ওড়িশার নিয়মগিরিতে বেদান্ত বিরোধী আন্দোলনকারীর মৃত্যু পুলিশ হেফাজতে, ক্ষোভে ফুঁসছে আদিবাসী সমাজ

ওড়িশার নিয়মগিরি পাহাড় এলাকায় কর্পোরেট জায়ান্ট বেদান্তর তেল শোধনাগার বিরোধী আন্দোলন চরমে। সম্প্রতি জেল হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে বেদান্ত বিরোধী আন্দোলনের এক সদস্যের। অভিযোগ, বেদান্তকে সুবিধা করে দিতে কোনও চেষ্টাই বাদ রাখছে না ওড়িশা সরকার। তাই আদিবাসীদের আন্দোলন দমন করতে উঠেপড়ে লেগেছেন নবীন পট্টনায়করা।

এই প্রকল্পের শুরু থেকেই এর বিরোধিতায় সরব আদিবাসীরা। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল, পরিবেশ সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কিন্তু প্রকল্প আটকানো যায়নি। যদিও বেদান্তর পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, এলাকার সামগ্রিক মানোন্নয়নে তারা কাজ করবে। বছর দশেক আগে অনিল আগরওয়ালের বেদান্তর পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, নিয়মগিরি প্রোজেক্টের মাধ্যমে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান, শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা এবং উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার মাধ্যমে আদিবাসীদের জীবনের মানোন্নয়ন করা হবে। কিন্তু অভিযোগ, কয়েকজন অস্থায়ী কর্মী নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করেনি বেদান্ত। উদাসিন ওড়িশা সরকারও।
২০১৮ র ১৮ ই মার্চ, স্থায়ী কাজ, এলাকার বেকারদের চাকরি এবং শিশুদের শিক্ষার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শোধনাগার সংলগ্ন রেঙ্গাপল্লি, ছত্রপুর, বান্ধাগুডা গ্রামের বাসিন্দারা। অভিযোগ, পাল্টা আন্দোলনকারীদের ওপর বেদান্তর নিরাপত্তারক্ষী ও ওড়িশা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স লাঠিচার্জ করে। এরপর চরম আকার নেয় আন্দোলন। লাঠির ঘায়ে মৃত্যু হয় বেদান্ত কর্মী বছর ৪২ এর দানি বত্রার। মৃত্যু হয় বেদান্তর নিরাপত্তারক্ষী সুজিত মিঞ্জেরও। এই খুনের তদন্তে নেমে ২৯ জন আন্দোলকারীকে গ্রেফতার করে ওড়িশা পুলিশ। যার মধ্যে ছিলেন বেদান্তর অস্থায়ী কর্মী পট্টনায়েক হরিজন। গত ২ রা মে থেকে ওড়িশার ভবানীপাটনা জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। কালাহান্ডির রেঙ্গাপল্লির বাসিন্দা পট্টনায়েকের সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, জেল হেফাজতে থাকাকালীন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন পট্টনায়েক। কিন্তু গুরুত্ব দেয়নি পুলিশ। অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে যখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তাঁর পরিবারকে কোনও খবর দেয়নি পুলিশ। জেল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে সম্বলপুরের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল পট্টনায়েককে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুলিশি হেফাজতে যে স্বামী অসুস্থ, সেকথা জানতেই পারেননি পট্টনায়েক হরিজনের স্ত্রী। স্বামীর অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর খবরে আকাশ ভেঙে পড়েছে পট্টনায়েকের স্ত্রীর মাথায়। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর খবরে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পট্টনায়েকের অনুপস্থিতে ৫ মেয়েকে কীভাবে খাওয়ার যোগাবেন সদ্য স্বামী হারানো স্ত্রী, তা বুঝতে পারছেন না আন্দোলনকারীরাও। তাঁদের প্রশ্ন, সরকার কার? সাধারণ মানুষের নাকি বেদান্তের মত কর্পোরেটের?

অভিযোগের এখানেই শেষ নয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বেদান্তর নিরাপত্তারক্ষী সুজিত মিঞ্জের মৃত্যুর তদন্তে নেমে যাকে-তাকে ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ। অথচ বেদান্তরই অস্থায়ী কর্মী দানি বত্রা, যাঁর পোড়া দেহ উদ্ধার হয় বেদান্ত প্ল্যান্টের কাছ থেকে, সেই তদন্ত এক পাও এগোয়নি! আন্দোলনকারীরা বলছেন, এভাবেই পুলিশকে দিয়ে আদিবাসীদের ভয় পাইয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে সরকার। যাতে বেদান্ত ইচ্ছেমতো ব্যবসা চালাতে পারে।

আর পট্টনায়েকের মৃত্যু নিয়ে বেদান্তর এক শীর্ষ আধিকারিকের বক্তব্য, এই মৃত্যুর দায় তাঁদের নয়। কিডনির সমস্যাজনিত অসুখে মৃত্যু হয়েছে পট্টনায়েকের। এর সঙ্গে আন্দোলনের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি বেদান্তর।

Comments are closed.