১৪ই মার্চ পুলিশ অভিযানের দিন নন্দীগ্রামে দুজনকে খুনের অভিযোগে লক্ষণ শেঠের বিরুদ্ধে নতুন মামলা সিআইডির।
ফের জেগে উঠল নন্দীগ্রাম। যে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন এক সময় তোলপাড় ফেলেছে রাজ্য রাজনীতিতে, ২০০৭ সালে যেখানে টানা ১১ মাস ধরে লাগাতার সংঘর্ষ, খুনোখুনি চলেছে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে তৎকালীন শাসক সিপিএমের, সেই নন্দীগ্রামে ১১ বছর আগে দুই ব্যক্তিকে অপহরণ এবং খুনের মামলায় নতুন করে কেস শুরু করল সিআইডি।
বৃহস্পতিবার এই কেস শুরু করা হয়েছে। প্রাক্তন সাংসদ লক্ষণ শেঠসহ ১৫ জনের নামে নির্দিষ্টভাবে মামলা চালু করে তদন্ত শুরু করতে চলেছে ভবানীভবন। ১৪ ই মার্চ ২০০৭ নন্দীগ্রামে পুলিশ অভিযান হয়, যাতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেদিনই দুর্গাপদ মাইতি এবং সুব্রত সামন্ত নামে আরও দুজনকে খুন করে তাঁদের মৃতদেহ সিপিএম লোপাট করেছিল বলে সম্প্রতি নন্দীগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। যে অভিযোগের ভিত্তিতে এদিন সিআইডি মামলা শুরু করল।
সূত্রের খবর, এ বছর ২রা মার্চ নন্দীগ্রামের দুটি পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় লক্ষণ শেঠ এবং আরও ১৪ জনের নামে। অভিযোগে জানানো হয়, দুর্গাপদ মাইতি এবং সুব্রত সামন্ত নামে দুই ব্যক্তিকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছিল ১৪ মার্চ। তারপর তাঁদের মৃতদেহ লোপাট করে দেওয়া হয়। ১১ বছর পর তাঁদের পরিবারের সদস্যরা কেন অভিযোগ জানালেন তা নিয়েও খানিকটা বিভ্রান্তি তৈরি হয় জেলার পুলিশ অফিসারদের মধ্যে। পুরো বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। সম্প্রতি সিআইডি অফিসাররা এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নন্দীগ্রামে যান। সেখানে অফিসাররা অভিযোগকারী পরিবার দুটির সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি ঘুরে দেখেন বিভিন্ন এলাকা। নন্দীগ্রাম থেকে ফিরে প্রাথমিক একটা রিপোর্টও তদন্তকারীরা দেন প্রশাসনিক কর্তাদের। যার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবারই ২০০৭ সালের ১৪ ই মার্চ এই দুজনকে অপহরণ এবং খুনের অভিযোগে নির্দিষ্ট মামলা চালু করা হয়। সূত্রের খবর, প্রথমিক তদন্তে সিআইডি জানতে পেরেছে, দুর্গাপদ মাইতি এবং সুব্রত সামন্ত ২০০৭ সালের ১৪ ই মার্চ থেকে এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ। তাঁরা কীভাবে নিখোঁজ হলেন, কোন জায়গা থেকে তাঁদের অপহরণ করা হয়েছিল সবই সিআইডির গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন। কিন্তু এত বছর বাদে কোন পথে এই মামলার তদন্ত শুরু করা হবে তা নিয়ে গোয়েন্দাদের মধ্যেও কিছুটা সংশয় রয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ১৪ই মার্চ পুলিশি অভিযানে যে ১৪ জনের মৃত্য হয়েছিল, ইতিমধ্যেই সেই মামলার তদন্ত করেছে সিবিআই। যে মামলায় সিবিআই রাজ্যের একাধিক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট মামলা শুরুর অনুমতিও চেয়েছিল। কিন্তু সিবিআইয়ের তদন্তে সেই সময় খুশি হতে পারেনি রাজ্যের বর্তমান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি, ২০০৭ সালের ১০ই নভেম্বর একাধিক ব্যক্তিকে খুন এবং মৃতদেহ লোপাটের একটি পৃথক মামলায় আগেই সিআইডি লক্ষণ শেঠসহ একাধিক সিপিএম নেতাকে গ্রেফতার করে সিআইডি। কয়েক মাস জেলে থাকার পর লক্ষণ শেঠ সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান। তারপর সেই মামলারও বিশেষ অগ্রগতি হয়নি। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ফের লক্ষণ শেঠসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা চালু করল সিআইডি।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের পর থেকে নন্দীগ্রামে বিজেপি অনেকটাই শক্তিবৃদ্ধি করে। এমনকী, ২০১৬ সালের শেষে তমলুক লোকসভার উপনির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে নন্দীগ্রাম বিধানসভায় দু’নম্বরে উঠে আসে বিজেপি। প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষণ শেঠ ইতিমধ্যেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কয়েক মাসের মধ্যেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে নন্দীগ্রামে ১১ বছরের পুরনো ঘটনায় নতুন করে সিআইডির মামলা শুরু করা যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।