আগামী ২২ জানুয়ারি ফাঁসি হচ্ছে না নির্ভয়া-কাণ্ডের দোষীদের। দোষীদের মধ্যে একজন, মুকেশের আর্জির প্রেক্ষিতে ওই কথা জানাল দিল্লি হইকোর্ট। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট মুকেশের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করে দেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছিলেন মুকেশের আইনজীবী। এই প্রেক্ষিতে বুধবার দিল্লি হাইকোর্ট জানাল, রাষ্ট্রপতির কাছে এই আবেদনের কারণে আরও ১৪ দিন পিছিয়ে দেওয়া হল মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তারিখ।
এদিকে সূত্রের খবর, মোট ২৩ বার জেলের বিধিভঙ্গ করেছে নির্ভয়া কাণ্ডের দোষীরা। তিহার জেলে থাকাকালীন তাদের রোজগার করেছে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা।
ইংরেজি সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-র একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ওই চার আসামী তিহার জেলে গত সাত বছরে মোট ১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা রোজগার করেছে স্বেচ্ছাশ্রম করে। পাশাপাশি এই সময়ে ২৩ বার জেলের নিয়মবিধি ভেঙেছে বলেও অভিযোগ।
২০১২ সালে বছর তেইশের প্যারা মেডিকেল ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের দায়ে গ্রেফতার হয় অক্ষয় ঠাকুর সিংহ, মুকেশ, পবন গুপ্তা ও বিনয় শর্মা। জেলে থাকার সময় বিনয় মোট এগারো বার জেলের নিয়ম ভেঙেছে। একই কারণে অক্ষয়কে একবার শাস্তি দিয়েছে জেল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মুকেশ তিনবার এবং মুকেশ আটবার এই নিয়ম ভেঙেছে বলে সূত্রের খবর।
গত সাত বছরে মুকেশ জেলবন্দি হিসেবে কোনও কাজ করতে রাজি হয়নি। অক্ষয় রোজগার করেছে ৬৯ হাজার টাকা। স্বেচ্ছাশ্রম করে পবন পায় ২৯ হাজার টাকা এবং বিনয় পায় ৩৯ হাজার টাকা।
পাশাপাশি, ২০১৬ সালে চার জেলবন্দির পড়াশোনার বন্দোবস্ত করেছিল তিহার জেল কর্তৃপক্ষ। মুকেশ, পবন ও অক্ষয় দশম শ্রেণিতে ভর্তি হলেও কোনও পরীক্ষাতেই পাশ করতে পারেনি। ২০১৫ সালে বিনয় স্নাতক স্তরের কোর্সে ভর্তি হলেও তা শেষ করতে পারেনি। ২২ শে জানুয়ারি তাদের ফাঁসির আগে পরিবারের সঙ্গে দু’বার করে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বুধবার দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশের পর সেই তারিখ আরও পিছল।
গত রবিবার থেকে তিহার জেলে চার দোশীর ফাঁসি বলবৎ করার ব্যাপারে তৎপরতা শুরু হয়েছে। দোষীদের এখন রাখা হয়েছে জেলের ভিন্ন কুঠুরিতে, সিসিটিভি-র তত্ত্বাবধানে। ভারতে এই প্রথম চারজনকে একসঙ্গে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, পবন জল্লাদের ঘাড়েই এই ফাঁসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতি ফাঁসির জন্য ১৫ হাজার টাকা করে পাবেন ফাঁসুড়ে পবন জল্লাদ।
এদিকে মঙ্গলবার মুকেশের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্টে তাদের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে মৃত্যদণ্ড রদের আবেদন করছেন তাঁরা। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে আরও ১৪ দিন পিছল চার দোষীর মৃত্যুদণ্ডের তারিখ।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাজধানীর বুকে গণধর্ষণের শিকার হন তেইশের বছরের প্যারা-মেডিকেল ছাত্রী। ধর্ষণ ও অত্যাচারের পর চলন্ত বাস থেকে তাঁকে ছুঁড়ে ফেলে ছয় দুষ্কৃতী। ২৯ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় নির্ভয়ার।
Comments are closed.