পেরেই কিছুক্ষণের মধ্যে আরও বেশি লোক জমায়েত হতে শুরু করল সেখানে। কাঁদানে গ্যাসের জন্য মানুষজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছিল তারা আবার মোরামের রাস্তায় জড়ো হতে শুরু করল এদিক-ওদিক থেকে। আবার ইট ছুড়তে শুরু করলে আমাদের লক্ষ্য করে। তখন আত্মরক্ষার জন্য আর কিছু করার ছিল না গুলি চালানো ছাড়া। বাধ্য হয়েই গুলি চালানোর অর্ডার দেওয়া হয়। কয়েক রাউন্ড ফায়ারিং হতেই পুরো জমায়েতটা পালাতে শুরু করে। আমাদের ফোর্সের ফায়ারিংয়ে সেদিন গোকুলনগর, অধিকারীপাড়ায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। জখম হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। পুরো জমায়েতটা পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা অধিকারীপাড়ার দিকে এগোই। সেখানে গিয়ে ক্যাম্প করা হয়।
সেদিন দুপুর নাগাদ খবর পেলাম, ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে আরও ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটে গিয়েছে। বিকেলের পর থেকেই একটা অদ্ভুত জিনিস সেদিন নন্দীগ্রামে দেখেছিলাম। সেটাও আমার গোটা পুলিশ জীবনে দেখা বিরল অভিজ্ঞতা। গুলি চালানোর পর পুরো এলাকা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। প্রায় সন্ধে পর্যন্ত ওখানে ছিলাম। বিকেল থেকেই দেখছিলাম, গ্রামের পর গ্রামে বাড়ি ফাঁকা। সকাল থেকে হাজার হাজার মহিলা, পুরুষ, বাচ্চার জমায়েত ছিল বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু গুলি চালিয়ে আমরা এলাকায় ঢুকতেই গ্রামের পর গ্রাম ফাঁকা হয়ে যায়। কোথাও গুলি চললে, লোক মারা গেলে সাধারণত এমনটা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সেদিন তাই হয়েছিল নন্দীগ্রামে। তার কারণ সেদিন সেই মুহূর্তে বুঝতে পারিনি। বুঝেছিলাম পরে। সন্ধে নামার সঙ্গে সঙ্গেই সেদিন সিপিআইমের প্রচুর লোক ঢুকে পড়েছিল নন্দীগ্রামে।
সেদিন সন্ধেবেলা আমার পরিচিত এক অফিসারের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল। গোকুলনগরে তো গ্রামবাসীদের ধস্তাধস্তি হয়েছে, মারপিট হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। তারপর আমাদের কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট শেষ হয়ে গেলে গুলি চালাতে হয়। কিন্তু ভাঙাবেড়া ব্রিজে তো গ্রামবাসীরা পুলিশের থেকে অনেক দূরে ছিল। গ্রামবাসীরা তো ইট, বোমাই ছুড়ছিল, তবে সেখানে এত গুলি চালাতে হল কেন? এমন ইট, বোমার সামনে তো পুলিশ বহু ক্ষেত্রেই পড়ে, কিন্তু তা থামাতে ১১ জনের মৃত্যু হয় না!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রাম অভিযান
১৪ মার্চ সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে নন্দীগ্রামের দিকে রওনা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে কবীর সুমন, মুকুল রায়, দোলা সেন, অনুরাধা পুততুন্ড এবং আরও কয়েকজন। রাত আটটা-সাড়ে আটটা নাগাদ চন্ডিপুরের মোড়ে পৌঁছল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়। তখনও সেখানে সিপিআইএমের অবরোধ চলছে। অবরোধে আটকে গেলেন তৃণমূল নেত্রী। আর কনভয় পৌঁছানো মাত্রই অবরোধকারীদের গলার জোর বেড়ে গেল। শুরু হল স্লোগান। ‘মমতা ব্যানার্জি গো-ব্যাক’, ‘মমতা ব্যানার্জি দূর হঠো’। ‘বাইরে থেকে এসে নন্দীগ্রাম অশান্ত করতে দিচ্ছি না, দেব না’, এমন নানান স্লোগানে কেঁপে উঠল চন্ডিপুরের মোড়। চার-পাঁচ গাড়ির কনভয়ের একদম প্রথম গাড়ির সামনে বাঁদিকের সিটে বসে মমতা জেদ ধরলেন, রাতেই তিনি নন্দীগ্রামে ঢুকবেন। দিশেহারা অবস্থা পুলিশের। গাড়িতে বসে মমতা ব্যানার্জি, সামনে এক নাগাড়ে সিপিআইএমের স্লোগান এবং অবরোধ, এভাবে কাটলো এক ঘণ্টারও বেশি। মমতার গাড়ির সামনে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক তখন ঘোরাঘুরি করছি। তৃণমূল নেত্রীর একদম সামনে তখন আমি আর সিএনএন-আইবিএনের সৌগত মুখোপাধ্যায়। দু’জনেই বললাম, ‘এত রাতে ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে না। কোথায় কী পরিস্থিতি হয়ে আছে, কেউ জানে না।’ গাড়ির পেছনের সিট থেকে আমাদের কথাকেই সমর্থন করলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। শোভন প্রথম থেকেই গাড়ির পিছনের সিটে বসে বলছিলেন, দিদি, এতো রাতে নন্দীগ্রামে ঢোকা ঠিক হবে না। কিন্তু তৃণমূল নেত্রীরও জেদ, রাতেই তিনি যাবেন নন্দীগ্রাম। শেষমেশ প্রায় আড়াই-তিন ঘন্টা প্রবল অবরোধের মুখে তীব্র গালিগালাজ সহ্য করে গাড়িতে বসে থাকার পর রাত ১১ টা নাগাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিলেন, তমলুকে যাবেন। সেখানেই থাকবেন রাতে। আমিও তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে ফিরলাম তমলুকে।
পড়ুন আগের পর্ব: নন্দীগ্রাম আগে যা ঘটেছিল #১০: নিরুপম সেনকে ফোন শুভেন্দু অধিকারীর! পুলিশ পাঠাবেন না, সর্বনাশ হবে
তমলুকের গ্রিন ভ্যালি হোটেলে আগের দিন পৌঁছে একটা বড় ঘর বুক করেছিলাম। তমলুক ফেরার সময় ফোন এল হোটেল থেকে, ‘দাদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের হোটেলে আসছেন। আপনার ঘরটা ওনাকে দিয়ে, আপনাকে একটা অন্য ঘরে শিফট করে দিলে সমস্যা হবে? আমাদের আর কোনও ভালো বড় ঘর নেই।’ ‘না না, কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ঘরে তো আমার সব জিনিসপত্র এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে,’ বললাম। হোটেল থেকে বলল, ‘কোনও সমস্যা হবে না, আমরা সব ঠিক করে রেখে দিচ্ছি।’ হোটেলে পৌঁছতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘না না, তুমি তোমার ঘরে যাও, আমি ছোট ঘরে থাকতে পারব, কোনও সমস্যা হবে না।’ আমরা যতই বলি, ‘আপনি ঘরে যান’, উনিও নাছোড়, কিছুতেই যাবেন না। শেষমেশ আমাকে পালটিয়ে যে ঘরটা দেওয়া হয়েছিল, সেটা প্রথমে ঢুকে দেখলেন তৃণমূল নেত্রী। তারপর ঢুকলেন, আমার বুক করা দোতলার বাঁদিকের ১০১ নম্বর ঘরে। ওই ঘরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাতে থাকলেন দোলা সেন এবং অনুরাধা পুততুণ্ড। রাত ১ টা নাগাদ সবার খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে ঘরে গেলেন রাজ্যের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী।
পরদিন থেকে শুরু হল তাঁর নন্দীগ্রাম লড়াই। নন্দীগ্রাম আন্দোলন যখন জানুয়ারির গোড়ায় শুরু হয় তখন সিঙ্গুর নিয়ে কলকাতায় লাগাতার অনশন করে দক্ষিণ কলকাতার নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তাই এই আন্দোলনের একদম শুরুতে থাকতে পারেননি। বরং বলা যেতে পারে, তিনি যথার্থভাবে নন্দীগ্রামে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন ১৪ মার্চ থেকে।
যাঁর কিছুই হারানোর নেই, লড়াই করে তাঁকে হারানো যে কতটা কঠিন তা তখনও বুঝে উঠতে পারেননি সিপিআইএমের মত সংগঠিত দলের তাবড় নেতারা। তবে তার কিছুটা আঁচ সিপিআইএম পেতে শুরু করে ১৫ মার্চ, ২০০৭ থেকে।
১৫ মার্চ, ২০০৭
পরদিন ১৫ মার্চ সকাল সাড়ে আটটা-নটা নাগাদ নন্দীগ্রামের দিকে রওনা হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর গাড়ির পেছনে আমার গাড়ি। নন্দকুমার হয়ে তৃণমূল নেত্রীর কনভয় এগোচ্ছে চন্ডিপুরের দিকে। চন্ডিপুরের মোড়ে তখন আর কোনও অবরোধ নেই। বরং চন্ডিপুর পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে অনেক জায়গাতেই তৃণমূল কর্মী, সমর্থক এবং মানুষের জটলা। প্রায় সব জায়গাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি থামছে আর গাড়ি ঘিরে লোকজনের আকুল আর্তি, দিদি আমাদের বাঁচান। চন্ডিপুর থেকে নন্দীগ্রামের দিকে ঘুরল আমাদের কনভয়। তৃণমূল নেত্রীর কনভয় প্রথম সিপিআইএমের অবরোধে পড়ল হাঁসচড়া নামে একটা জায়গায়। তারপর রেয়াপাড়া। দুটি জায়গাই তখনও খাতায়-কলমে সিপিআইএমের ঘাঁটি!
চলবে
(১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে নন্দীগ্রাম আসলে যা ঘটেছিল। প্রতি পর্বে লাল রং দিয়ে আগের পর্বের লিঙ্ক দেওয়া থাকছে)
Comments are closed.