জামিন পেয়েছেন দিল্লির সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী তথা জামিয়া মিলিয়ার পড়ুয়া সাফুরা জারগর। নাগরিকত্ব আইন ইস্যুতে কিছুদিন আগেও উত্তাল হয়েছিল ভারত। প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল দেশের একাংশ। পাল্টা আইনের পক্ষে জোরাল সওয়াল করছিলেন ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু আচমকাই কোভিড অতিমারি সমস্ত হিসেব উল্টে দিয়েছে। সারা দেশ যখন করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে তখন ভারতের বাড়তি মাথাব্যথার কারণ চিন-নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশ। চিন যেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় হিংসায় উদ্যত, তখন নেপাল ভারতের অংশ নিজের ম্যাপে দেখাতে ব্যস্ত।
এই পরিস্থিতিতে ভারত বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট করতে পুরনো আইনকানুনে বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল নেপাল।
ঐতিহাসিকভাবেই নেপালের সঙ্গে ভারতের মধুর সম্পর্ক। ভারত-নেপাল পারস্পরিক সম্পর্কের সবচেয়ে বড় বুনিয়াদ দুই দেশের মানুষের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন। নেপালের দক্ষিণাংশের সঙ্গে বিহারের মূলত উত্তর-পশ্চিম অংশের বিশেষ পার্থক্য নেই। নেপালের ছেলের সঙ্গে ভারতের মেয়ের বিয়ে কিংবা উল্টোটাই সেখানে দস্তুর। ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বরাবরই একটা পারিবারিক আবহ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি নেপাল চিনের কাছাকাছি আসার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন ভারত বিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। ম্যাপ বিতর্কের পর এবার সেখানকার পার্লামেন্টে প্রস্তাবিত হল নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী।
নেপালের ছেলের সঙ্গে ভারতের মেয়ের বিয়ে হলে সঙ্গে সঙ্গে নেপালের নাগরিকত্ব পেতেন মেয়েটি। কিন্তু সংশোধনী অনুযায়ী, এখন থেকে মেয়েকে অপেক্ষা করতে হবে ৭ বছর। তারপর তাঁকে নাগরিকত্ব দেওয়া যায় কিনা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে নেপাল সরকার।
অসম এনআরসির সময় দেখা গিয়েছিল, এই নথিপত্র নির্ভর নাগরিকত্ব প্রমাণ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন মহিলারা। বিশেষত বাইরে থেকে (অসমের ক্ষেত্রে ভিন রাজ্য থেকে) বিয়ে করে যে মেয়েরা যান।
এবার কার্যত একই ধরনের সমস্যার মুখে কি পড়তে চলেছেন নেপালে বিয়ে করতে যাওয়া ভারতের মেয়েরা?
দুই দেশে দুই প্রেক্ষিতে করা দুই সংশোধনী, কিন্তু সমস্যায় সেই নারী। রবিবার নেপালের পার্লামেন্টে প্রস্তাবিত হয়েছে নাগরিকত্ব আইনের একটি সংশোধনী। তাতে ৭ বছরের শর্তের পাশাপাশি বলা হয়েছে, এই সময় ৭ টি বিশেষ অধিকার ভোগ করতে পারবেন বিবাহিত মেয়েটি। তার মধ্যে আছে নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে না পারলেও তাঁদের কোনও ব্যবসা করতে আটকাবে না কিংবা সম্পত্তি কেনাবেচা করতে কোনও সমস্যা হবে না।
নেপালের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। নেপালি কংগ্রেসের বক্তব্য, এর ফলে ভারতের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে চলে আসা রোটি-বেটির সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মাধেশিরা হলেন দক্ষিণ নেপালের তরাই এলাকার বাসিন্দা। ঘটনাচক্রে সেই এলাকাতেই পড়ে ভারতের বিহার রাজ্যের উত্তরাংশ। দুই দেশের মাধেশিদের মধ্যে বিবাহ বন্ধনের মধ্যে দিয়ে কালে কালে সম্পর্ক আরও পোক্ত হয়েছে। লোকমুখে যাকে বলা হয় রোটি–বেটির সম্পর্ক। এবার সরাসরি আইন করে সেই সম্পর্কে নাক গলাতে শুরু করেছে নেপাল। যদিও সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, আইন সংশোধনের সঙ্গে ভারতের কোনও সম্পর্ক নেই। নেহাতই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
কিন্তু প্রশ্ন হল, নেপাল তাহলে এই সংশোধনী আনতে চাইছে কেন? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনের প্ররোচনায় নেপাল বিভিন্নভাবে ভারতকে উত্যক্ত করতে চাইছে। যার প্রথম পদক্ষেপ ম্যাপ বিতর্ক। এবার ভারত-নেপালের মানুষের পারস্পরিক বৈবাহিক বন্ধনের মতো ব্যাপারে কঠোরতার বার্তা দিয়ে নেপাল আসলে সেই উত্তেজনার পারদকেই আরও খানিকটা উসকে দিতে চাইল বলেই মনে করছেন তাঁরা। যার ফলে অসমের পর সম্ভবত নেপালেও সমস্যায় পড়তে চলেছেন সেই মহিলারাই।
Comments are closed.